জার্মানিতে ছুটির দিনে কেউ ঘরে বসে থাকে না। কে কোথায় গিয়ে ছুটি কাটাবে, তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষ যায় পৃথিবীর নানা প্রান্তে।
Published : 25 Mar 2018, 12:07 PM
শীতকালীন ছুটিতে ঠিক করলাম, বাংলাদেশ হয়ে যাবো দ্বীপের দেশে। যেদেশে আগ্নেয়গিরি আছে। সঙ্গে আমার প্রিয়া।প্রিয়া বাংলা পড়তে পারে না। ‘কেমন আছো?’, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’- এই দুইটা কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পারে না সে।
‘আমি ভালো আছি’-এটা বলতে গিয়ে অনেক সময় ‘আমি ভালোবাসি’ বলে বসে সে। তাই বলে দিয়েছি, কেউ যদি তোমায় বাংলায় ‘কেমন আছো?’ জিজ্ঞেস করে, এর জবাবটা ইংরেজিতে সেরে নিও। মান-সম্মানের একটা ব্যাপার আছে না, কী বলেন?
যাহোক, মূল গল্পে আসতে চাই। গত অক্টোবরে বালির আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাতের খবরে বড় ধরনের একটা চিন্তায় ছিলাম, আগ্নেয়গিরি যেন বিস্ফোরণ না হয়। কারণ, শীতকালীন ছুটিতে আমাদের ইন্দোনেশিয়া সফরে বিমান ও হোটেল কনফার্ম বুকিং করা ছিলো। বুক করা বিমান ইন্দোনেশিয়ার বালি বিমানবন্দরে নামার কথা ছিলো।
যদি আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে, তাহলে নিশ্চিত বালি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখন হয়তো ইন্দোনেশিয়ায় এ যাত্রাও আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে চাপা পড়বে। হয়তো আর যাওয়া হবে না দ্বীপের দেশ ইন্দোনেশিয়া। বুক করা হোটেল আর ফ্লাইটেরই বা কি হবে, এ চিন্তাই তখন পেরেশান হচ্ছিলাম আর খোঁজখবর রাখছিলাম।
বালি দ্বীপে কিছুদিন ঘুরে শেষে চলে এলাম লম্বক দ্বীপে। সেখানে দেখি বুড়ো বয়সী এক লোক কলা গাছ টুকরো করে গাভীদের খাওয়াচ্ছেন। গাভীগুলো দেখতে বেশ মোটাতাজা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “চাচা, সবসময় গাভীকে কি কলা গাছই খাওয়ান?”
জবাবে বুড়ো চাচা জানতে চাইলেন, আমি কোন দেশের? আমি বাংলাদেশ বললে চাচা আবার জানতে চাইলেন, এটা কী ভারতে? বললাম, “ভারতের খুব কাছাকাছি আমার দেশ।” বুড়ো চাচা জানালেন, অতি খরায় এ বছর ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সাথে গবাদিপশুর খাদ্যও গেছে। মাঠে নাই ঘাস, তাই গাভী খাচ্ছে কলা গাছ।
কলা গাছের ব্যাপারটা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেশে জানিয়ে দিলাম। দেশে আমাদের দুইটা গাভী আছে। খাদ্যের অভাবে দুধ দেয় কম। দেশে গত ফসল তলিয়েছে। সাথে গাভী দুইটার খাদ্যও গেছে। মানুষ তো ত্রাণ পায়। যারা পায় না, তারা ক্ষুধার জ্বালায় শহরের দিকে দৌড়ায়। গরু-ছাগল যাবে কোথায়? ওরা তো ত্রাণও পায় না।
আমি তো একদম সেজেগুজে ইন্দোনেশিয়ান ঐতিহ্যবাহী বাটিক শার্ট আর টুপি পরে গিয়েছিলাম। আমি বাংলাদেশের শুনতেই ছেলেগুলো আমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। জড়িয়ে ধরলো। কয়েকজন সেলফিও নিল আমার সাথে। আমার এমন মনে হলো যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা ইন্দোনেশিয়দের কাছে হিরো বনে গেছি।
ছেলেগুলো বাংলাদেশের খুব প্রশংসা করলো। বললো, “তোমরা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবতা দেখিয়েছো, তা সারা বিশ্ব দেখেছে। সারা দুনিয়া তোমাদের প্রশংসা করেছে। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে ইন্দোনেশিয়াতেও আমরা অনেক আন্দোলন-প্রতিবাদ করেছি। ইন্দোনেশিয়া থেকে সরকারিভাবে জরুরি সাহায্যও পাঠানো হয়েছে।”
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |