বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে শেষ রাতে বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে তাদের পরিবার।
ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস দুজনেই বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ‘সাদা পোশাকের পুলিশ’ এসে তাদের আটক করে নিয়ে গেছে।
তবে বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতাকে আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ভাষ্য এখনও আসেনি।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি এটা না জেনে বলতে পারব না।”
একই কথা বলেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার। অন্য পুলিশ কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।
অথচ রাতে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে ‘সমঝোতার’ কথাই বলেছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুণ অর রশীদ।
ওই সমাবেশ ঘিরেই গত কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতাও জারি করেছে।
বিএনপি নয়া পল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।
এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তারপরও বলে আসছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তাদের সমাবেশ ‘হবে’। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘সমঝোতা বৈঠকের’ পর অবস্থান বদলের ঘোষণা আসে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়া পল্টনে পুলিশ সমাবেশ করতে দেবে না, আর বিএনপিও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে না। নয়া পল্টন বাদ দিলে তারা এখন কমলাপুরের ফুটবল স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে রাজি আছেন।
আর পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মিরপুরের বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুণ।
বুলু ও হারুণ দুজনই জানান, তারা দুটি স্থানই পরিদর্শনে যাবেন। তারপর শুক্রবার এর যে কোনো একটি স্থান চূড়ান্ত করা হবে।
রাতের ওই বৈঠকে সমঝোতার ইংগিত আসার পর ভোর হওয়ার আগেই দুই জ্যেষ্ঠ নেতার ‘আটক হওয়ার’ খবর দেন বিএনপি নেতা ও পরিবারের সদস্যরা।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ভোরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উত্তরার বাসা এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে শাজাহানপুরের বাসা থেকে রাত ৩টার দিকে ডিবি পুলিশ নিয়েছে গেছে।”
মির্জা ফখরুলের জামাতা ফাহাম আব্দুস সালাম এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজেও একই খবর দেওয়া হয় সে সময়।
সকালে মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনাকে সাদা পোশাকের পুলিশ এসে নিয়ে গেছে। বলেছেন যে, উপরের নির্দেশ আছে, যেতে হবে।”
তিনি জানান, রাত ১১টা থেকেই ‘পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন’ তাদের উত্তরার বাসার সামনে আনাগোনা করছিল।
“৪/৫টা গাড়ি এসেছে ১২টার পরে। রাস্তার লাইটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। উনি (মির্জা ফখরুল) এমনিতেই অসুস্থ। কিছু ওষুধ-পত্র নিয়ে ওদের সাথে বেরিয়ে গেছেন।”
আর মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, “রাত ৩টার পর উনাকে বাসা থেকে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের পুলিশ। কোনো কাগজপত্র নেই। শুধু বলেছে যে উনাকে যেতে হবে, উপরের নির্দেশ আছে।”
পুরনো খবর