সংঘাতের পর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নানা শঙ্কা ছড়াচ্ছে জনমনে।
Published : 08 Dec 2022, 08:15 PM
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে বুধবারের সংঘাতের পর বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ঢাকার সড়কে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাসও কম ছেড়ে যাচ্ছে।
বুধবার বিকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাসের সংখ্যা কম দেখা যায়। তখন বাস পেতে যাত্রীদের বেশ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল সন্ধ্যার পর মানুষের সংখ্যাও কমে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন যেসব স্থানে বাসের অপেক্ষায় মানুষের ভিড় দেখা যায়, সেসব স্থানে মানুষও কম দেখা গেছে।
এদিকে পরিবহন মালিকরা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের দিনও ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোয় বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়ানোর মধ্যে বুধবার সংঘাত বাঁধে নয়া পল্টনে। সেখানে দলীয় কার্যালয়ে থাকা বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়।
এই সংঘাতের পর শনিবারের সমাবেশ ঘিরে শঙ্কার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে যানবাহন চলাচল কম দেখা যায়।
বিমানবন্দর সড়কের বনানী, কাকলী, চেয়ারম্যানবাড়ি, মহাখালী ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস তেমন নেই। সন্ধ্যায় কয়েকটি বাস টার্মিনালের দিকে যেতে দেখা গেছে।
টাঙ্গাইলগামী বাসের অপেক্ষায় কাকলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকার গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। শুক্রবার ছুটি থাকায় প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পথ ধরেন তিনি।
অন্য সময় ১০ মিনিট পর পর টাঙ্গাইলের বাস পেয়ে যান। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘণ্টাখানেক সময় অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি তিনি।
শরীফ বলেন, “টাঙ্গাইল ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের অনেক বাস ওই পথে যায়, ফলে বাস পেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু সাড়ে ৫টা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো বাস নেই। যেতে পারব কি না, জানি না।”
গাজীপুর থেকে সায়েদাবাদগামী বলাকা পরিবহনের হেলপার মঈনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পথে যাত্রী কম বলে বাসও কম।
“লং রুটের গাড়ি বেশি আসতেছে না। আমাদের বাসেও যাত্রী কম। আর শনিবার বিএনপির জনসভা, তাই আমাদের পরিবহনের গাড়িও কিছু কম চলতেছে।”
সন্ধ্যায় চন্দ্রা থেকে সদরঘাট রুটের আজমেরী গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে উঠে কয়েকটি আসন ফাঁকা দেখা গেল। অথচ অফিস ছুটির পর রাজধানীর কোনো বাসই ফাঁকা থাকে না।
ওই বাসের কন্ডাক্টর মোতালেব হোসেন বলেন, “আইজ সকাল থাইকা গাড়িতে তেমন যাত্রী নাই। সন্ধ্যার সময় গাড়িতে পা ফেলানের জায়গা থাকে না, রডেও ঝুইলাও যাত্রীরা যায়। কিন্তু আইজকা এই সন্ধ্যাবেলায়ও গাড়ির সিট খালি।”
একই কথা জানালেন আজিমপুর থেকে আবদুল্লাহপুরগামী বিকাশ পরিবহনের একটি বাসের হেল্পার। তিনি বলেন, “আমাদের রুটের কিছু গাড়ি বন্ধ রাখা হইছে। কিন্তু এরপরেও গাড়ি ভরে না, সিট ফাঁকা যায়।”
ঢাকার পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আশফাক।
একটি পোশাক কারখানার এই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তাঘাটের কথা চিন্তা করে এ সপ্তাহে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছি।”
দূরপাল্লার বাস কম কেন- জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, “সড়কে তো গাড়ি আছে। কিন্তু প্যাসেঞ্জার নাই। এই কারণে গাড়ি কম। গতকাল যে গণ্ডগোল হয়েছিল এই আতঙ্কে আজ রাস্তায় মানুষ কম।”
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বিভিন্ন মহাসড়কে বাসে দিনভর পুলিশকে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, “আমাদের টার্মিনাল থেকে সব রুটেই গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। কোনো গাড়ি বন্ধ নাই।”
১০ ডিসেম্বর বাস ‘চলবে’
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেও ১০ ডিসেম্বর ঢাকা ও আশপাশের জেলাসহ সারাদেশে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিকরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিকালে ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে সমিতির কেন্দ্রেীয় কার্যালয়ে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আলোচনায় বসেন ঢাকার পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা।
সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহর সভাপতিত্বে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান টিবিসি রোড ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের মালিক-শ্রমিক নেতাসহ ঢাকার সব পরিবহন কোম্পানির প্রায় ৩০০ মালিক-শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ১০ ডিসেম্বর শনিবার ঢাকা, শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যান চলাচল যাতে কোনো প্রকার বাধার মুখে না পড়ে সেজন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি।
কমলাপুরে কড়াকড়ি
বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে বুধবার থেকেই কড়াকড়ি শুরু হয় ঢাকা তথা দেশের রেল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু কমলাপুরে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তল্লাশি। যাত্রীদের তল্লাশি করেন ডিবি ও রেলওয়ে থানার পুলিশেরা।
তবে শুধু সমাবেশই নয়, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করেই মূলত এই নজরদারি চলছে- এমনটাই জানিয়েছেন রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস বিশ্বাস।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়েই তল্লাশী কার্যক্রম চালু থাকবে। বিজয় দিবসকে সামনে রেখেই মূলত কোন প্রকার জঙ্গি হামলা থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবি ও রেলওয়ে পুলিশের কয়েকটি দল ঢাকার সব স্টেশনগুলোতে নজরদারি চালু রাখবে।”