পল্টনের ঘটনায় পুলিশের ৪ মামলায় যত অভিযোগ

দুই হাজারের বেশি বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে করা এসব মামলার সবকটিতেই অভিযোগ প্রায় একই রকম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2022, 05:15 PM
Updated : 8 Dec 2022, 05:15 PM

ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ যে চারটি মামলা করেছে; সেগুলোতে পুলিশের ওপর হামলা, বেআইনি সমাবেশ, যান চলাচলে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণের মত অভিযোগ আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পল্টন, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় দুই হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়।

এর মধ্যে পল্টন ও মতিঝিল থানার দুই মামলায় বিএনপির ২৩ নেতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ওই দুই মামলায় গ্রেপ্তার ৪৭০ নেতাকর্মীর মধ্যে ৪৪৫ জন এবং শাহজাহানপুর থানার মামলায় ছয়জনসহ মোট ৪৫১ জনকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে বিএনপিকর্মীরা বুধবার নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে সংঘর্ষে আহতদের একজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান এবং অনেকে আহত হন।

পরে বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকশ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তখন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।

পল্টন

এ থানায় দায়ের করা মামলায় ‘পুলিশের ওপর হামলা ও বেআইনি সমাবেশ’র অভিযোগ আনা হয়েছে, আসামি করা হয়েছে ৪৭০ জনকে। এর মধ্যে ১৪ জনকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ; পাশাপাশি বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, আবুদস সালাম, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ মোট ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এজাহারে অভিযোগ, ১০ ডিসেম্বরের দলীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বুধবার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এসময় পুলিশ তাদের উঠে যেতে বললে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়।

একই সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, তাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানো গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ঘটনায় বিএনপি কার্যালয়ের ভেতর থেকে ৪১ জনকে, কার্যালয়ের সামনে থেকে ২৬৪ জনকে এবং ওই এলাকার আশপাশ থেকে ১৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলাটিতে বিস্ফোরণ, জনসাধারণ ও যানবাহনে চলাচলে বাধা, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, জনমনে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মতিঝিল

মতিঝিল থানার এসআই নজরুল ইসলামের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপি অফিসের সামনে অবৈধভাবে সমাবেশ করে। পরে তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়।

একপর্যায়ে ধাওয়া খেয়ে তারা ফকিরাপুল প্রবাস হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সামনে জড়ো হয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয় এবং মিছিল করে। পুলিশ তাদের সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায় বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে ২০জনকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এতে।

এ মামলাতেও ককটেল বিস্ফোরণ, জনসাধারণ ও যানবাহনে চলাচলে বাধা, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, পুলিশের কাজে বাধা ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শাহজাহানপুর

এ থানায় মামলাটি করেছেন এসআই রফিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা চারমারি বাটক্রসিং ফাঁকা রাস্তায় লাঠি, লোহার রডসহ অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে বাধা দেয় এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ তাদের সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

পরে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, গ্রেপ্তার করে সাতজনকে।

মামলায় গ্রেপ্তার সাতজনসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় দুই থেকে আড়াইশজনকে অজ্ঞাত হিসাবে আসামি করা হয়েছে।

এ মামলাতেও বিস্ফোরণ, জনসাধারণ ও যানবাহনে চলাচলে বাধা, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, জনমনে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রমনা

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বুধবার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, লোহার রড, ইটপাটকেল নিয়ে বিএনপি অফিসের সামনে থেকে পাইওনিয়ার সড়কের জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান করে এবং যান চলাচলে বাধা দেয়।

এসময় পুলিশ সদস্যরা সেখানে গিয়ে সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর ইটের টুকরা ও ককটেল ছুঁড়ে হামলা চালায়। তাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয় বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

জনসাধারণ ও যানবাহনে চলাচলে বাধা, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, জনমনে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ এ মামলাতেও আনা হয়েছে।

Also Read: ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য বিএনপি এখন চাইছে কমলাপুর স্টেডিয়াম

Also Read: ১০ ডিসেম্বর: কথার খেলা গড়াল সহিংসতায়

Also Read: স্পষ্ট কথা, রাস্তায় সমাবেশ করতে দেব না: ডিএমপি কমিশনার

Also Read: নয়া পল্টনে পুলিশ বাধ্য হয়ে বুলেট ছুড়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Also Read: ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ নয়া পল্টনেই: ফখরুল

Also Read: রিজভী, এ্যানীসহ বহু আটক, বিএনপি কার্যালয় ঘিরে পুলিশ