“আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার পায়ে যা করা হয়েছে, আমি ন্যায়বিচার চাই,” বলেন তিনি।
Published : 23 Apr 2025, 03:32 PM
সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ওপর শুনানির আগে আদালতের এজলাসে কেঁদেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে শুনানি হয়।
গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আব্দুল জব্বার নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ৮ এপ্রিল তুরিন আফরোজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ১২ এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর ২১ এপ্রিল মিরপুর থানাধীন গোল চত্বর এলাকায় গুলিতে নিহত আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরই মাঝে ১৭ এপ্রিল উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই সজিব হাসান তুরিনকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত ২৩ এপ্রিল শুনানির জন্য রাখেন।
এদিন সকালে তুরিনকে আদালতে হাজির করা হয়। নারী পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় তাকে এজলাসে আনা হয়। এসময় তাকে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। তাকে হাস্যোজ্জল দেখা যায়, তখনো আদালতের বিচারকার্যক্রম শুরু হয়নি।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের সঙ্গে কথা বলেন তুরিন। পরে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তাকে কাঁদতে দেখা যায়।
হাসানুল হক ইনু, শহীদুল হক ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা তানভীর হাসান সৈকত তুরিনকে সান্ত্বনা দেন।
এরপর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে উত্তরা পশ্চিম থানার পৃথক দুই মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এরপর তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের বিষয়ে শুনানি হয়।
তার আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম আদালতকে বলেন, “তুরিন আফরোজকে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি কিছু বলতে চান।”
বিচারকের অনুমতি নিয়ে তুরিন আফরোজ বলেন, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার পায়ে যা করা হয়েছে, আমি ন্যায়বিচার চাই।
“কোনোকালে আমার রাজনৈতিক পদ পদবি ছিল না। আমি শুধুমাত্র পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমি হাঁটতে পারি না। ন্যায়বিচারের আকুল আবেদন করছি।”
পরে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “উনারা যা বলছেন তা সত্য না। মিথ্যা কথা বলে এ ঘটনা অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করছেন। আদালতে প্যানিক সৃষ্টি করছে।”
তখন তুরিন আফরোজ নিজের পায়ে নির্যাতনের চিহ্ন বিচারককে দেখান।
শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
পরে পুলিশ প্রহরায় তু্রিনকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। এসময় কোনো কথা বলেননি তিনি।
তুরিনের বিরুদ্ধে করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের সময় তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। মোবাইল পরীক্ষা করে টেলিগ্রাম অ্যাপে ‘‘চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধু’, ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’, ‘বঙ্গবন্ধু রিজার্ভ ফোর্স (গোপালগঞ্জ জেলা)’, ‘আমরা তৃণমূল আওয়ামী লীগ’সহ বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য ও অ্যাডমিন হিসেবে সেগুলো ব্যবহার করেন তিনি’।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তুরিন আফরোজ তার ‘ল্যাপটপ ও মোবাইলে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও রাষ্ট্রের অবকাঠামো ধ্বংসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য উস্কানিমূলক প্রচার ও প্রচারণা চালান’।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেয় প্রসিকিউটর ছিলেন আইনজীবী তুরিন। জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মামলা পরিচালনায় তিনি ভূমিকা রাখেন।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলা চলার মধ্যে তার সঙ্গে গোপন বৈঠকের ঘটনায় ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তুরিনকে অপসারণ করে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তুরিন। গতবছর অগাস্টে অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ অনেকের মত তার বিরুদ্ধেও কয়েকটি মামলা হয়।
পুরনো খবর:
তুরিন আফরোজকে এবার গ্রেপ্তার দেখানো হল হত্যা মামলায়