বিএনপি অফিস থেকে প্রিজন ভ্যানের মিছিল

ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে যে বিএনপিকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন, পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর তাদের একটি অংশ নয়া পল্টন ছেড়েছেন প্রিজন ভ্যানে চড়ে।

গোলাম মর্তুজা অন্তুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 03:14 PM
Updated : 7 Dec 2022, 03:14 PM

সংঘর্ষ থেমে এসেছে, কমে এসেছে শটগান আর টিয়ার শেলের শব্দ; বুধবার সন্ধ্যা তখন সাড়ে ৬টা।

বিএনপি অফিসের সামনে বসে আছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নয়া পল্টনে নেতাকর্মীদের আর কারো দেখা নেই; কেবল পুলিশ ও সাংবাদিকদের ভিড়।

ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কে কোনো গাড়ি চলছে না। তবে পুলিশের গাড়ি আর এপিসি দেখা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। আশপাশের গলির মুখ থেকেও লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।

বাতাসে তখনও ভাসছে প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় আগুন লাগানোর চিহ্ন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের ধরে ধরে প্রিজন ভ্যানে ভরছে পুলিশ।

সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের হিসাবে, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট দশটি প্রিজন ভ্যান ভর্তি করে নেতাকর্মীদের নিয়ে যায় পুলিশ।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল– গ্রেপ্তারের সংখ্যা কত। তিনি সংখ্যা জানাতে পারেননি। তবে বলেছেন, বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে তারা হেফাজতে নিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বলেন, বুধবার বিশেষ অভিযানে তারা ২৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন, অভিযান চলমান আছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপিকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।

বিএনপি নয়াপল্টনের রাস্তাতেই ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে চায়। পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও তাতে তারা রাজি নয়।

বিএনপি নেতারা বলছিলেন, তাদের পছন্দসই জায়গা না পেলে নয়া পল্টনেই তারা ১০ তারিখের সমাবেশ করবেন। অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল, রাস্তায় কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। কোনো বিশৃঙ্খলা পুলিশ হতে দেবে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. হায়াতুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপির সমাবেশের স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি, কিন্তু তাদের কর্মীরা বুধবারই নয়া পল্টন পার্টি অফিসের সামনে উভয় পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।

“বারবার অনুরোধ করার পরও রাস্তা ছেড়ে দেয়নি। পরে তাদেরকে ওঠাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এভাবেই সংঘর্ষের ঘটনা।”

সেই সংঘর্ষ শুরু হয় বিকাল ৩টার দিকে। ছররা গুলি আর টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোয়াট সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে দেখা যায়।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপি অফিস ঘিরে ফেলে ভেতরে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই সময় যারা ভেতরে ছিলেন, কাউকে আর বের হতে দেওয়া হয়নি। মির্জা ফখরুল গেইটে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

সন্ধ্যার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি অফিসের ভেতরে হাতবোমা পেয়েছে তারা। অভিযান শেষে সেগুলো বালতিতে ভরে সরিয়ে নিয়ে নিরাপদে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। 

নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে যে প্রিজন ভ্যানগুলোতে ঢোকানো হচ্ছিল, ছাড়ার সময় তার প্রত্যেকটি ছিল পরিপূর্ণ। নিবন্ধনবিহীন একটি পিজন ভ্যানে লোকজনকে ওঠাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে দেখা যায় চালককে।

এক পর্যায়ে চালক তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। বলেন, "স্যার আরো কয়েকটারে নিয়ে যান, আমি তালা মারতে পারতেছি না।'

পুলিশ কর্মকর্তারা তখন ওই ভ্যান থেকে পাঁচজনকে নামিয়ে অন্য ভ্যানে তুলে দেন।

প্রিজন ভ্যানগুলোর ভেতর থেকে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় জয়সূচক ভি চিহ্ন দেখাচ্ছিলেন আঙুল তুলে। কেউ আবার হাত নাড়ছিলেন।

কয়েকজন পুলিশকে অনুরোধ করছিলেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তারা নিজেদের পথচারী, চাকরিজীবী, দোকান কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিলেন।

বাজারের ব্যাগ হাতে একজনকে প্রিযজন ভ্যানে ওঠানোর সময় বারবার বাজারের ব্যাগ পুলিশকে দেখাচ্ছিলেন তিনি। বলছিলেন, “স্যার ফ্যামিলির জন্য বাজার করছি, বাসায় যাওয়ার সময় দৌড়াইয়া ওইখানে ঢুকছি।”

শেষ প্রিজন ভ্যানটি চলে যাওয়ার পর রাত ৮টার দিকে নয়া পল্টন থেকে গুলশানের দিকে রওনা হন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।