বিএনপি কার্যালয়ে অভিযানে মিলেছে ১৬০ বস্তা চাল: পুলিশ

সেখানে হাতবোমা পাওয়া গেছে বলেও পুলিশের দাবি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 05:07 PM
Updated : 7 Dec 2022, 05:07 PM

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টনে বসে পড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।

বুধবার সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয় থেকে দেড়শ বস্তা চাল ও বিপুল পরিমাণ পানির বোতল উদ্ধারের কথা জানিয়ে এই দাবি করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুণ অর রশিদ।

বিএনপি শনিবার নয়া পল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও পুলিশ তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেয়। এনিয়ে কয়েকদিনের টানাপড়েনের মধ্যে বুধবার নয়া পল্টনে সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।

বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টার অভিযান শেষে পুলিশ কর্মকর্তা হারুণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে একটি কভার্ডভ্যান থেকে ১৬০ বস্তা চাল উদ্ধার করেন, যা বিএনপি কার্যালয়ে নেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল। এছাড়া কার্যালয়ের ভেতরে প্রায় পৌনে ৩ লাখ পানির বোতল পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, “১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা এসব মজুদ করেছিল। সমাবেশকে সামনে রেখে তারা আজই বিএনপি অফিসের সামনে বসে পড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল এবং বসে পড়েছিল।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ইতোপূর্বে বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ২০ লাখের মতো নেতা-কর্মীকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে, সেজন্য তারা দলীয় কার্যালয়ে চাল-ডাল মজুদ করেছে।

বিএনপি নাশকতার পরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছিল বলে অভিযোগ করে আসছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুণ বলেন, সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ১৫টি বোমা পেয়েছেন তারা। পরে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এসে তিন দফায় তা ফুটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলছেন, বিএনপি কার্যালয় থেকে পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়েছিল। এরপরই পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায়।

নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে অভিযানের সময় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফটকে আটকে দেয় পুলিশ।

তিনি অভিযোগ করেছেন, পুলিশ অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েই নয়া পল্টনে এসেছিল এবং বিনা উসকানিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালায়।

ফখরুল বলেন, “বেলা ৩টার দিকে পুলিশ রবার বুলেট দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে আমাদের অফিস আক্রমণ চালায়। আর এরপরে আমি যখন এখানে এসে প্রবেশ করতে চাই, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাকে আটকিয়ে রাখা হয়।”

Also Read: বিএনপি অফিস থেকে প্রিজন ভ্যানের মিছিল

Also Read: বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানকে ‘জঘন্য’ বললেন ফখরুল

Also Read: বিএনপি অফিসে অভিযানে পুলিশ বাধ্য হয়েছে: যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব

ফখরুল বলেন, “প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী যৌথভাবে এই অভিযান চালিয়েছে। তারা সবচেয়ে হীন কাজটা করেছে যে, তারা নিজেরা এখানে ব্যাগে করে কিছু কিছু বিস্ফোরক নিয়ে এসেছে এবং সেটা ভেতরে রেখে, আমরা যেটা খবর পেয়েছি, তারা এখন বিএনপির উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আরকি।”

ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমার সামনে যেটা দেখলাম অফিসের সমস্ত কম্পিউটার, যতরকম ডকুমেন্ট, সব তারা নিয়ে গেছে। সমস্ত সিসি ক্যামেরাগুলো তারা ভেঙে দিয়েছে। বিদ্যুতের লাইট ভেঙে দিয়েছে, যাতে কোনো এভিডেন্স না থাকে।”

কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরে নেওয়ার ঘটনাটিকে ‘জঘন্য’ বলেছেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি কার্যালয়সহ নয়া পল্টন থেকে প্রায় তিনশ’ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন জানান।

তিনি বলেন, “তাদের কারও বিরুদ্ধে মামলা আছে, কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এগুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

সংঘর্ষে নিহত একজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। তিনি বিএনপির সমর্থক ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। আহত দুজন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেলে।

সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুণ। তাদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযান শেষে ফাঁকা বিএনপি কার্যালয়

১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে সরগরম ছিল বিএনপির কার্যালয়। তবে পুলিশের অভিযানের পর সেই কার্যালয় এখন সুনসান।

বুধবার রাত ১০টার পর বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে কাউকেই পাওয়া যায়নি। ভবনের বিভিন্ন তলার মেঝেতে পড়ে ছিল পানির বোতল। কিছু ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনও দেখা গেছে।

প্রতিটি ফ্লোরের চেয়ার-টেবিল ছিল এলোমেলো, কিছু কক্ষের ফটকও ভাঙা দেখা গেল, পুলিশি অভিযানের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ছয়তলা ভবনের বিভিন্ন তলায় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁঝ ছিল। গ্যাসের ঝাঁঝ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টায় বিভিন্ন তলায় কাগজ পোড়ানোর ছাইও দেখা যায়।
রাত ১০টায়ও নয়া পল্টনের সড়কে গাড়ি চলাচল ছিল বন্ধ। আর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ছিল পুলিশের অবস্থান।

বুধবার বিকাল থেকে চলা সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সেখানে থাকা পল্টন থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এখনও মামলা হয়নি, সিজার লিস্ট করছি।”