পিএইচডির প্রথম বর্ষে আমাদের কিছু কোর্স নিতে হয়েছিল। কিন্তু ক্লাস শুরু হবে কবে, জানতাম না। আমার সুপারভাইজার কে হবেন, তাও জানিনা। সবাই ব্যস্ত, শুধু আমাদেরই কোন কাজকর্ম নেই। দেশি ভাইদের সাথে পরিকল্পনা হল, ঈদের দিন নিয়ে। জীবনে এই প্রথম বিদেশে ঈদ বাবা মাকে ছাড়া!
কিন্তু পরিকল্পনা সব ওলটপালট হয়ে গেল। জানা গেল, ক্লাস শুরু হচ্ছে। ঠিক ঈদের দিনে। বিদেশে প্রথম ঈদেই জানতে পারলাম ভিনদেশে ভিন্ন সংস্কৃতিতে রমজান, ঈদ ইত্যাদি একইভাবে পালন করা যায়না। ভাগ্য তবুও ভাল, ক্লাস শুরু হয়েছে দুপুরের পরে।
হ্যা, তবে এরমধ্যেও আমাদের মাঝে চর্চা ছিল, খুব সকালে ফজরের নামাজের পরে পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে প্রতিবেশি দেশি-বিদেশি মুসলিম ভাইদের রুমে গিয়ে একসাথে একটু শরবতপান আর গবেষনাগারে যাওয়ার আগেঈদের কোলাকুলি সেরে ফেলা।
আমরা চাংশা শহরে থাকা অবস্থায় চার বছরের আট ঈদ মোটামুটি একই রকমের ছিল। তবে সন্ধ্যার খাওয়াদাওয়াটা সত্যি ঈদের আমেজ নিয়ে আসত।
চীনা মুসলিমদের দেখতাম ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে নামাজে আসতে, আর এক সাথে খাওয়াদাওয়া করতে। অনেক ধনী মুসলমানকে দেখেছি নামাজ শেষে খাদ্য-উপহার সামগ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে অন্যদের আপ্যায়ন করতে। একবার এক রেস্টুরেন্ট মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মুসলমান ছাত্রদের সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় খাইয়েছিলেন। তা সে যে খাওয়া নয়, একেবারে রাজকীয় খাওয়া।
ঈদের দিন সন্ধ্যায় কিংবা পরবর্তী শনি বা রোববারে সহকর্মী চীনাদের সাথে আরেকপ্রস্থ ঈদের খাওয়াদাওয়াও হয়ে যায় মাঝে মাঝে।
মাঝখানে এক ঈদ ম্যাকাওতে কাটিয়েছি। আর অনেক বছর পরে দুই ঈদ দেশে আব্বা আম্মার সাথে কাটিয়ে আরেক ঈদের দ্বারপ্রান্তে চীনের এখন মাটিতে।
এখানে চাঁদরাতে বাজে না "ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ", তিনপুরুষ একসাথে ঈদের জামাতে যাওয়া হয়না, আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবের সাথে ঈদের দেখা সাক্ষাৎ হয়না, আর সেই শৈশব কৈশোরের ঈদের হই-হুল্লোর হারিয়ে গেছে কবেই!
তবুও আমাদের প্রবাস জীবনে ঈদ আসে আনন্দ নিয়েই, হয়ত একটু ভিন্নরূপে। দেশে বিদেশে সবাইকে 'ঈদ মুবারক'।
লেখক:
প্রবাসী বাংলাদেশি।
ইমেইল: asadkhanbmj@yahoo.com
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |