“এই অভিযান শুধু বিএনপিকে ক্ষতি করে নাই, সমস্ত বাংলাদেশে মানুষের বুকে আঘাত হেনেছে।”
Published : 07 Dec 2022, 08:58 PM
পুলিশের বাধায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কার্যালয়ের ভেতরে পুলিশের এমন অভিযানকে ‘জঘন্য’ বলেছেন তিনি।
বুধবার বিকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুজন নিহত হয় বলে বিএনপির দাবি; তবে পুলিশ একজনের কথা স্বীকার করেছে।
সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে পুলিশ; সেখান থেকে বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ বহু নেতা-কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় ফখরুল ভেতরে ঢুকতে চাইলেও পুলিশ তাকেও আটকে দেয়।
পুলিশের বাধা পেয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে বসে পড়েন ফখরুল। তিনি তখন সাংবাদিকদের বলেন, “এটা একটা বর্বরোচিত, পৈশাচিক, নারকীয় ও মর্মান্তিক ঘটনা। আমি মনে করি যে, কোনো সভ্য দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এইভাবে রেইড,এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না।”
সরকারের বিরুদ্ধে অধিকার হরণের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে, আমাদের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। এটা গণতন্ত্রকে ধবংস করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন করার শামিল। এটা গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত। এর থেকে খারাপ কাজ কিছু হতে পারে না। আমার ভাষা নাই বলার। আই্ অ্যাম শকড।”
বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। ওই সমাবেশের স্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির টানাপড়েন চলছে। বিএনপি নয়া পল্টনে এই জনসভা করতে চাইলেও পুলিশ বলছে, কোনোভাবেই তারা সড়কে সমাবেশ করতে দেবে না।
এরমধ্যেই জনসভার তিন দিন আগে সংঘর্ষ বাঁধে এবং বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান চলে।
ফুটপাতে অবস্থান নেওয়া ফখরুলকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “আপনি কি সারা রাত থাকবেন এখানে?” জবাবে তিনি বলেন, “ইটস ডিপেন্ডস …. তারা কখন এই অভিযান শেষ করে তার উপর।”
বিকাল ৫টায় মির্জা ফখরুল দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। কলাপসিবল গেইট বন্ধ করে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা এই অভিযান শুরু করে। ফখরুল একাধিকবার পুলিশ কর্মকর্তাদের তাকে তার কার্যালয়ে ঢুকতে দিতে বললেও তারা কর্ণপাত করেননি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এটা ক্রাইম জোন। স্যার একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি উপরের সাথে কথা বলে নিই।”
বিএনপি মহাসচিব তখন বলেন, “আমি পুলিশ কমিশনারের সাথে বলে এসেছি। আপনি কথা বলুন। আমাকে যেতে দিন।”
পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেন, “স্যার, দেখছি স্যার।”
এক পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে থেকে পুলিশ দলীয় চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান খান শিমুল বিশ্বাসকে ধরে বের করে নিয়ে আসে। ফখরুল তখন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা তা না শুনে শিমুল বিশ্বাসকে নিয়ে যায়। এরপরই বিএনপি মহাসচিব ফুটপাতে বসে পড়েন।
পরে পুলিশ ভ্যান আসার পর নেতা-কর্মীদের লাইন দাঁড় করায় পুলিশ এবং কর্মীদেরকে হাত উচু করে ভ্যানে তুলতে থাকে। রাত ৭টা পর্যন্ত দুটি ভ্যানে করে পর্যায়ক্রমে চার দফায় নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
নেওয়ার আগে দলীয় কার্যালয়ের নিচতলায় নেতা-কর্মীদের লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে ফখরুল বলেন, “আপনারা এই অসহায় মানুষগুলোকে এভাবে ধইরেন না। এটা ঠিক নয়। দিস ইজ টু মাচ। ইন মাই প্রেজেন্টস, আপনারা একদম ঠিক করছেন না।”
এই সময়ও বিএনপিকর্মীদের হাত উঁচু করে নিয়ে যাওয়া থামায়নি পুলিশ।
এক পর্যায়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাকে অফিসে যেতে দিন। এভাবে আপনারা রেইড করতে পারেন না।”
তবে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ তার কথা শোনেননি।
‘পুলিশই এই ঘটনা ঘটিয়েছে’
বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নিয়েই পুলিশ এসেছিল বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “বেলা ৩টার দিকে পুলিশ রবার বুলেট দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে আমাদের অফিস আক্রমণ চালায়। আর এরপরে আমি যখন এখানে এসে প্রবেশ করতে চাই, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাকে আটকিয়ে রাখা হয়।”
ফখরুল বলেন, “প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী যৌথভাবে এই অভিযান চালিয়েছে। তারা সবচেয়ে হীন কাজটা করেছে যে, তারা নিজেরা এখানে ব্যাগে করে কিছু কিছু বিস্ফোরক নিয়ে এসেছে এবং সেটা ভেতরে রেখে আমরা যেটা খবর পেয়েছি তারা এখন বিএনপির উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আরকি।”
ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমার সামনে যেটা দেখলাম অফিসের সমস্ত কম্পিউটার, যতরকম ডকুমেন্ট, সব তারা নিয়ে গেছে। সমস্ত সিসি ক্যামেরাগুলো তারা ভেঙে দিয়েছে। বিদ্যুতের লাইট ভেঙে দিয়েছে, যাতে কোনো এভিডেন্স না থাকে।”
কয়েক বছর আগে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযানে পুলিশের যে কর্মকর্তারা ছিলেন, এবারও তাদেরই দেখেছেন বলে জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “আজকে যেভাবে রেইড হল, সেটা আগেরটার সেইম কেইস। আগে যারা অভিযানে ছিলেন, আজকেও তাদেরকে দেখা গেছে। সেই গ্রুপই ছিলেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। আই টক টু ডিএমপি কমিশনার, আই টক টুক হোম মিনিস্টার। কোনো লাভ নেই। ইনফেক্ট এখানে দেয়ার ইজ নো গভার্নমেন্ট, দেয়ার ইজ নো স্টেট হিয়ার।”
‘খেলা হবে- এর প্রকাশ এই অভিযান’
ফখরুল বলেন, “আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি আমরা পালন করে আসছি।
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের মন্ত্রীরা উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখতে শুরু করে। তাদের সাধারণ সম্পাদক পরিষ্কার করে বলেন, ‘খেলা হবে’। আারেকজন মন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতের মতো সাফ করে দেওয়া হবে’। এই যে ভয়াবহ সমস্ত উক্তি, সমস্ত কথা তখন থেকে যেটা আশঙ্কা করেছিলাম যে ২০১৩/১৪/১৫ এর মতো নীলনকশা করছে জনগণের ন্যায়সঙ্গত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করে দিতে।”
তিনি বলেন, “এই অভিযান শুধু বিএনপিকে ক্ষতি করে নাই, সমস্ত বাংলাদেশে মানুষের বুকে আঘাত হেনেছে। একই সঙ্গে তারা গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সেই ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধবংস করে দেওয়ার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে।
“এটা কোনো সভ্য দেশে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করতে পারে, এটা আমাদের ধারণার বাইরে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপা্র সরকার কাজ করছে কি না, সন্দেহ আছে। আমরা বার বার তাদেরকে অনুরোধ করেছি এখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হচ্ছে, কোনো ঝামেলা করবেন না। কিন্তু তারা কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি।”