এশিয়ার দীর্ঘতম নদীর পাড়ে

জন্ম হয়েছে আমার নদীর পাড়ের কোন এক গ্রাম্য কুটিরে। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে নদী-খাল-বিল দাপিয়ে। নদী-বিধৌত বাংলার মানুষ বলেই বোধহয় নদীর সাথে এক প্রকার আত্মার টান।

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান, চীনের লুঝৌ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2017, 03:27 AM
Updated : 10 April 2017, 03:27 AM

দেশে-বিদেশে যেখানেই যাওয়া হয়েছে, সে এলাকার নদীগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছি। তা সে আমাদের দেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ হোক, কিংবা চাংশার 'শিয়াং', ম্যকাও-এর 'পার্ল', হো চি মিনের 'সাইগন'বা 'মেকং', ফিলাডেলফিয়ার  'দেলাভার', ওয়াশিংটনের 'পোটোম্যাক'।

যে নদীই হোক না কেন, সব নদীই আমাকে মুগ্ধ করেছে। নীল, শাত-এল-আরব, আমাজন, টেমস, রাইন, ভলগা, দানিয়ুব, কলোরাডো, মিসিসিপি, গাম্বিয়া, কঙ্গো, হোয়াংহা, সিন্ধুর কথা  বইয়ে পড়ে চোখে দেখার ইচ্ছে মনের কোণে এখনও আছে।

প্রথম যখন লুঝৌ শহরের নাম শুনি, ম্যাপ দেখে খুশি হলাম। বাহ! পৃথিবীখ্যাত নদীতীরের এক শহরে কাজ করব! ভাবতেই বেশ ভালো লাগল। এশিয়ার দীর্ঘতম নদী 'ইয়াংজে'। আর সমস্ত পৃথিবীতে তৃতীয়। চীনারা একে 'ছাংজিয়াং'-ই বেশি বলে। ছোটবেলায় বাংলা বইয়ে আমরা 'ইয়াংশি' উচ্চারণ পড়েছিলাম। এই 'ইয়াংজে' আর 'থুও' নদীর সঙ্গমস্থলের ছোট সবুজ শহর লুঝৌ।

তিব্বত-সিংহাই এর টাংলা পর্বতে জন্ম নিয়ে সিচুয়ান, ইউনান, ছংছিং, হুনান, হুবেই, জিয়াংসি, আনহুই, জিয়াংসু প্রদেশ চুমে সাংহাই হয়ে পূর্ব চীন সাগরে মিলিত হয়েছে 'ইয়াংজে'। এই দীর্ঘ ভ্রমণে সে পাড়ি দিয়েছে প্রায় ৪ হাজার মাইল! পূর্ব থেকে পশ্চিম, দক্ষিণ থেকে মধ্য চীনের প্রকৃতি, পরিবেশ, কৃষি, অর্থনীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা- সব কিছুই ইয়াংজে নদীর উপর নির্ভরশীল।

দীর্ঘপথে নদী সবসময় একই রকম নয়। কোথাও বেশি চওড়া, কোথাও অল্প চওড়া, কোথাও সুগভীর, কোথাও স্বল্প গভীর, কোথাও দু'দিকে সমতল ভূমি রেখে সে পাড়ি দিয়েছে পথ। আবার কোথাও দু'দিকে সু-উচ্চ পর্বতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা বয়ে চলা তীব্র স্রোতস্বিনী সে। বিচিত্র প্রকৃতিতে বিভিন্ন ঋতুতে সে বিচিত্র রূপ ধারণ করে।

লুঝৌ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইয়াংজের অংশটুকু অনেকটাই জৌলুশহীন। নদী এখানে খুব বেশি চওড়া নয়। শহর সংলগ্ন যে ক'টি সেতু নদী পাড় হয়েছে, সেগুলো এক-দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ মাত্র। তারপরও এই জৌলুশহীন নদী আমাকে খুব টানে। এ যে সুবিশাল এক নদীর অংশ মাত্র।

বর্ষার সময়ে এখানকার ইয়াংজে তীব্র আকার ধারণ করে। নদীর পাড়ে গেলে তীব্র শোঁ শোঁ আওয়াজ সমুদ্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। আবার শীতের শুকনো মৌসুমে নদীর বিস্তীর্ণ পাথুরে ভূমি অনেকটাই পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে আসে।

মাঝে মাঝেই নদীর পাড়ে চলে আসি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দৌড়াদৌড়ি করে, বয়স্করা শরীর চর্চা করে কিংবা গল্প করে সময় কাটায়। কিছুক্ষণ পর পরই নদীতে দেখা যায়, পণ্যবাহী 'কার্গো' জাহাজ। অথবা লুঝৌ বিমানবন্দরে অবতরণের আগে নদীর ওপর বিমানের শেষ চক্কর। কখনও ছোট নৌকাও দেখা যায়, হয়তো মাছ ধরার। তীরে নোঙ্গর করা আছে বেশ কয়েকটি ভাসমান খাবার ঘর।

গত তিন বছরে কত ছোট ছোট স্মৃতি, কথা জমেছে এই নদী নিয়ে! আগামীতে আরও কত কথা, গল্প হয়তো তৈরি হবে এই নদীর সাথে। আমার চৈনিক জীবনে ইয়াংজে নদী যে একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে!

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: asadkhanbmj@yahoo.com

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!