বাণিজ্যের প্রতি আকর্ষণ ছিল না। কিন্তু শৈশব থেকে সবসময় স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে আমিও দেশ-বিদেশে ঘুরব সমুদ্র পথে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় দেশ-বিদেশের কিছু অংশ আকাশপথে ঘোরা হলেও সমুদ্র ভ্রমণের ইচ্ছা তাই অপূর্ণই ছিল।
সময়ের প্রয়োজনে ম্যাকাও থাকতে হয়েছিল কিছুদিন। তখন দেখলাম, ম্যাকাও থেকে হংকং যাওয়া যায় সমুদ্রপথে। ব্যস, মনে হল এইতো সুযোগ!
পরিকল্পনা করলাম কোনও এক সাপ্তাহিক ছুটির দু'দিন হংকং-এ কাটিয়ে আসব। সেই সাথে শৈশবের স্বপ্ন সমুদ্রভ্রমণ।
কিছুক্ষণ পরপরই চোখে পড়ছিল ছোট ছোট দ্বীপ আর বিশালাকারের মালবাহী জাহাজ। ঠিক এক ঘণ্টায় হংকং উপকূলে পৌঁছে গেলাম। ইমিগ্রেশন পার হয়ে দেখতে বের হলাম হংকং, এশিয়ার অন্যতম উন্নত শহর।
পুরো হংকং মেট্রোরেল দিয়ে যুক্ত। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ। এছাড়া শহরের মধ্যে রয়েছে ট্রাম। আমি আসার আগে ‘অক্টোপাস’ নামের বিশেষ ধরণের কার্ড সংগ্রহ করেছিলাম, সেটা ১০০ হংকং ডলার খরচ করে ‘রিচার্জ’ করিয়ে নিলাম। এই কার্ড মেট্রো, ট্রাম, বাস এমনকি বিভিন্ন দোকানেও ব্যবহার করা যায়।
যারা হংকং এ ঘুরতে আসেন, তারা প্রায় সবাই এখানে একবার আসেন। হংকং-এর ‘স্কাই ভিউ’ দেখা শেষে গেলাম ‘আর্থ ভিউ’ দেখতে। শহরের একটা অংশ এমাথা-ওমাথা ঘুরে ফেললাম ট্রামে চেপে।
এক রাত থাকার জন্য ঠিক করেছিলাম ‘কোলুন’-এর একটা মোটেলে। এখানে এসে দেখি পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য বাংলাদেশি, আরবিয়, পাকিস্তানি, মালয়েশিয়, ভারতীয় লোকজন। আশেপাশে অনেক পরিচিত ধরনের খাবার দোকান, বিশেষ করে ‘সিম সা সুই’ স্টেশনের পাশে ‘চুংকিং’ ম্যানশনে। পাশেই ‘কোলুন’ মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টার।
মুগ্ধ হয়ে গেলাম মসজিদের বিশালতা, সৌন্দর্য এবং নিয়মিত নামাজে আসা মুসল্লিদের পরিমাণ দেখে। পাশেই ছেলে এবং মেয়েদের জন্য আলাদা দুটো মাদ্রাসা।
সন্ধ্যায় দুই পুরনো চীনা বন্ধুর সাথে খাওয়া-দাওয়া করলাম এক আরবিয় খাবার দোকানে।
তারপর আর কিছুক্ষণ ‘ভিক্টোরিয়া হার্বারে'র দিকে কাটিয়ে বেশ সুন্দর এক সন্ধ্যা শেষে রাতের আলো ঝলমলে হংকং দেখে মোটেলে ফিরলাম।
এক রুমে চারজন, সবাই সবার অপরিচিত- এ অভিজ্ঞতা এই প্রথম! কিন্তু কি আর করা! হংকং অসম্ভব রকমের ব্যয়বহুল।
দ্বিতীয় দিনের জন্য ঠিক করেছিলাম ‘আর্ট মিউজিয়াম’ আর ‘স্পেস মিউজিয়াম’ ঘুরে দেখব। কিন্তু হল না। নির্মাণ কাজের জন্য দুটোই বন্ধ।
‘সানি বে’ আর ‘টুংচুং’ এ অল্প কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে এসে যোহরের নামাজ শেষ করে খাওয়া-দাওয়া হল এক মালয়েশিয় খাবার দোকানে। এর আগে সকালের নাস্তা হয়েছিল আফগান পাঠানদের দোকানে। বেশ চমৎকার এদের খাওয়া-দাওয়া।
ফেরার টিকেট ছিল বিকাল সাড়ে পাঁচটায়। আড়াইটার মধ্যেই চলে এলাম। স্টেশনে এক মগ কফি শেষ করে ইমিগ্রেশন পার হয়ে দেখি তিনটার জাহাজ ঘাটে। আমার চীনা বন্ধু বলল, ‘এটাতেই চলে যাও’।
লেখকের কথা
আমি লেখক নই। সাহিত্যজ্ঞানও শূন্যের কোটায়। বিজ্ঞানের ছাত্র। বৈচিত্র্যময় জীবনের নানা বাঁকের ছোট ছোট টুকরো কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে দিনপঞ্জিতে লিখি, এই আর কি। পড়াশোনা এবং জীবিকার তাগিদে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রবাসে। এই মুহূর্তে আছি ভিয়েতনামের হো চি মিনে। মাঝে কিছু সময় কাটিয়েছি ম্যাকাওতে। তখন একবার ঘুরতে গিয়েছিলাম হংকং এ, সাগরপথে। সেই অভিজ্ঞতারই সংক্ষিপ্ত রূপ এখানে।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি