ঢাকা ও চট্টগ্রামের এসব জমির মূল্য ৪০৭ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে দুদকের আবেদনে।
Published : 23 Apr 2025, 10:10 PM
আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ১৫৯ দশমিক ১৫ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদনে বুধবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের এসব জমির মূল্য ৪০৭ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে দুদকের আবেদনে। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা কমিশনের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। তারা স্থাবর সম্পদসমূহ অন্যত্র হস্থান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আগে সেগুলো হস্তান্তর হয়ে গেলে পরে উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে উঠবে। এজন্য এসব সম্পদ জব্দের আদেশ প্রয়োজন।
এর আগে ১৭ এপ্রিল এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ১ হাজার ৩৬০টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ২ হাজার ৬১৯ কোটি ৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক, যার মধ্যে অন্যতম এস আলম গ্রুপ।
চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, টাকা পাচার, আয়কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরিয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে শেয়ার লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ২৯ অগাস্ট এস আলমসহ ৭ আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এক দিন বাদে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বলে, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে তারা।
এরপর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
এরপর গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪ টি শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়, যার মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
২৩ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়। ১০ মার্চ এস আলমের ১ হাজার ৬ বিঘা জমি জব্দের আদেশ আসে।
এক মাস পর ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেয় আদালত, যার দলিল মূল্য ৩২ কোটি ১০ টাকা। একই দিন এস আলমের ঘনিষ্ঠদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-
এবার এস আলমের ২৬১৯ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ
এস আলম পরিবারের আরও ২,৯৭০ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ
এস আলম পরিবারের ১৭৫ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ
শীর্ষ খেলাপি এখন বেক্সিমকো, এস আলম: ৫ ব্যাংকে ১০ গ্রুপেরই ৫২০০০ কোটি আটকে