প্রবাসীর ভ্রমণ: প্রাচীন শহর প্রাগে

ছবি দেখে ভাতিজা দুলাল দুবাই থেকে প্রশ্ন করেছিলো, “দূরবীনে কী দেখো চাচা?” জবাবে বলেছিলাম, “দেখি না ভাতিজা, দেখার ভান করি। দেখতে হলে পয়সা লাগে।”

নাঈম হাবিব, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2017, 05:52 AM
Updated : 4 Dec 2017, 03:58 PM

নদীর পাড়ে দূরবীন। খুচরা পয়সা ঢোকালে পাহাড়ের উপর প্রাচীন দূর্গ দেখা যায় সম্ভবত। যেহেতু স্ব-শরীরে দূর্গ দেখার পরিকল্পনা, সেহেতু এ পয়সা অন্য খাতে খরচ করা যাক। ইউরোর মূল্য আছে এখানে। এক ইউরো সমান পঁচিশ চেক ক্রোনা। এক ইউরো দিয়ে দেড় কেজি আলু কিংবা দুই বোতল বিয়ার কেনা যায়।

মাত্র শীত পড়েছে। বেশ ঠাণ্ডা। কিনলাম এক কাপ কফি। গরম কফি। কফির নাম ‘টেক অ্যাওয়ে’। কফি হাতে চলে এলাম ব্রিজের উপরে। ব্রিজটি বেশি লম্বা না। হেঁটে পাঁচ মিনিটে এপার-ওপার হওয়া যায়। তবে ব্রিজটির ইতিহাস খুব লম্বা।

ব্রিজের নাম ‘চার্লস ব্রিজ। ইতিহাস গুগল করে জেনে নিন। আমি দাঁড়িয়ে আছি ব্রিজের ওপর। নিচে ভলটাভা নদী। নদীর এ কূল আর ও কূল- দুই কূলেই প্রাগ শহর। প্রাচীন শহর। নদী বয়ে গেছে শহরের মধ্যে দিয়ে।

ব্রিজ থেকে পাহাড়ের উপর প্রাচীন দূর্গ দেখা যায়। এই ব্রিজে গাড়ি নাই। ব্রিজের উপর কয়েকশ’ মানুষ। সব সময়ই ভিড় থাকে। সবাই সেলফি তোলে। পেছনে থাকা প্রাচীন দূর্গের সাথে নয়, সেলফি প্রাচীন এই ব্রিজের সাথে।

তীব্র শীত। সাথে তাজা হাওয়া। মাথায় শীতের টুপি। হাতে-পায়ে মোজা। ব্রিজে দাঁড়িয়ে চারদিকের দৃশ্য দেখতে বেশ ভালোই লাগে। কফিতে চুমুক দিয়েই অনুভব করলাম, আহ্, কি শান্তি!

প্রাচীন দূর্গ। প্রাচীন ব্রিজ। পুরনো টাউন-স্কয়ারের কাহিনী, এখানকার খাবার ও পানীয় খুব কাছে টানে পর্যটকদের। সত্তর-আশি লক্ষ পর্যটক প্রতি বছর আসেন এ শহরে। শহরে আছে মধ্যযুগীয় জ্যোতির্বিদ্যা ঘড়ি। সবাই নিজের ঘড়ির সাথে সময় মিলিয়ে নেন এখানে। প্রতি ঘণ্টায় প্রদর্শন হয়। প্রদর্শন দেখার জন্যে তখন হাজার লোক ভিড় জমায় ঘড়ির সামনে।

চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী শহর প্রাগ। এই শহরে যে একবার আসে, সে বার বার ফিরে আসে। জার্মানি থেকে সাইকেল চেপে কিংবা দৌড়িয়ে অনেকেই যান প্রাগ শহরে। অতি তাড়া থাকলে বাসে, ট্রেনে কিংবা বিমানে করেও যাওয়া যায়।

শুধু জার্মানিই নয়, দুনিয়ার অনেকেরই প্রিয় শহর প্রাগ। ভালো লাগে প্রাগ। ভালো লাগে তার প্রাচীন সৌন্দর্য। তাইতো ফিরে আসি এ শহরে। কফিতে শেষ চুমুক দিতে গিয়ে দেখি ঠাণ্ডায় কফি বরফ হয়ে গেছে।

ব্রিজ পার হয়ে আরও কিছুক্ষণ হেঁটে চলে আসলাম প্রাগের প্রাচীন দূর্গ দেখতে। বুঝলাম, সবকিছু কাছে থেকে দেখলে সুন্দর দেখায় না। দূর্গ কাছে থেকে দেখতে যতোটা না সুন্দর, দূর থেকে দেখতে তার চাইতেও বেশি সুন্দর লাগে।

দুর্গের বাইরে সুসজ্জিত কাপড়ে নিরাপত্তা বাহিনী প্রহরা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম, প্রহরীর হাত-পা নড়ে না। একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এরা। দেখলে মানুষ না, ভাস্কর্য মনে হয়। কিছু ছবি উঠালাম। দূর্গের ভেতরে-বাইরে ঘুরে শেষে ফিরতি পথে দেখলাম, নিরাপত্তা প্রহরী সেই একই জায়গায় একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।

ঘুরে ঘুরে প্রাচীন এই শহরে, প্রাচীন দালানগুলোর ভিড়ে একটি আধুনিক দালান দেখতে পেলাম। দিলাম এক ঘুষি। ঘুষি খেয়ে পুরো বিল্ডিং হয়ে গেলো বাঁকা। বিল্ডিংয়ের নাম ‘ড্যান্সিং হাউজ’। প্রাগ গেলে এই বিল্ডিংটি দেখে আসতে ভুলবেন না।

তারপর গেলাম জাদুঘরে। সেখানে একটি শিল্প দেখে দুই লাইনের একটি ছড়াও লিখে ফেললাম।

ছড়াটি হলো- 

মাথা নাই, টুপি আছে।

বৃষ্টি নেই, ছাতা কাঁধে।

সর্বশেষ জানতে ইচ্ছে হলো এখানকার স্থানীয়রা কী খায়? হাঁস ও ডাম্পলিংস প্রাগের একটি অতি জনপ্রিয় খাবার। ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয় খাবার না খেলে কী আর ভ্রমণ পরিপূর্ণ হয়!

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইলmd.naim@aol.com

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!