বিএনপি অফিসে তালা, নয়াপল্টনে চলছে না যানবাহন

ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এই সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2022, 05:59 AM
Updated : 8 Dec 2022, 05:59 AM

ঢাকার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে প্রাণহানি ও ব্যাপক ধর-পাকড়ের পর দ্বিতীয় দিনের মতো নয়াপল্টনে দলটির কার্যালয়  ঘিরে রেখেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ে বসানো রয়েছে কাঁটাতারের ব্যারিকেড। নয়াপল্টন সড়কে এখনও যানবাহন চলছে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগের রাতের মতোই ঝুলছে তালা। সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ সদস্যরা। কাছাকাছি জায়গায় রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান ও প্রিজন ভ্যান।

ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত’ করতে এই সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন তারা।

বিএনপি কার্যালয়ের বন্ধ কলাপসিবল গেইটের ভেতরে থাকা দুজন নিরাপত্তা কর্মী জানান, তারা তাদের ‘ডিউটি’ পালন করছেন। অফিসের ভেতরে কেউ নেই।

নয়া পল্টনের সড়কের দুই পাশে আটটি গলির সবগুলো বন্ধ দেখা যায়। এসব গলিতে পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। সকালে কোনো পথচারীকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না।

Also Read: ১০ ডিসেম্বর: কথার খেলা গড়াল সহিংসতায়

Also Read: ১০ ডিসেম্বর কী হবে?

Also Read: ১০ ডিসেম্বর: বিএনপি অনমনীয়, সরকারও কঠোর

নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ে বসানো কাঁটাতারের ব্যারিকেডের পাশে ভিড় করে ছিলেন পথচারীরা। তাদের কেউ অফিসগামী, আবার কেউ ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সড়কে বের হয়েছেন।

পথচারীদের কেউ কেউ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছেন যেতে দেওয়ার জন্য। পুলিশ কর্মকর্তারাও জিজ্ঞাসা করে তাদের কাউকে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন, আবার কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে সড়কে অবস্থান করতে দেওয়া হচ্ছে না।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে বিএনপিকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।

বিএনপিকর্মীরা তাদের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বিপুল সংখ্যক পুলিশও সতর্ক অবস্থায় ছিল আশপাশের সড়কে।

Also Read: নয়া পল্টনে সংঘর্ষ, নিহত ১

Also Read: বিএনপি অফিস থেকে প্রিজন ভ্যানের মিছিল

Also Read: সহিংসতায় উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের, ঢাকায় নাগরিকদের জন্য সতর্কতা

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বিকাল ৩টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে বিএনপি কর্মীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ তখন রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোয়াট সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে।

ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে নয়া পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশি চালায় পুলিশ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার সেই অভিযানে তিনশর মতো নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস রয়েছেন।

এদিকে ওই ঘটনায় পুলিশসহ আহত হন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে মকবুল নামে ৩২ বছর বয়সী এক যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে ‘ছররা গুলির চিহ্ন’ রয়েছে বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।

অভিযানের সময় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে একটি কভার্ডভ্যান থেকে ১৬০ বস্তা চাল জব্দ করে পুলিশ, যা বিএনপি কার্যালয়ে নেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল। এছাড়া কার্যালয়ের ভেতরে প্রায় পৌনে ৩ লাখ পানির বোতল পাওয়া যায় বলে ‍পুলিশের ভাষ্য।

Also Read: স্পষ্ট কথা, রাস্তায় সমাবেশ করতে দেব না: ডিএমপি কমিশনার

Also Read: বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানকে ‘জঘন্য’ বললেন ফখরুল

Also Read: বিএনপি অফিসে অভিযানে পুলিশ বাধ্য হয়েছে: যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব

কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশের এমন অভিযানকে ‘জঘন্য’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দাবি করেছেন, পুলিশ অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল।

তবে পুলিশ সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, বিএনপির কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছুড়ে মারায় পুলিশ বাধ্য হয়ে অভিযান চালায়।