বিএনপি কার্যালয় ‘ক্রাইম সিন’, নিরাপত্তার কারণেই প্রবেশ নিষেধ:  পুলিশ

পুলিশ বলছে, পুরো বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট আছে। তারা জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। নিরাপদ ঘোষণার পর ঢোকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2022, 12:18 PM
Updated : 8 Dec 2022, 12:18 PM

ঢাকায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়ে ‘নিরাপত্তার কারণে’ সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার কথা বলছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পল্টনের নাইটিঙ্গেল মোড়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

বিএনপির কার্যালয় থেকে বুধবারের অভিযানে ‘বিপুল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সেখানে কাজ করছে, আর অভিযান এখনও চলছে।

“পুরো কার্যালয়ে পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট আছে। তারা জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। নিরাপত্তার কারণে আমরা কাউকে কার্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছি না। নিরাপদ ঘোষণা করলে কার্যালয়ে ঢোকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”

এছাড়া ‘অভিযান ও তল্লাশি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ নয়া পল্টনের সড়কে মানুষকে চলাচল করতে না দেওয়ারও কথা জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, ভেতরে আরও বিস্ফোরক দ্রব্য থাকতে পারে। তাই যতক্ষণ নিরাপদ না মনে হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারবে না। তবে যাদের অফিস ও দোকানপাট রয়েছে তারা যেতে পারবেন।”

এদিন দুপুর ১টার পর সাংবাদিকদের নয়া পল্টনে নাইটিঙ্গেল মোড়ের পুলিশ ব্যারিকেডের বাইরে থাকতে বলেন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব।

তার ভাষায়, “নিরাপত্তার জন্য ব্যারিকেডের ভেতরে কাউকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।”

‘বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ বোমা নিয়ে গেছে’- বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশ একটি বৈধ রাষ্ট্রীয় সংস্থা। পুলিশ কোনো অবৈধ ও নিয়ম-বহির্ভূত কোনো কাজ করে না। বিএনপির পার্টি অফিস থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিপুল সংখ্যক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।”

সংঘর্ষের ঘটনায় ৪২ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে ১৬ পুলিশ সদস্য রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কয়েকদিন ধরেই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছিল। এর মধ্যে বিএনপিকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।

তারা সেখানে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বিপুল সংখ্যক পুলিশও সতর্ক অবস্থায় ছিল আশপাশের সড়কে।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বিকাল ৩টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে বিএনপি কর্মীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ তখন রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোয়াট সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে।

সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশসহ আহত হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে মকবুল নামে ৩২ বছর বয়সী এক যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে ‘ছররা গুলির চিহ্ন’ থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে নয়া পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশি চালায় পুলিশ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার সেই অভিযানে কয়েকশ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

তাদের মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস রয়েছেন।

ওই ঘটনায় ঢাকার পল্টন, মতিঝিল ও শাজাহানপুর থানায় ‘পুলিশের ওপর হামলা ও বেআইনি সমাবেশ’ এবং বিস্ফোরক আইনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

আরও খবর:

Also Read: বিএনপি অফিসে অভিযানে পুলিশ বাধ্য হয়েছে: যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব

Also Read: বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানকে ‘জঘন্য’ বললেন ফখরুল

Also Read: বিএনপি অফিসে তালা, নয়াপল্টনে চলছে না যানবাহন

Also Read: পল্টনের ঘটনায় ৩ মামলা, আসামি দুই হাজারের বেশি

Also Read: অফিসে ঢুকতে পারলেন না ফখরুল, বললেন ‘সমাবেশ হবে’

Also Read: নয়া পল্টনে সংঘর্ষ, নিহত ১

Also Read: বিএনপি অফিস থেকে প্রিজন ভ্যানের মিছিল

Also Read: সহিংসতায় উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের, ঢাকায় নাগরিকদের জন্য সতর্কতা

Also Read: স্পষ্ট কথা, রাস্তায় সমাবেশ করতে দেব না: ডিএমপি কমিশনার