ভালো থাকুক আমাদের প্রিয় শিক্ষকেরা

দু'সপ্তাহ আগে ফ্যাকাল্টি ডিনের একটা ইমেইল আমন্ত্রণপত্র পেলাম। ২০ নভেম্বর ভিয়েতনামে 'টিচার্স ডে' (শিক্ষক দিবস)।

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান , ভিয়েতনামের হো চি মিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2016, 09:56 AM
Updated : 21 Nov 2016, 10:32 AM

দিবসটি উপলক্ষে ১৯ নভম্বর 'টন ডুক থাং বিশ্ববিদ্যালয়ে' কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে অংশ নেয়ার অনুরোধ ছিল ওই ইমেইলে। 

উইকিপিডিয়া ঘেটে দেখলাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে এই দিবস পালন করা হয়। যেমন ধরুন, বাংলাদেশে ৫ অক্টোবর, চীনে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ। 

আমি আমার ছাত্রাবস্থায় 'টিচার্স ডে' পালনের তেমন রেওয়াজ বাংলাদেশে দেখিনি। এখন হয় কিনা আমার জানা নেই। পাশ্চাত্য দেশে কিভাবে পালন হয় সে সম্বন্ধেও আমার ধারণা নেই তেমন একটা। তবে পূর্ব এশিয়ার দেশে, বিশেষ করে চীনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে 'টিচার্স ডে' পালন করা হয়, সেটা দেখেছি। সেখানে শিক্ষার্থীরা খুব আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে তাদের শিক্ষকদের বিভিন্ন উপহার আর ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। 

'শিক্ষক' পরিচয়ে ভিয়েতনামে এই প্রথম। তাই এদের শিক্ষক দিবস পালনের প্রস্তুতি একটু অবাক হয়েই লক্ষ করছিলাম। এক সপ্তাহ আগে থেকে আন্তঃঅনুষদ খেলাধুলা শুরু হল। বিভাগীয় প্রধান জোর করে ফুটবলার হিসেবে আমার নাম লিখে দিলেন। কেন যেন তার মনে হয়েছে, আমি ফুটবল খেলার জন্য সম্পূর্ণ ফিট এবং ভালো খেলতে পারি। 

আমাদের বিভাগের প্রায় সবাই গবেষণা কাজে যতটুকু পারদর্শী, মাঠে তার ঠিক উল্টো। মাঠে নামার মত মানুষই নাই। জোড়াতালি দিয়েও সাত জন হয়না (পাঁচ জন করে এক দলে, দুই জন অতিরিক্ত)। অগত্যা অনুরোধের ঢেকি গিলে একদিন মাত্র ২০ মিনিটের অনুশীলনকে সম্বল করে খেলতে নেমে যেতে হল। এই বুড়ো হাড়ে সে কি আর সয়! তবে আনন্দ হল বেশ।

'টিচার্স ডে'র বিশেষ অনুষ্ঠান শুরু হল ১৯ নভেম্বর সকাল ৮টায়। শুরুতেই শিক্ষকদের মিনি-ম্যারাথন, দড়ি টানাটানি খেলা আর হ্রদের পানিতে মাছ ধরা। তারপর আরো বিচিত্র সব অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা (ইনডোর গেমস)। তরুণ থেকে মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ সব বয়সী শিক্ষকরাই যেন শিশু হয়ে গেলেন এদিন।

মজার ব্যাপার হল, এ সমস্ত প্রতিযোগিতার আয়োজনে এবং বিচারকের দায়িত্বে প্রায় সবাই ছাত্র-ছাত্রী। খেলার নিয়মকানুনে একটু এদিক সেদিক হয়ে গেলে এরা আবার শাসন আর বকাঝকাও করে! তবে সে বকাঝকার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে 'শ্রদ্ধা' মিশ্রিত থাকে। 

দুপুরের খাওয়ার পরে একটু বিশ্রাম নিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হল মিলনায়তনে। সকল শিক্ষকদের ফুল আর চমৎকার নকশা করা শুভেচ্ছাপত্র দিয়ে অভিবাদন জানালো শিক্ষার্থীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে সাথে তারা প্রদর্শন করলো বিভিন্ন বিভাগীয় শিক্ষা আর উন্নয়ন কার্যক্রম। ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সাহেবের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষকদের জন্য শুভেচ্ছা বক্তৃতা।

খুব বেশি ভালো লাগল দুটো বিষয় দেখে। এক হলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা অবসর নিয়ে চলে গেছেন বেশ আগেই, তাদেরও নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল এবং বিশেষভাবে তাদের সম্মানিত করা হয়েছিল। আর দুই, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যারা চলে গিয়েছে, সেই পুরোনো শিক্ষার্থীদের অনেকেও এসেছে বিশেষ এই দিনে শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন করতে।

কোন এক ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চ্যানেলের মাইক্রোফোন আর ক্যামেরার সামনে আমাকেও দুটো কথা বলিয়ে নিল এখানকার 'টিচার্স ডে' পালন সম্পর্কে ভিনদেশী শিক্ষকদের অনুভূতি জানার ছুতোয়। সন্ধ্যায় বাহারী খাবার দিয়ে সাজানো 'গ্র্যান্ড বুফে ডিনার' দিয়ে শেষ হল দিনব্যাপী 'টিচার্স ডে'র অনুষ্ঠান। এর বাইরে ছিল বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের দেয়া ব্যক্তিগত উপহার আর শুভেচ্ছা। আমি অভিভূত! 

বছরের বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিবস পালন করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে এ নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ নেই। কিন্তু যে মহান শিক্ষকেরা সুশিক্ষা দিয়ে আমাদের জীবন তৈরি করে দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করে, কিংবা কিছু উপহারের মাধ্যমে তাদের খুশি করার এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে। অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই সমস্ত মহান শিক্ষকদের যারা তাদের শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা দিয়েছেন, মানবকল্যাণে উন্নত গবেষণা শিখিয়েছেন, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনুষ্যত্ব তৈরি করে আদর্শ সমাজ গড়ার চেষ্টা করেছেন। ভালো থাকুক আমাদের প্রিয় শিক্ষকেরা।

লেখকের কথা 

আমি লেখক নই। সাহিত্যজ্ঞানও শূন্যের কোটায়। বিজ্ঞানের ছাত্র। বৈচিত্র্যময় জীবনের নানা বাঁকের ছোট ছোট টুকরো কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে দিনপঞ্জিতে লিখি, এই আর কি। পড়াশোনা এবং জীবিকার তাগিদে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রবাসে। এই মুহূর্তে আছি ভিয়েতনামের হো চি মিনে। আমার অতি সাধারণ প্রবাস জীবনের সাধারণ কিছু টুকরো অভিজ্ঞতা, সাধারণ কিছু কথা বলার জন্যই এখানে লেখা। 

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি।