Published : 28 Apr 2025, 07:50 PM
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে ক্ষমতা ও রাজনীতির দৃশ্যপট যেভাবে বদলেছে, সেখানে গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার স্বর যেমন উচ্চকিত, তেমনি ‘অগণতান্ত্রিক শক্তি ও উগ্রপন্থার’ বিপদের কথাও বলছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ‘চরম ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছেন তিনি।
এখনকার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে ‘সবকিছু সমাধান করা’ সম্ভব নয়। এ কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া ‘দরকার’।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ইনসাইড আউটে অংশ নিয়ে সমসমায়িক রাজনীতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, সংস্কার প্রক্রিয়া, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়। ইংরেজির পাশাপাশি এবার বাংলা ভাষাতেও শুরু হল এই আয়োজন।
আধা ঘণ্টার এই আলোচনায় দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী এবং অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে ভিন্নমত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গ এসেছে।
শিক্ষাজীবনে বামপন্থায় আস্থা রেখে রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেওয়া মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। অর্থনীতির এই শিক্ষক পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। তৃণমূল থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসেন।
২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল মহাসচিব নির্বাচিত হলেও কার্যত ২০১১ সালে থেকে এই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে।
বিএনপির এই নেতার কাছে প্রশ্ন ছিল, বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তায় নামছেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক, চাকরিপ্রার্থী ও পেশাজীবীরা। রাস্তায় এখন এত আন্দোলন কেন?
ফখরুলের পর্যবেক্ষণ হল- এতদিন নামতে পারেনি ‘ফ্যাসিবাদের’ কারণে। এখন প্রতিদিনই রাস্তায় ছেলেরা নামছে, শ্রমিকরা নামছে, লোকজন নামছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে। তাছাড়া নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণে অন্যান্য ‘গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি’ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।
“এই যে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা, আবার কেউ কেউ এটাকে উসকে দিচ্ছেন বিভিন্নভাবে। দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টাও রয়েছে।
“এসবের সব কিছুর সমাধান হতে পারে যদি আপনার সংস্কারগুলো দ্রুত করা যায় এবং সেই সংস্কারগুলোর পরে নির্বাচন আসে। আমরা তো দাবি করছি যে, সরকার অবিলম্বে এই সংস্কার, যেগুলোতে একমত হয়েছে সেগুলো প্রকাশ করুক। সরকার অবিলম্বে এই সংস্কারগুলো সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করুক, এটাই হল আসল বিষয়।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকায় তারা এতদিন মাঠে নামতে পারেনি। এখন যে নামছে, এটা তো বুঝতে হবে, একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সবকিছু সমাধান করা সম্ভব না।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা কথা গোটা জাতিকে জানাতে চাই, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে আমরা যেন মূল জিনিসটাকে হারিয়ে না বসি। মূল জিনিসটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসা।
“একটা গণতান্ত্রিক চর্চা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি যদি না হয়; কাঠামো যদি গণতান্ত্রিক করতে না পারি তাহলে আমাদের সমস্ত চেষ্টা, আত্মত্যাগ, এত আন্দোলন, এত রক্তপাত সব কিছু বৃথা হয়ে যাবে।”
মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
“তারা সংস্কারের ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটাকে স্বাগত জানাই। অতি দ্রুত এ সংস্কারের বিষয়গুলোকে জনসম্মুখে প্রকাশ করা এবং যেসব বিষয়ে একমত হওয়া গেছে, সেখানে সনদ আকারে সই করে, আমার মনে হয় আমাদের গণতান্ত্রিক সরকারের দিকে ফিরে যাওয়া উচিত।”
কেমন চলছে দেশ?
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনের ইতি ঘটার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস পার হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুলের কাছে প্রশ্ন ছিল ফ্যাসিবাদ কি দূর হয়েছে? দেশ কেমন চলছে?
জবাবে তিনি বলেন, “আমরা যেটা বরাবরই বলে আসছি, ফ্যাসিস্ট সরকার যারা অতীতে ছিল, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে একটা ভয়াবহ ক্ষতি করে গেছে।
“গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সবগুলো একেবারে ধ্বংসযজ্ঞ করেছে এবং ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে ফেলেছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে আমরা চেষ্টা করছি প্রথম থেকেই।”
দেড় দশক ধরে দেশে যে ‘স্বৈরশাসন’ চলেছে, এখন তা নেই। কিন্তু ‘স্বৈরশাসনের’ অবশেষ এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “যে আমলাতন্ত্রকে ব্যবহার করে গত সরকার স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিজম চালাত, সেই আমলাতন্ত্রের একটা বিরাট অংশ, সেই লোকগুলো এখনো আছে, যারা আপনার সরাসরি সহযোগিতা করেছে ফ্যাসিস্টদের।
“শুধুমাত্র সচিবালয়ে নয়, বাইরে যে সমস্ত সংস্থা আছে, যেগুলো সরকারের প্রধান সংস্থা, সেসব সংস্থার প্রধান মানুষগুলো পর্যন্ত এখনো পরিবর্তন হয়নি।”
ব্যাংকিং ব্যবস্থা ‘ধ্বংস’ হয়ে গিয়েছিল মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সেখানে এ সরকার ‘বেশ ভালো’ করেছে, কিছু কিছু ‘ভালো নিয়ম’ করেছে।
“কিন্তু সেই ব্যাংকগুলোর মধ্যে বহু ব্যাংকে সেই এমডিরাই রয়ে গেছেন, যারা ওই সময়ে অর্থ লোপাট করে বিদেশে পাচার করার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে, ভূমিকা পালন করেছেন। এ বিষয়গুলোর কোনো সমাধান হয়নি। এটা অবশ্যই তাদের (সরকার) দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন, তা না হলে এই সমস্যা থেকেই যাবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই অন্তবর্তীকালীন সরকার তো বাংলাদেশের মানুষের প্রায় সকলের সমর্থন নিয়েই এসেছে। যারা এসেছেন তারাও দেশের অত্যন্ত বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। সবার প্রত্যাশা যে, তারা অত্যন্ত ভালোভাবে দেশটাকে চালাবেন, যেটা চালানোর কথা।”
সরকার কি জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে?
বিএনপি মহাসচিব তা মনে করেন না।
“সবক্ষেত্রে যে তারা পারছেন তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের অনেক রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”
ফখরুল মনে করেন, বর্তমানে যে একটা ‘অস্থির’ অবস্থা চলছে, তার কারণ মূল সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারা। আর সে জন্য সরকার সফল হতে পারছে না।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে কী করবে বিএনপি?
নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার পর সন্তুষ্ট না হওয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছিলেন বিএনপি মহাসচিব।
সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “উনার কথায় আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। উনি আগে বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু পরে আবার তিনি বললেন যে, ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত।
“এখানে আমি সন্তুষ্ট হব কীভাবে? এতদিন পরে যদি একটা মতামত, তাদের একটা সিদ্ধান্ত যদি না পায় জাতি, তাহলে তো সেখানে অস্থিরতা থেকেই যাবে।”
সরকারকে নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে কি না, সেই প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “সরকারের বিষয়ে আমরা অসন্তুষ্ট না কিন্তু। আমাদের অসন্তুষ্টি হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে। আমরা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি। সেই রোডম্যাপটা দিতে না পারার কারণেই আমরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি।”
তিনি বলেন, “এমন যদি হয় আমরা ধরেই নিই, কোনো নির্বাচিত সরকার দরকার নেই, এটা দিয়েই চলবে পাঁচ বছর/ছয় বছর, যেটা অনেকেই তাদের মধ্যে বলাবলি শুরু করেছেন… তা তো ভিন্ন কথা।
“কিন্তু এটা সত্য কথা যে, এদেশের মানুষ একটা নির্বাচিত সরকারের জন্য, সংসদের জন্য, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসার জন্য সংগ্রামটা করেছে, লড়াই করেছে। এখানে কিন্তু আপনার দ্বিমত থাকতে পারে না। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরা যায় ততই ভালো।
“কারণ সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি, যেগুলো, সেগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং এটা অনেক বড় ক্ষতি করছে।”
ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে অস্থিতিশীল অবস্থার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন মির্জা ফখরুল। সেটা কী হতে পারে, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তার সামনে।
জবাবে তিনি বলেন, “অস্থিতিশীল অবস্থা আছে না? আপনি তো নিজেই বুঝতে পারছেন। ছাত্রদের মধ্যে গোলমাল চলছে, আপনার কলেজে কলেজে মারামারি চলছে, ইউনিভর্সিটিতে ব্যাপক গোলযোগ চলছে। তারপরে আপনার অর্থনীতিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসছে। এই যে সমস্যাগুলো আছে এগুলো তো আপনার অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেই।”
তবে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারকে চাপে রাখতে দল বা জোটগতভাবে কোনো ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, সরকারের শুভ বুদ্ধি আসবে এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে। রোডম্যাপ দেওয়া, সরকারে কাজগুলো হয়ে যাওয়া, তাহলে দ্রুত নির্বাচন হয়ে গেলে সমস্ত সমস্যার সমাধান অনেকাংশে হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি।”
বিএনপি মহাসচিবের ভাষায়, “উত্তরণের পথ একটাই। দ্রুত সংস্কার করা। সংস্কারের পরই নির্বাচন করা।”
ঐকমত্যের ভবিষ্যৎ কী?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২৩ সালে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অন্তর্বর্তী সরকারও রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারে কাজ করছে। কিছু প্রস্তাবে একমত হতে পারছে না বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপির সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। তাহলে ঐকমত্যের ভবিষ্যৎ কী?
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করা হয় আমাদের সম্পর্কে যে, আমরা নাকি সংস্কার চাই না। সংস্কার তো আমরাই চেয়েছি।
“২০১৬ সালে ভিশন-২০৩০ তো আমরাই দিয়েছি। এরপরে ২০২৩ সালে আমরা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য সংস্কারের ৩১ দফা দিয়েছি। সেগুলো তো আমরাই দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “যাই হোক এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা যে, বর্তমান সরকার তারা জনমতের ওপর ভিত্তি করে কতগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। তাদের প্রতিবেদনও হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামতও দিয়ে দিয়েছে।
“আজকে যে বিষয়গুলো উঠে আসছে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, নারীদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা, বিচার বিভাগে পরিবর্তন নিয়ে আসা, পুলিশ বাহিনীর সংস্কার-এসব প্রস্তাব কিন্তু আমাদের, বিএনপির। এ জায়গায় কিন্তু সংস্কার কমিশনের সাথে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নেই।”
ফখরুল বলেন, “যে জায়গাগুলোতে আমরা অন্যান্য দলগুলো একমত হয়ে যাচ্ছি, সেগুলো (সংস্কার) নিয়েই তো এগোনো যেতে পারে।
“জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে অতিদ্রুত এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শেষ করে জনগণের কাছে প্রকাশ করা এবং সেটা নিয়ে নির্বাচনের দিকে চলে যাওয়া।”
সংস্কার নিয়ে জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে মতপার্থক্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা থাকতেই পারে। তাদের দল আলাদা, আমাদের দল আলাদা। তাদের চিন্তাভাবনা আলাদা, আমাদের চিন্তাভাবনা আলাদা। কিন্তু মৌলিক জিনিসগুলো, সেগুলোর বিষয়ে একমত হওয়া দরকার।
“যেমন ধরেন, নির্বাচন, দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বা লোকসভা, সেনেট, আপনি যাই বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, প্রধানমন্ত্রী পরপর দুইবারের বেশি নির্বাচিত না হওয়া, এগুলোর বিষয় তো আমরা একমত হয়েছি। এখানে পার্থক্যটা কোথায়? এখানে সমস্যাটা কোথায়?”
ভিন্ন ভিন্ন দলের আলাদা চিন্তা ভাবনা থাকলেও অন্তত নির্বাচনের বিষয়ে যে সবাই একমত, এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলছেন, “নির্বাচন থেকে জনগণ বেছে নেবে, কারা আপনার দেশ পরিচালনা করবে আগামী পাঁচ বছরের জন্যে, কারা করবে না। কী কী বিষয় তাদের প্রয়োজনীয়, কোন কোন বিষয়গুলো পরিবর্তন দরকার।”
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান কী?
অভ্যুত্থানের সময় দমন-পীড়নের ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী-এমপি ও দলের নেতাদের অনেককে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা দাবি আসছে।
মির্জা ফখরুলের কাছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি এগুলো নিয়ে। এটা চর্বিত চর্বন হচ্ছে আর কি।
“আমরা বলেছি, এটা জনগণের ব্যাপার, জনগণ যদি চায়। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যে কোনো রাজনৈতিক দল সেটা নিষিদ্ধ হবে কি হবে না তাতে জনগণের দায়িত্ব রয়েছে। যদি আইন ভঙ্গ হয়ে থাকে তাহলে বিচার বিভাগ দায়িত্ব নিতে পারে।”
বিএনপির শীর্ষ সারির এই নেতা বলেন, “রাজনৈতিক দল হিসেবে আমি আরেকটা রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ করার কথা বলি না। জামায়াতে ইসলামীর মত দলকেও আওয়ামী লীগ যখন নিষিদ্ধ করেছে, আমরা বিরোধিতা করেছি।
“এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কথা বলতে হবে। আমি দেখতে পারি না, সেজন্য আপনি খারাপ, আপনার উপর সব চাপিয়ে দিলাম, এটা ঠিক নয়।”
তাহলে কী বিএনপি চায় না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক? ফখরুল বলেন, “আমরা কখনই এ কথা বলিনি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। সব রাজনৈতিক দল যদি চায় আমরা সাথে সাথে… কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী হবে?”
ভোটের আগে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের বিচার?
ভোটের আগে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে সোচ্চার অনেক রাজনৈতিক দল। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী?
দলটির মহাসচিব বলেন, “যদি সম্ভব হয় করবে সরকার। আমি তো বিচারক নই। একটুকু বলতে পারি- আমাদের দেশে বিচার কাজের যে নিয়ম, অন্যান্য দেশেও যেমন- বিচার কাজ খুব দ্রুত শেষ হয় না, এটা সময় নেয়।
“আমরা খুব ভালোভাবে চাই যে, সিরিয়াসলি চাই- যারা গণহত্যার সাথে জড়িত শেখ হাসিনাসহ যারা, তাদের প্রত্যেককে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ন্যায় বিচার করতে হবে, সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। কারণ, গণহত্যার জন্য তারা দায়ী, মানুষ হত্যার জন্য তারা দায়ী।”
সে ক্ষেত্রে বিচার কাজের জন্য নির্বাচন আটকে থাকার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন না তিনি।
“আমরা মনে করি, বিচার কাজ বিচার কাজের মতো চলবে। নির্বাচন নির্বাচনের মতো চলবে।”
লন্ডনে কেমন আছেন খালেদা জিয়া, কবে ফিরছেন তারেক?
চিকিৎসা নিতে জানুয়ারি মাসে লন্ডন যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এপ্রিলে তার ফেরার কথা শোনা গিয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
“ইনশাহআল্লাহ আগের চেয়ে ভালো আছেন উনি। স্থিতিশীল আছে। আমরা যতদূর জানি, খুব শিগগির দেশে ফিরে আসবেন উনি।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও প্রায় দেড় যুগ ধরে লন্ডনে। তার দেশে ফেরার নিয়েও কৌতুহল আছে।
ফখরুল বলেন, “উনিও (তারেক রহমান) খুব শিগগির দেশে ফিরে আসবেন। দুই-একটা মামলা এখনও আছে, সেটা শেষ হয়ে গেলে ফিরে আসবেন।”
সংকটে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের প্রশংসাও করেন তিনি।
শীর্ষ সন্ত্রাসী-উগ্রপন্থিদের জামিন, ‘মব’ সৃষ্টির দায় কার?
অভ্যুত্থানের পরপরই পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন মামলায় কারাগারে থাকা উগ্রপন্থিদের বেশ কয়েকজন জামিনে মুক্ত হয়ে আসেন। সংবাদমাধ্যমে এর নেতিবাচক প্রভাবে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি ও ‘মব’ তৈরি করে বাড়িঘরে হামলা, আগুন দেওয়ার খবর আসে। ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বিএনপি ঘটনাগুলোকে কীভাবে দেখে?
দলের মহাসচিব বলেন, “জামিনের ব্যাপারটি আমি মনে করি সম্পূর্ণ বিচারকদের এখতিয়ার। তবে এমন কিছু করা কখনোই ঠিক না, সমাজে রাষ্ট্রে আরও সমস্যা তৈরি করবে। আজকে যারা জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ প্রচার করেন, যারা উগ্রবাদকে নিয়ে ব্যস্ত, অন্যায়-খুন-হত্যা করেছেন তাদের জামিন হবে কি হবে না তা বিচার বিভাগকে ঠিক করতে হবে।
“সে ক্ষেত্রে সরকার ও সরকারের কৌঁসুলি যারা, তাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যারা তদন্ত করেন, সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।“
‘মব’ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা তো এ সরকারের চরম ব্যর্থতা। ব্যর্থতার প্রধান কারণ হচ্ছে, আপনি নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে যাচ্ছেন। আপনি সরকারের শাসন বলতে যেটা বোঝায় সেটাকে সেভাবে প্রয়োগ করতে পারছেন না।
“আপনাকে ওই বিষয়টাকে রাখতে হবে সামনে, যে নির্বাচিত সরকারের মধ্য দিয়ে আমরা সমস্যাগুলোর সমাধান করবো। সংস্কার চাচ্ছি আমরা, সংস্কার করবেন। সংস্কার দ্রুত করেন। দ্রুত করে সেটা ছেড়ে দেন।”
‘মব’ সমস্যা ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “এতে তো দেশ থাকে না, রাষ্ট্র থাকে না। সরকার থাকে না। সবাই সবকিছু নিজের হাতে নিয়ে নেয়। এটা আমরা কোনো মতেই, সুস্থ সমাজ, সভ্য সমাজ মেনে নেবে না। রাষ্ট্র সেটা মেনে নেবে না।”
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোন পথে?
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েন গভীর হয়েছে। ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সরকারের কূটনীতিকে কোন চোখে দেখছে বিএনপি?
বিএনপির বিদেশে নীতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “যে কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, আমাদের ঘোষিত নীতি। সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকারের সঙ্গে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা বাংলাদেশের মানুষের সমস্যা। সরকারের একক সমস্যা নয়। কারণ, ভারত আজকে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে বাংলাদেশে, বেশিরভাগ বাংলাদেশের মানুষ এখন ভারতের বিরুদ্ধে চলে গেছে।”
নিজের কথার ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “কারণটা কী? বিগত দিনগুলোতে তাদের নীতি, ভূমিকা একটি মাত্র দলের ওপর তাদের পুরোপুরি নির্ভরশীলতা-এটার কারণে।
“বিশেষ করে গত নির্বাচনগুলোতে ভারতের যে ভূমিকা ছিল, সে ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে চলে গেছে।”
সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়গুলো কিছুটা হলেও তুলে ধরতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে যে ফ্যাসিস্ট শাসক দেশে গণহত্যা করেছেন, ১৫ বছর ধরে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন তাকে তারা আশ্রয় দিয়েছে। তাকে শুধু নয়, আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ লোককে আশ্রয় দিয়েছে। এটা দেশের মানুষ কখনও মেনে নিতে পারছে না।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়গুলো যদি ভারত সমাধান না করে তাহলে সম্পর্কের উন্নতি হওয়া কঠিন।”
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব কী হতে পারে?
জম্মু কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাও বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “বৈশ্বিক যে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত তো কিছুটা প্রভাব ফেলেই অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে। আর উপমহাদেশের ঘটনায় কিছুটা প্রভাব তো আসবে। তবে এটা দুই দেশের মধ্যে সমস্যা, তারা দুদেশের মধ্যে সমাধান করবে বলে আমার প্রত্যাশা।
“আমাদের আহ্বান থাকবে, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবে দেশ দুটি। এটা এমন পর্যায়ে যেন না যায় যেখানে একটা উত্তেজনা, যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাহলে গোটা উপমহাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি কোথায়?
প্রায় আট বছর আগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের যে ঢল নেমেছিল তাদের আর ফেরত পাঠানো যায়নি। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনীতিও তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ও তাতে ঝুঁকির বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছে গত সরকার, অবহেলা করেছে। দায়িত্বশীল সরকার কীভাবে ১০ লাখ মানুষ ১০ বছর ধরে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রাখে। সে বিষয়ে কোনো কথা বলছি না, সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছি না-এটা আমার কাছে বোধগম্য হয়নি।”
তবে অন্তর্বর্তী সরকার এখন উদ্যোগ নিচ্ছে এবং দ্রুত এ সমস্যার সমাধান তারা করবে বলে আশাবাদী মির্জা ফখরুল।
“তবে এমনভাবে যেন সমস্যা সমাধান না হয়, আবার আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে ফেলে। এ বিষয়টা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।”
বিএনপির নির্বাচন প্রস্তুতি কতদূর?
ডিসেম্বর ভোট হলে বিএনপি কতটা প্রস্তুত–এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি সরকারের সময় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনের জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ২০১৮ সালে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সবাই নির্বাচনে গেছি।”
ইতোমধ্যে বিএনপি তার মিত্র ও সমমনা দল-জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা একটা রাজনৈতিক চর্চা। আলোচনা করতেই হবে। সবসময় যাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছি, মতের আদান প্রদান, সমস্যা নিয়ে সমাধান বের করা, বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে এগোতে পারি তা নিয়েও আলোচনা হয়।”
প্রশাসন কী বিএনপির পক্ষে?
বর্তমান সরকারের প্রশাসনে বিএনপি লোক বসে আছে এনসিপি নেতা নাহিদের এ ধরনের বক্তব্যকে ‘ভ্রান্ত ধারণা’ বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “এট সম্পূর্ণভাবে ভুল ধারণা, রেটোরিক। বিএনপি প্রশাসনে বসল কোথায়? বিগত সরকারের সময়ে বঞ্চিত সাড়ে ৭০০ সরকারি কর্মকর্তা, তাদের পদোন্নতি একটা দেওয়া হয়েছে পদায়ন দেওয়া হয়নি, একজনও একটা সচিবের পদ পায়নি। তাহলে জায়গাটা কোথায় হল?
“তাছাড়া প্রশাসনে যেভাবে একটা প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে, সেখানে প্রশাসন কিছুটা নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে। সেখানে বিএনপি তো ভুক্তভোগী হচ্ছে। বিএনপি কীভাবে জড়িত হচ্ছে?
ছাত্রদলের ও ছাত্রশিবিরের বিরোধ
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিকে কাছে প্রশ্ন ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যেকার বিরোধ প্রসঙ্গে। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ রাজনীতি ‘সুস্থভাবে’ গড়ে উঠতে পারেনি।
‘পাকিস্তানের সেনাশাসনের উত্তরাধিকার’ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এটা যেমন পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশেও অনেকাংশে এটার প্রভাব পড়েছে। যারা ফলে এখানে রাজনীতি সুস্থভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। এখানে গণতন্ত্রের কোনো চর্চাই হয়নি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গণতান্ত্রিক চর্চা না হলে স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখা যাবে না। সেক্ষেত্রে শিবির-ছাত্রদলের যে সমস্যার কথা বলছেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। খুব দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সেটা ছাত্র সংগঠনগুলোই হোক, আর মূলধারার রাজনীতি হোক।”
সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি বাইরে কেন?
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে সংস্কার প্রক্রিয়ায় রাখা হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও কখনো দলটিকে সংলাপে ডাকেনি।
নিষিদ্ধ না হলেও কেন দলটিকে ডাকা হয়নি? মির্জা ফখরুল বলছেন, সে উত্তর সরকার দেবে।
“আমি মনে করি, জাতীয় পার্টির নিজস্ব কিছু দুর্বলতার কারণে আজকে দলটির এ অবস্থা হয়েছে। তারা সর্বোতভাবে সমর্থন দিয়েছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে। স্বাভাবিকভাবে এটা নিয়ে একটা জনমত আছে, তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার (ঐকমত্য) দায়িত্ব কমিশনের, সরকারের।”