শুনানিতে রিটকারী পক্ষ আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল চেয়েছে। একইসঙ্গে বাতিল চেয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য প্রণীত শৃঙ্খলা বিধিমালা।
Published : 24 Apr 2025, 12:30 AM
অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের উপর শুনানি শুরু হয়েছে হাই কোর্টে।
বুধবার বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চে এ বিষয়ে এ শুনানি শুরু হয় হয়।
শুনানিতে রিটকারী পক্ষ আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল চেয়েছে। একইসঙ্গে বাতিল চেয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য প্রণীত শৃঙ্খলা বিধিমালা।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মো. শিশির মনির শুনানিতে বলেন, এই বিধিমালার বলে গত সাত বছরে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর ‘ছড়ি ঘুরিয়েছে’ আইন মন্ত্রণালয়।
“মন্ত্রণালয়ের অন্যায় নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলে এই নাটাই বলেই বিচারকদেরকে বদলি করা হত বান্দরবান বা খাগড়াছড়িতে। বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলায় রিমান্ড শুনানি ও জামিন বাতিলের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা না মানা হলে এমন শাস্তির মুখে পড়তে হত বিচারকদের।”
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস শৃঙ্খলা বিধিমালায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়কে রাখা হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নের্তৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
“এ নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে তীব্র টানাপড়নের সৃষ্টি হয়। পরে যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান, তিনি ওই শৃঙ্খলা বিধিমালায় একমত পোষণ করেন। সেই বিধিমালার বলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিত মন্ত্রণালয়। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শও নেওয়া হত না অনেক সময়।”
শুনানির এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, কীভাবে এই শৃঙ্খলা বিধিমালা সাক্ষর হল? বিধিমালায় বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টকে অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে-যা ‘অবিশ্বাস্য’।
শিশির মনির বলেন, “এখনই উপযুক্ত সময় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবাালয় প্রতিষ্ঠার। সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দরজা খোলা রয়েছে। কারণ প্রধান বিচারপতি সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন। সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।”
শুনানিতে শিশির মনির বলেন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ করা হচ্ছে। এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে বিচার আসনে ‘মেধাবী ও যোগ্যরা’ আসছেন।
“রাষ্ট্রকে সামনের দিকে অগ্রসর করতে হলে এসব মেধাবী বিচারককে স্বাধীনভাবে বিচার কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কারণ আমরা দেখেছি অতীতে রাতের আঁধারে কোর্ট বসিয়ে একদিনে ১৬/১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে রায় দিয়ে দিত কোনো কোনো বিচারক।
“নিজ ইচ্ছায় বিচারক এ রায় দেননি, নির্দেশিত হয়ে বিচারকদের এ রায় দিতে বাধ্য করা হত। কারণ অতীতে আইন মন্ত্রণালয়ের কথামত জামিন না দেওয়ায় অনেক বিচারককে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বদলি করা হয়েছে। আটকে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতিও।”
তিনি বলেন, আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যাস্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনীতে এখানে পরিবর্তন এনে রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যাস্ত করা হয়। পঞ্চম সংশোধনীতে যুক্ত করা হয় ‘সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে’।
“বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ফেরতের পাশাপাশি বাতিল চাই শৃঙ্খলা বিধিমালার।”
১৯৭২ সালের আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৫ অগাস্ট ১০ আইনজীবীর পক্ষে এই রিট আবেদন করেন শিশির মনির।
রিট আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মো. আসাদ উদ্দিন, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জহিরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাইখ মাহাদী, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল ও যায়েদ বিন আমজাদ।
ওই রিটের ওপর রুল জারি করে হাই কোর্ট। রুলে বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে, না তা জানতে চাওয়া হয়।
আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “বিচার কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যাস্ত থাকবে।”
কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনায় বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি নির্বাহী বিভাগের আওতায় চলে আসে। এসব কাজ রাষ্ট্রপতির পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ করে থাকে।