জানালা খুলে বরফের রাজ্যে!

গত এপ্রিল মাসের শেষে হঠাৎ করেই একদিন দক্ষিণ জার্মানির কিছু এলাকায় খুব বেশি তুষারপাত হয়। স্থানীয় পত্রিকায়ও খবরটি ছাপা হয়।

নাঈম হাবিব, জার্মানির উল্ম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2017, 07:23 AM
Updated : 29 July 2017, 07:24 AM
অসময়ে তুষারপাত হওয়ায় স্থানীয় অনেকেরই স্ট্রবেরি, সবজি ক্ষেত ও ফুল বাগানের ক্ষতি হয়। যা আবার নতুন করে চাষ করতে হয়েছে। এপ্রিল তো তুষারপাতের, বরফ পড়ার মাস না। এ তো বসন্তকাল, ফুল ফোটার মাস।

নিজে খাওয়ার জন্যে আমার বাগানে লাগানো স্ট্রবেরি, শসা, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া, টমেটো ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার নতুন করে চারা লাগালেও ফসল খুব একটা ভালো হয়নি। জার্মানির আবহাওয়া বোঝা বড় কঠিন। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি, তো কখনও আবার অসময়ে তুষারপাত।

যাই হোক, ব্যাপারটা একটু দুঃখজনক হলেও জার্মানির তুষারপাতকে ঘিরে রয়েছে আমার আনন্দের অনেক স্মৃতি। প্রথম তুষারপাত দেখার অভিজ্ঞতাও দারুণ।

আমার প্রথম তুষারপাত দেখা জার্মানিতেই। কোন এক সকালবেলা জানালা খুলে দেখি স্বপ্নের এক রাজ্যে আছি! তুষারপাতে ঢাকা প্রকৃতির এক অপূর্ব রূপ! প্রথমবার দেখার সেই অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। প্রথম দেখা তুষারপাত ও তুষারপাতের সাথে খেলা করার আনন্দের স্মৃতি এখনও মনে হলে আনন্দই পাই।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে জার্মানিতে উড়াল দেই। ডিসেম্বর মানেই জার্মানিতে শীতকাল, বেশ ঠাণ্ডা।

আমাদের বাংলাদেশে ছয় ঋতু হলেও জার্মানিতে হলো চারটি ঋতু। জার্মান ভাষায় এই চার ঋতুর নাম হলো- ফ্রুহলিং, ঝমার, হার্বস্ট ও ভিনটার। বাংলায়- বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীতকাল। বর্ষা ও হেমন্তকাল কী? তা জার্মানরা জানে না। এই দুই ঋতু জার্মানিতে নাই। আমাদের দেশে প্রতি দুই মাসে আসে এক ঋতু, আর জার্মানিতে প্রতি তিন মাসে এক ঋতু।

যেহেতু দুবাই থেকে জার্মানিতে গিয়েছি, তাই দুবাইয়ের স্মৃতির কথা একটু বলতে চাই। দুবাইতে কয় ঋতু? দীর্ঘদিন দুবাইতে বসবাস করলেও তা আমার জানা হয়নি। বছরের দশ মাসই দেখেছি, গরম। গরমের দিনে ওখানে এসি চালিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাতাম। আর জার্মানিতে তার বিপরীত, শীতের দিনে এখানে হিটার চালিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়।

জার্মানিতে মার্চ, এপ্রিল, মে- এই তিন মাস হলো বসন্তকাল। জুন থেকে আগস্ট হলো গ্রীষ্ম। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর শরৎ। আর ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি- এই তিন মাস হলো শীতকাল। ফুল ফুটলে বসন্তের শুরু হয় জার্মানিতে।শরতের শেষে গাছের সব পাতা ঝরে যাওয়াই শীতের আগমনের জানান দেয়। সে সময় জার্মানি আরেক রূপ ধারণ করে।

জার্মানিতে শীত মানে হলো শার্টের ওপরে শার্ট, বড় বড় জ্যাকেট, গলায় মাফলার, মাথায় শীতের টুপি, হাতে-পায়ে মোজা, প্যান্টের নিচে লম্বা প্যান্ট পরা। শীতকালে জার্মানিতে মাইনাস দশ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখার অভিজ্ঞতা আছে আমার। দেখেছি তুষারপাত ও বরফবৃষ্টিও।

অনেক সময় হালকা বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা- এই দুই মিলে রাস্তাঘাট পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন শহর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ছোট ছোট পাথর আর বালি রাস্তায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে।

হাটু সমান তুষারপাত হয় জার্মানিতে। সবাই যার যার বাসার সামনের রাস্তার বরফ সরিয়ে চলার রাস্তা বের করে। আর যদি কেউ এই সহজ কাজটা না করে, তাহলে প্রতিবেশীদের বিরক্তি সহ্য করতে হতে পারে।

জার্মানির শীত আমাকে খুব একটা বাঁকা করতে পারেনি, আর তা হয়তোবা আগে মরুর দেশে বসবাসের কারণেই। প্রচুর গরম আবহাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকায় শীত আমার প্রিয় হয়ে গেছে। গরমের চাইতে শীত আমার বেশি পছন্দ। আমার সহজ যুক্তিতে বললে বিষয়টা এমন, শীতের সময় তো প্রয়োজন মতো কাপড় পরে নেওয়া যায়। কিন্তু গরমে তো আর পাখা মাথায় করে ঘুরে বেড়ানো যায় না।
এখন জার্মানিতে গরমকাল চলছে। কিন্তু দক্ষিণ জার্মানিতে সূর্য মামার দেখা নাই। গত কয়েকদিন ধরে হালকা বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নতুন দেশ, নতুন আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, চলেছে জীবন। আর একটু একটু করে মনের ঝুলিতে জমা হচ্ছে স্মৃতি। সেই স্মৃতি এবং আরও নতুন নতুন অভিজ্ঞতার কথা মাঝে মধ্যে আপনাদের সাথে ভাগ করতে চাই। আশা করি সাথেই থাকবেন।

চলবে...

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!