সারা সপ্তাহ কাজের মাঝে নাক-মুখ-মাথা ডুবিয়ে রেখে ছুটির দিনে কোথাও না বেড়িয়ে এলে কেমন যেন ভালো লাগে না। তো এরকম দু’টো সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাংলাদেশি ছাত্রদের তিন-চারজন নিয়ে ঘুরে এলাম মনোমুগ্ধকর দু’টো জায়গা থেকে। তাদের পরিচিত করিয়ে দিতেই এই সামান্য লেখাটুকুর অবতারণা।
দিন কতক আগে একজন জানালো, না’সিতে এখন ফুল ফুটেছে। গেলাম গত সপ্তাহান্তে। গিয়ে দেখি জানুয়ারির সেই চেহারা আর নেই। যদিও এখানে এখনও বেশ শীত এবং বসন্ত আসতে আরও মাসখানেক দেরি। ‘হুয়া থিয়ান জিউ দি’র প্রকৃতি কিন্তু তা বলে না। বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্যই বোধহয় এখানকার শীত রঙের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এ যেন এক ফুলের রাজ্য!
সমস্ত উপত্যকা জুড়ে ফুল ফুটেছে। হাজারও রকমের, হরেক রঙের। ফুল দেখতে খুব ভালো লাগে, কিন্তু শনাক্ত করতে পারি না বললেই চলে। তবুও কয়েক রকমের গোলাপ, গাঁদা আর টিউলিপ চিনতে পারলাম।
এসব জায়গায় এত মানুষের ভীড়ে মাঝে মাঝে আমাদের একটু অসুবিধায় পড়তে হয়। একসাথে অনেকে ছেঁকে ধরে তাদের সাথে ছবি তোলার জন্য। কী আর করা! আবদার মেটাতে হয়। আমাদের ছেলেগুলোর চোখের দিকে তাকালে তখন ‘সেলিব্রেটি’ হওয়ার আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
ফুল খুব সুন্দর জিনিস। চোখ দিয়ে তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়। বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। তার চেয়ে ভালো ফুলে সাজানো ‘হুয়া থিয়ান জিউ দি’ উপত্যকার কিছু ছবি দিয়ে দেই পাঠকদের জন্য। আর আমি বরং চলে যাই পরীদের পাহাড়ের কথায়।
‘পরীদের পাহাড়’! সে আবার কী জিনিস? এ প্রশ্নটাই মাথায় আসল। চীনা নাম ‘থিয়ান সিয়ান দং’ ইংরেজিতে লেখা আছে ‘ফেয়ারি কেইভ’। না’সি থেকে ইবিনের উলটো দিকে বাস রাস্তায় ঘণ্টাখানেকের পথ পেরিয়ে এই পরীদের গুহা সম্বলিত পাহাড়ে যাওয়া যায়।
‘থিয়ান সিয়ান’ পাহাড় বেশি বড় নয়। কিন্তু লাল পাথরের দেয়াল কেটে করা সরু রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে যেতে কী এক ভালোলাগার অনুভুতি হয়! কখনও সরু সিঁড়ি বেয়ে উঁচুতে, কখনও নিচুতে নামতে হয় এগোতে গেলে। অদ্ভুত নিস্তব্ধ চারদিক!
শিল্পী মান্নাদে’র কণ্ঠে একটা গান শুনতে বেশ ভাল লাগে।
‘ফুল পাখি বন্ধু আমার ছিল,
আর মেঘ নদী বন্ধু আমার ছিল
চাঁদ তারা বন্ধু আমার ছিল,
আর ঝরনা-পাহাড় বন্ধু আমার ছিল।
তারা কোথায় গেল, কোথায় হারিয়ে গেল।’
আমাদের জীবন থেকে প্রকৃতি হারিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। হায়, এত বিচিত্র আর রঙিন প্রকৃতি আমাদের বেশিরভাগকে আর এখন টানে না! মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক সামান্য একটু ঘোরাঘুরি করে প্রকৃতির কোলে কাটানো সময়টুকুকে তাই জীবনের একেকটা মূল্যবান খণ্ড বলেই আমার মনে হয়।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি।
ইমেইল: asadkhanbmj@yahoo.com
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |