প্রতি থানার আওতায় দুইটি করে চেক পোস্টে এ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার।
Published : 08 Dec 2022, 02:59 PM
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে গাজীপুরে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিটি গাড়ি ও যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ।
পুলিশ দূরপাল্লার বাসের গতিরোধ করে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ, ব্যাগ, বস্তার পাশাপাশি মুঠোফোনের বিভিন্ন অ্যাপসের মেসেজ, ছবিও চেক করছে। এতে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, “১ ডিসেম্বর থেকেই আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহাসড়কে গাড়িতে তল্লাশি চলছে। প্রতি থানার আওতায় দুইটি করে চেক পোস্টে এ অভিযান চলছে।”
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এবং শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার। এই পথ দিয়েই উত্তরবঙ্গের সব গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করে থাকে। এই দুই পয়েন্টের চেক পোস্টে থাকা পুলিশ সদস্যরা সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল, পিকআপ, দূরপাল্লার বাস, ট্রাক গতিরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছেন।
পাশাপাশি পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে গাজীপুরের টঙ্গীতেও। টঙ্গী ব্রিজের উত্তরপাশে এই তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। এখানে বুধবার থেকেই ঢাকামুখী সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা-বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার মানুষের চলাচলের সহজ পথ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ফলে ঢাকায় প্রবেশ করতে হলে শ্রীপুর হয়ে টঙ্গীর তল্লাশি চৌকিটি পার না হওয়ার সুযোগ নেই।
তল্লাশির শিকার অনেকেরই বক্তব্য, তারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। জরুরি কাজে যে যার মতো ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে পুলিশ তাদের গাড়ি থামিয়ে শরীর-তল্লাশিসহ মুঠোফোনের ব্যক্তিগত তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ, ছবি ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখছে।
কালিয়াকৈর থানার এসআই আজিম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যেন না ঘটে, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। চেকপোস্টের মাধ্যমে কাউকে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
এই মহাসড়কে চলাচলকারী এসআই পরিবহনের সহকারী আব্দুল হালিম জনি বলেন, “ঢাকায় যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল, মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর চন্দ্রায় পুলিশের চেকপোস্ট চোখে পড়েছে। তারা আমাদের যাত্রীদেরও জিজ্ঞাবাদ করছে।”
ঢাকায় ১০ তারিখের বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই এ তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে ধারণা এই পরিবহন শ্রমিকের।
গাজীপুরের বাসিন্দা শিপন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, “দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা যাচ্ছিলাম। টঙ্গী ব্রিজের উত্তরপাশে পৌঁছানোর পর পুলিশ বাস থামিয়ে তল্লাশি করে। এ সময় আমার স্মার্ট ফোন নিয়ে পুলিশ ফেইসবুক, ইমু, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপের মেসেজ ঘাঁটাঘাঁটি করে।”
টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই মো. মিলন সাংবাদিকদের বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দায়িত্ব পালন করছি। কেউ যেন নাশকতা তৈরি করতে না পারে বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটাতে না পারে সেজন্য তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে কাউকেই অনাহুত হয়রানি করা হচ্ছে না।”
গাজীপুর মহানগর (ট্রাফিক বিভাগের) পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন জানান, বিভিন্নস্থানে পুলিশের চেক-পোস্ট স্থাপন করলেও কাউকে হয়রানী করা হচ্ছে না।
গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার বলেন, “ঢাকায় বিএনপির সমাব্শেকে সামনে রেখে গাড়িতে এখন সাধারণ মানুষ (যাত্রী) কমে গেছে। তাদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ যাত্রী ছাড়াও চালক-গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষানিরীক্ষা করছে। তবে কোথাও কাউকে হয়রানি করার তথ্য পাওয়া যায়নি।”