শাজাহান বলেন, “শেখ হাসিনার যে অভিযোগের বিচার হচ্ছে, সেই অভিযোগের চেয়ে একাত্তরের অভিযোগ গুরুতর।“
Published : 23 Apr 2025, 02:49 PM
জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র হত্যার এক মামলায় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে একদিন এবং সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন।
সকালে কড়া নিরাপত্তায় মামলার আসামিদের আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার সাব ইন্সপেক্টর মাহমুদুল হাসান শাজাহান, আতিকুল এবং সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানি নিয়ে বিচারক শাজাহানকে একদিনের এবং আতিকুল ও সৈকতের দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গতবছরের ১৯ জুলাই বিকালে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকার বউবাজার রোডে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
সে সময় লর্ড হার্ডিঞ্জ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র আরিফের চোখে গুলি লাগে। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আরিফের বাবা মো. ইউসুফ যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
আদালতে হট্টগোল, সৈকতের পাশে শাজাহান
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে বলেন, এটি 'হত্যা মামলা।
“তারা আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছে। আন্দোলন দমাতে যা যা করার করেছে।“
শাজাহান খানের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে বলেন, “শাজাহান খান ৮ বারের এমপি।“
এ কথায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা চিৎকার করে শাজাহানের উদ্দেশে বলে ওঠেন ‘অবৈধ এমপি’।
তখন শাজাহান খানের আইনজীবী বলেন, “বিএনপির আমলেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাহলে সেই নির্বাচনও কি অবৈধ ছিল।“
আইনজীবী বলেন, “শাজাহান খানের বয়স ৭৬ বছর, তিনি বৃদ্ধ মানুষ। তাকে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে কোনো অগ্রগতি নাই। ন্যায় বিচারের সাথে রিমান্ড বাতিল করবেন। আর এজাহারে বলা হয়েছে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। উনি তো আর পুলিশের কেউ না।“
এ সময় ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত হাত উঁচিয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান।
আদালত অনমুতি দিলে সৈকত বলেন, “আমি মামলার ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত না। ছাত্রলীগ খুনি দল নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, আছি। আমি ছাত্রলীগের গর্বিত কর্মী।“
এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন সৈকত। আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। এরই মাঝে কথা চালিয়ে যান সৈকত।
তিনি বলেন, “আমি ছাত্রলীগে থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিও হত্যাকাণ্ডও হয়নি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই”
সৈকতের কথায় এই পর্যায়ে ফের আদালত কক্ষে ‘হট্টগোল’ শুরু হয়। তখন বিচারক তাকে থামতে বলেন।
এরপর প্রসিকিউটর ওমর ফারুক বলেন, “শাজাহান খান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আন্দোলনের সময় গণভবনের মিটিং উপস্থিত ছিলেন। তিনি পরিবহন সম্রাটও।“
এ সময় আদালতকে সালাম দিয়ে শাজাহান খান নিজের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “আমার ৫টা ব্লক। ২০২৩ সালে এনজিওগ্রাম করি। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন এক বছর পর দেখে ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু ২৪ এর জুলাইয়ের আন্দোলনের কারণে যেতে পারিনি।
“আমাকে গ্রেপ্তারের পর চারদিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। দুইদিন পরই হাসপাতাল নেওয়া হয়। এরপর দুই বার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রিমান্ড দিলে যেন জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।“
এরপর সৈকত ফের বলেন, “আমি ছাত্রলীগের কর্মী। আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।“
এ সময় আইনজীবীরা আবার আদালত কক্ষে চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন সৈকতের পাশে দাঁড়ান শাজাহান খান।
আদালতের উদ্দেশ্যে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “একজন বন্দি কথা বলায় আপনার সামনে আইনজীবীরা কীভাবে থ্রেট দিচ্ছে। এর বিচার আপনাকেই করতে হবে।“
শাজাহানের এই কথায় আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা বলতে থাকেন, শাজাহান খান ‘তাদের থ্রেট দিচ্ছেন’।
ওমর ফারুক বলেন,”কোর্টের পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব সবার দায়িত্ব। আসামিরা এ ধরনের কথা বললে আমরাও কথা বলব।“
পরে আদালত শাজাহান খান, আতিকুল ইসলাম এবং সৈকতকে রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শাজাহান খান।
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যায় জামায়াত জড়িত। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যাসহ তিন হাজার সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ এরশাদ সাহেবও হত্যা চালিয়েছে। খালেদা জিয়া দুইবার ক্ষমতায় এসে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তারাও গিলটি। তাদের বিচারেরর পরে শেখ হাসিনার বিচার হবে। “
জুলাই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহে ‘অনুতপ্ত কি না’– সাংবাদিকরা এ প্রশ্ন করলে শাজাহান খান বলেন, ‘অবশ্যই অনুতপ্ত’।
রিমান্ডে আরও যারা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন থানার হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আরও ৬ জনকে এদিন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান।
এর মধ্যে ভাটারা থানার মনির হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, বাড্ডা থানার আরেক হত্যা মামলায় জুনাইদ আহমেদ পলক এবং কোতোয়ালি থানার এক মামলায় দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানার এক হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানের তিনদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
ইনু-মেনন-পলকসহ ১০ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার
যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পশ্চিম, কোতোয়ালি, ভাটারা থানার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক বিভিন্ন মামলায় সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, জুনাইদ আহমেদ পলক, অ্যাভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, গোলাম কিবরিয়া মজুমদার, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত, সাবেক ওসি আবুল হাসান ও সাবেক এএসপি তানজিল আহম্মেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
পুরনো খবর