দলের পারফরম্যান্স ভালো হলেই ক্রিকেটের ব্র্যান্ড ভ্যালু স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওপরের দিকে যাবে, বলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল ইসলাম শান্ত।
Published : 24 Apr 2025, 11:43 AM
মাঠের ক্রিকেটে দুরাবস্থার আরেকটি প্রমাণ তো সিলেট টেস্টে হয়েই গেল। মাঠের বাইরেও যে এখন ক্রিকেটের চরম দুঃসময়, সেটি পরিষ্কার হয়ে গেছে সিরিজ শুরুর আগেই। কোনো টিভি চ্যানেল এই বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ দেখাতে আগ্রহী হয়নি। সব মিলিয়ে ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের সামগ্রিক আবেদন এখন পড়তির দিকে স্পষ্টভাবেই। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলছেন, পারফরম্যান্স হলেই আবার উর্ধ্বমুখী হবে ক্রিকেটের ব্র্যান্ড ভ্যালু।
এমনিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ সবসময়ই বিসিবির জন্য ‘লস প্রজেক্ট।’ বরাবরই এই সিরিজে আর্থিক লাভ খুব একটা হয় না বা অনেক সময় আর্থিক ঘাটতি থাকে। বিশেষ করে সেটি যদি হয় টেস্ট সিরিজ। তবে এটি গোটা ক্রিকেট বিশ্বেরই বাস্তবতা। সব সিরিজ থেকে আর্থিক প্রাপ্তি একরকম থাকে না। এরকম ছোট সিরিজের আর্থিক ঘাটতি বা মাঝামাঝি সিরিজের কম লাভ পুষিয় নেওয়া হয় বড় সিরিজ থেকে।
এবারের বাস্তবতা তবু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ক্রিকেটের বর্তমান দুর্দশা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ঘিরে আগ্রহ বরাবরই কম থাকলেও টিভি সম্প্রচার নিয়ে অনিশ্চয়তা জাগেনি। কোনো টিভি চ্যানেল দেখাতেই চাইবে না, এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
শেষ পর্যন্ত অতীতের আশ্রয়ে ফিরে বিটিভির দুয়ারে কড়া নাড়ে বিসিবি। রাষ্ট্রীয় চ্যানেলটি পাশে দাঁড়ায় বোর্ডের। বিব্রতকর অবস্থা থেকে কোনোরকমে মুক্তি পেয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতায় ভাসিয়ে দেন বিটিভিকে।
অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ক্রিকেটের চেয়ে বড় পণ্য এই দেশে আর ছিল না। স্পন্সরশিপের স্রোত বয়ে গেছে। প্রতিপক্ষ নিয়ে যত অনাগ্রহই থাকুক, টিভি সম্প্রচার নিয়ে অনিশ্চয়তা অন্তত তৈরি হয়নি।
নিশ্চিত করেই তাই বলা যায়, সমস্যাটি এখানে প্রতিপক্ষ বা জিম্বাবুয়ে নয়, সঙ্কটের নাম ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট।’
বৈশ্বিক আসরগুলোতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে দল। একের পর এক সিরিজ বা টুর্নামেন্টে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। বারবার আশাহত হয়ে লোকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। সিলেট টেস্টে চার দিন ধরেই যেন প্রায় খা খা করেছে গ্যালারি, তেমনি টিভি পর্দার সামনে আগ্রহী দর্শকও নিশ্চিতভাবেই ছিল তুলনামূলক অনেক কম।
সিলেট টেস্টে দল যদি দারুণ কিছু করতে পারত, দাপুটে পারফরম্যান্সে রেকর্ড-অর্জনের জোয়ারে জিম্বাবুয়েকে ভাসিয়ে দিতে পারত, তাহলে চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ে হয়তো আগ্রহের জায়গা কিছু তৈরি হতো। প্রতিপক্ষ দল যেমনই হোক, ব্যক্তিগত বা দলীয় পারফরম্যান্স ঝলমলে হলে মানুষকে তা আকৃষ্ট করবেই।
কিন্তু সিলেট টেস্টে শান্তদের পারফরম্যান্সের যা চিত্র, চট্টগ্রামের গ্যালারিতে যেতে লোকের আগ্রহ জন্মাবে কেন? টিভি পর্দায় চোখ রাখবেন কজন?
পারফরম্যান্সের পথ ধরে ও আনুষঙ্গিক অনেক কিছু যোগ হয়ে গড়ে ওঠে তারকা। এখন নেই তেমন কোনো পারফরম্যান্স। তারকা হয়ে ওঠার অন্যান্য মানদণ্ড থেকেও অনেক দূরে ক্রিকেটাররা। বিজ্ঞাপনের বাজারেও তাই ক্রিকেটারদের চাহিদা প্রবলভাবে কমতির দিকে। ক্রিকেটারদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন, এমন একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজ্ঞাপনের আঙিনায় আগে আর্থিক ও অন্যান্য দিক থেকে ক্রিকেট তারকারাই রাজত্ব করতেন। সেখানে এখন ধস নেমেছে প্রবলভাবে। তেমন তারকাই যে নেই! জাতীয় দল থেকে দূরে থাকা সাকিব আল হাসান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া তামিম ইকবালরাই এখনও বিজ্ঞাপনের বাজারে তারকা। তারাই এখনও জনপ্রিয়তা মাপকাঠিতে শীর্ষে।
দলের পারফরম্যান্স নেই। দলে তারকা নেই। তাহলে ব্র্যান্ড ভ্যালু থাকবে কি করে?
এই দলের ক্রিকেটাররা, দলের অধিনায়ক কি তা অনুভব করতে পারছেন? সিলেট টেস্ট শেষে প্রশ্নটি করা হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক শুরুতে তা এড়িয়ে যেতে চাইলেন।
“আমাদের কাজ হলো নিয়মিত পারফর্ম করা, দলকে জেতানো। এটাই আমাদের কাজ। আমাদের খেলা কে দেখাবে না দেখাবে, এটা নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তা করি না। আমাদের কাজ নিয়মিত ঠিকমতো ভালো যেন খেলতে পারি, যেটা আমরা পারছি না।”
পরে প্রশ্নটি তাকে করা হলো আরও সুনির্দিষ্ট করে ও বিশদভাবে। তিনি এবার বাস্তবতা স্বীকার করলেন। যদিও খুব একটা ভাবিত বলে মন হলো না অধিনায়ককে।
“পারফরম্যান্স করেই ভ্যালুটা আসলে তৈরি করতে হবে। পারফরম্যান্স নেই বলেই হয়তো ভ্যালু একটু কম, নিচের দিকে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স যখন ভালো হবে, তখন এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ওপরের দিকেই যাবে।”
পারফরম্যান্স ভালো হলে ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়বে, এটা বুঝতে তো আর জাতীয় দলের অধিনায়ক বা কোনো বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। তবে পারফরম্যান্স ভালো হবে কবে?
শান্তরা যদি দ্রুত উত্তর দিতে না পারেন, ক্রিকেটের বাজারের টিমটিম করে জ্বলতে থাকা আলোও নিভে যেতে পারে।