ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ‘আপা কাবার?’ মানে ‘কেমন আছেন?’ বা ‘কি খবর?’ আমগাছ, কলা গাছ, নারকেল আর ধান গাছ- সব মিলিয়ে ইন্দোনেশিয়া সফরে ছিলো নিজ দেশের অনুভূতি। যেন আপন দেশে ঘুরছি।
Published : 03 Apr 2018, 10:51 AM
ইন্দোনেশীয়রা আমাদের মতোই তিনবেলা ভাত খায়। উবুদ টাউনে ইন্দোনেশিয়ান খাবার নাসি কমপুর ও সাতেয় খুবই মজা লেগেছিলো। নাসি মানে ভাত। আর তার সাথে আরও বিভিন্ন পদ ছিলো। এই খাবারটি অনেকটা ভারতীয় খাবার থালির মতো।
জাভা দ্বীপে এস.এস.সাম্বাল নামে জনপ্রিয় এক রেস্তোরাঁয় খাবার ছিল অসাধারণ। সাম্বাল মানে ভর্তা। এ রেস্তোরাঁয় অনেক ধরনের ভর্তা পরিবেশন করা হয়। এখানকার খাবারের মান ও পরিবেশন গল্প করার মতোই।
ইন্দোনেশিয়ান খাবারের মধ্যে আরও খেয়েছি নাসি পুইয়ুং, নাসি লম্বুক, নাসি লেমাক, নাসি গুরেং ও সাতেয়। সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার খুব পছন্দ ইন্দোনেশিয়ান খাবার সাতেয়। ইন্দোনেশিয়ায় ঘুরতে এসে এ খাবার খেয়ে তিনি নাকি খুব প্রশংসা করেছিলেন, জানালেন খাবার দোকানি।
মেয়েরা জানালো, ইন্দোনেশিয়ায় শুক্রবার বা অনেকক্ষেত্রে শনিবারেও স্কুল হয়ে থাকে। আর রোববার হলো তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন।
উবুদ টাউনের ছোট ছোট ছেলেগুলো যেন একেকটা কিউটের ডিব্বা। কি সুন্দর করে আমাদের স্বাগতম জানালো। এমন কিউটদের সাথে সেলফি না নিয়ে কি পারা যায়?
ইন্দোনেশিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন মসজিদ ও মন্দির। সাগর, মহাসাগর, ঝরনা, সৈকত, আগ্নেয়গিরি ও হাজারো দ্বীপের দেশ ইন্দোনেশিয়া। গুগল তথ্য অনুযায়ী ১৭ হাজারেরও বেশি দ্বীপ রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। রয়েছে ১২৭টিরও বেশি জীবিত আগ্নেয়গিরি।
দুনিয়ার সার্ফিং কিংবা স্কুবা ডাইভিং প্রেমীদের প্রথম পছন্দ ইন্দোনেশিয়া। সার্ফিং-এর জন্যে বালি দ্বীপের কোটা সৈকত বিখ্যাত। আর স্কুবা ডাইভিং ও স্নোরকেলিং-এর জন্য গিলি দ্বীপ। কাছাকাছি তিনটা দ্বীপ। নাম গিলি-টি, গিলি এয়ার ও গিলি মেনু। গিলি-টি বেশি জনপ্রিয়।
গিলি দ্বীপে স্নোরকেলিং-এর অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে, বিরল প্রজাতির বিশাল আকারের কচ্ছপ। সারা দুনিয়ায় হাতে গোণা যে কিছু জায়গায় এত বিশাল আকারের কচ্ছপের দেখা মেলে, তার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার গিলি দ্বীপ একটি। কচ্ছপ দেখার আশায় সারাদিন ধরে কতো মানুষে ডুবসাঁতার কাটে এখানে।
স্নোরকেলিং মাস্ক মুখে লাগিয়ে ডুবসাঁতার, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে সেটির সাথে থাকা পাইপ দিয়ে। এ কাজ তো এত কঠিন হওয়ার কথা নয়? স্নোরকেলিং মাস্ক পড়ে নামলাম সাগরে। জীবনের প্রথম ডুবসাঁতার। মিনিটের মধ্যেই নাখ-মুখ দিয়ে পানি ঢুকে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সে অবস্থার বর্ণনা করা মুশকিল।
দোকানির কাছে ফিরে গেলাম আমার মাস্ক বদলি করে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু দোকানি মাস্কে সমস্যা আছে এটা মানতে কোনমতেই রাজি নয়। দোকানি বললো, সমস্যা আমার আছে, মাস্কে নয়। আমি নাকি স্নোরকেলিং করতে জানি না। চেষ্টা করলে শিখে যাব জানালেন। প্রথম প্রথম নাকি নাক-মুখ দিয়ে একটু পানি ঢুকবেই।
পরিষ্কার নীল জলে নানান রঙের মাছ দলবেঁধে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। আর আমি তাদের পিছু যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরপর ক্লান্ত হয়ে কচ্ছপের মতো ভেসে উঠছি আমি। একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার ডুব দিই। দেখি মাছগুলো ছুটছেই তাদের আপন গতিতে, আপন জগতে। তাদের ক্লান্তি নেই। তবে কচ্ছপের দেখা এখনও পাইনি।
এক পর্যটক বললেন, তিনি কচ্ছপ দেখার আশায় চার ঘণ্টা ধরে ডুবসাঁতার কাটছেন এখানে। কচ্ছপেরা থাকে সাগরের তলদেশে মাঝেমধ্যে তারা উপরে আসে খাবারের খোঁজে। সাগরে ডুবসাঁতার কাটতে কাটতেই কতোজনের সাথে পরিচয় হয় আমার। পানির নিচে ইশারা ইঙ্গিতে আমাদের কথাবার্তা হয়।
কিন্তু পানির নিচের ছবি আমার চাই-ই চাই। জীবনে বারবার এসব যায়গায় যাওয়ার তো আর সুযোগ আসবেন না। তীরে ফিরে নিজের মোবাইল ফোনের জন্য একটি প্লাস্টিকের ওয়াটার প্রুফ থলে কিনি। ইচ্ছে মোবাইল ফোন সেট ভেতরে ভরে ছবি উঠানোর। কিন্তু ঘটলো বিপত্তি। পানির নিচে ফোনের স্ক্রিনটাচ কাজ করছে না।
তারপর, আশা-নিরাশার মাঝে বুদ্ধি করে পানির উপরে থেকে মোবাইলের অটো ক্যামেরা সেট করে নিয়ে গিয়ে অনেক কষ্ট করে কিছু ছবি উঠাতে সক্ষম হই। একটা নেশা হয়ে গিয়েছিলো। এক সাপ্তাহ সেখানে অবস্থানকালে এমন কোনোদিন নাই যে সাগরে চার-পাঁচ ঘণ্টা ডুবসাঁতার কাটিনি।
জীবনে আবার যদি কোনোদিন সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়, তাহলে পানির নিচে ছবি তোলা যায়, এমন ক্যামেরা সঙ্গে নিয়েই যাব।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |