লু্ঝৌ-এর তাপমাত্রা ৩-১০ সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে। তুষারপাত হয় না সাধারণত (বহু বছর পরে গতবছর কিছু তুষারপাত হয়েছিল অবশ্য)। চীনের শীতপ্রধান এলাকার মানুষগুলো যারা ২০ -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আছেন তারা মনে করেন লু্ঝৌ-এর এটা কোন শীতই না।
কিন্তু আর্দ্র আবহাওয়া, বাতাস আর নিয়মিত বৃষ্টি এই শীতেও খুব ভোগায়। আমাকে আরও বেশি ভোগাচ্ছে। গতমাসে ভিয়েতনামের হো চি মিন শহরে ছিলাম; সেখানে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি! অনেকটা উনুন থেকে বরফের মধ্যে পড়ার মত অবস্থা হয়েছে আমার।
আপাতত ক্ষণিকের অতিথি হিসেবে এখানে এসেছি। যে গবেষণাগারে কাজ করতে এসেছি, সেখানে প্রায় সবাই ছুটিতে চলে গেছে। চীনে এখন 'চৈনিক নববর্ষে'র ছুটি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকা। সামান্য কিছু বিদেশি ছাত্র আছে, বিশেষ করে যাদের দেশে যেতে বিমানভাড়া বেশি লাগে।
এই এক ব্যাপার। 'চৈনিক নববর্ষে' প্রায় সব বন্ধ থাকে। সবাই উৎসব করতে নিজের বাড়িতে চলে যায়। আমাদের দেশে যেমন দুই ঈদে মানুষজন ছোটে। ৭-৮ দিনের জন্য বাস, ট্যাক্সি, দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায় দুয়েকটা ছাড়া। আমাদের মত গরীব বিদেশি যারা প্রতি ছুটিতে দেশে যেতে পারেনা, তাদের জন্য এ সময়টা একটু বিরক্তিকর আর একঘেঁয়ে।
তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার সময়টা খারাপ যাচ্ছে না। বাংলাদেশি যে কয়জন আছেন, ওদের সাথে ঘোরাঘুরি করি, খাওয়া-দাওয়া করি, কোনদিন ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টন খেলি। তবে খেলতে গিয়ে মনে হয়, বয়স হয়েছে। এই আধবুড়ো বয়সে সব সয় না।
চৈনিক নববর্ষ সম্পর্কে কিছু বলি। আমাদের যেমন বাংলা নববর্ষ আছে, এদেরও তেমন। এদের দিন গণনা চান্দ্রমাসের ভিত্তিতে, আরবি দিনপঞ্জির মত। ইংরেজি দিনের হিসেবে প্রতিবছর তাই পরিবর্তিত হয়। এবারের চৈনিক নববর্ষ ২৮ জানুয়ারি। ২৭ তারিখ রাতে এদের উৎসব।
নববর্ষের এই উৎসবকে ওরা 'ছুন জিয়ে' বলে। ইংরেজিতে 'স্প্রিং ফেস্টিভাল'। চারদিকের সব দোকানপাট, বাজার, দাপ্তরিক এবং আবাসিক ভবন বিভিন্ন সাজে সজ্জিত। সাজের বৈচিত্র্য যতই থাক, লাল রঙের গোলাকৃতির লণ্ঠন থাকবেই। 'লাল রঙ' চীনে সর্বাধিক ব্যবহৃত। 'লাল রঙ' তাদের আনন্দ, শান্তি, সুখ ইত্যাদির প্রতীক।
নতুন বছরে 'মোরগ' তাদের সুখ সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসবে, এই প্রত্যাশায় সমস্ত চীনবাসী নববর্ষের রাতে নিজ পরিবারের সাথে মিলিত হবে। একসাথে খানাপিনা, সিংহনাচ, ড্রাগননাচ, বাহারি আতশবাজি আরও নানারকম উৎসবও হবে। বড়রা ছোটদের লাল রঙের খাম দেয় ইউয়ানসহ (চীনা মুদ্রা) উপহার হিসেবে, অনেকটা আমাদের দেশের ঈদ বকশিসের মত।
'চৈনিক নববর্ষ' বা 'স্প্রিং ফেস্টিভাল' এ বিশেষ এক অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়। অবশ্য আমি নিশ্চিত না, চীনের সবখানে একই রকম কি না, তবে আমি যে ৩-৪ টি শহরে থেকেছি, সেখানকার অভিজ্ঞতা একই রকম। প্রায় সব বিপণীকেন্দ্রে জিনিসপত্রের দাম অবিশ্বাস্যভাবে কমে যায়। উৎসব পার্বণে এদের জিনিসপত্রে বিশাল ছাড় দেখে আমাদের দেশের পূর্ব অভিজ্ঞতায় খুব অবাক হতে হয়।
আমার এক বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সে উত্তর দিল, "উৎসব সবার জন্য। যদি জিনিসপত্র সস্তায় না দেওয়া হয়, তবে অনেক গরীব মানুষই হয়ত উৎসব করতে পারবে না।"
চৈনিক নববর্ষ উপলক্ষে বেশ কয়েক দিন ধরেই শুরু হয়েছে 'শুভ কামনা' জানানো। সবাই সবাইকে জানায় 'শিন নিয়ান খুয়াই লা' (মানে, 'শুভ নববর্ষ')।
লেখক: চীন প্রবাসী
ছবি কৃতজ্ঞতা: মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |