‘হংবাও’ মানে ‘লাল ব্যাগ’ বা ‘লাল প্যাকেট’ বা ‘লাল খাম’। লাল খাম অবশ্য খালি থাকে না। ভেতরে চকচকে ইউয়ান বা আরএমবি (চীনের মুদ্রা) থাকে। বলাই বাহুল্য, চীনে উপহার হিসেবে হংবাও-এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি।
এখনকার এই আধুনিক যুগে সবকিছু যখন হাতের নাগালে, তখন খুব কম মানুষই গৃহস্থালির জিনিসপত্র উপহার নিতে বা দিতে পছন্দ করে। তারচেয়ে বরং হংবাও পেলে নিজের খুশিমত কেনাকাটা করা যায়। আবার যিনি উপহার দিতে যাবেন, তার জন্যও সহজ। বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে জনে জনে হংবাও দেওয়া এখানকার ঐতিহ্য। ঠিক যেমন আমাদের দেশে ঈদ উৎসবে সালামী দেওয়া হয়।
অনেক আগে অবশ্য হংবাও-এর এত ব্যাপক প্রচলন ছিল না। হংবাও শুধু টেবিলের নিচ দিয়েই দেওয়া হত। ঘুষ হিসেবে। এটা এখন ঘুষ থেকে উপহারে চলে এসেছে। আবার কারো কারো উপহারের সংস্কৃতি ঘুষে চলে গেছে।
চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ‘কিউ কিউ’ আর ‘উইচ্যাট’ (চীনা ভাষায় এরা বলে ‘ওয়েইশিন’) সর্বত্র ব্যবহৃত। ফেসবুক এখানে অনুমোদিত নয়। উইচ্যাটের মাধ্যমে এদের সমস্ত কেনাবেচা, টাকাপয়সা লেনদেন করা যায়। হংবাও এখন তাই উইচ্যাটে।
আমি মাঝখানে দেড়-দুই বছর চীনে ছিলাম না। এবারে এসে এদের উইচ্যাটের ব্যাপক প্রসার দেখে ভিমড়ি খাওয়ার যোগাড়! যে কাউকে যে কোনো সময়ে এখন হংবাও উইচ্যাটে পাওয়া যায়। উইচ্যাটে একসাথে বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহকর্মী মিলে আড্ডা দেওয়া যায়। সেখানে কেউ চাইলে সবার মাঝে হংবাও বিতরণ করতে পারে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্রদের গল্প। তারা নিজেদের উইচ্যাট গ্রুপে গল্পগুজব করছে, আর সামান্য হংবাও বিনিময় করছে। তাদের সাথে তাদের ছাত্রাবাসের ‘আয়ি’ও আছেন (আয়িরা সাধারণত ছাত্রাবাস ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ইত্যাদির দায়িত্বে থাকেন)। দুষ্ট ছেলে দিপ্ত আবদার করে বসল, “আয়ি, হংবাও দেন।”
আয়ীও কম যান না! তিনি লাল রঙের ব্যাগের ছবি পোস্ট করে দিলেন। নে লাল ব্যাগ, হংবাও।
হংবাও শুধু যে বড়রা ছোটদের দেয় তা না, ছোটরাও বড়দের দেয়। সেখানে অবশ্য উদ্দেশ্য থাকে। কাউকে যদি দুই ইউয়ান উপহার দিয়ে একশ’ ইউয়ান ফেরত পাওয়া যায়, মন্দ কি?
মাস দুয়েক আগে চীনে নববর্ষ গেল। সেখানে জনে জনে হংবাও বিতরণের ছড়াছড়ি। সেই কবে কোন এক সময়ে পরিচয় হয়েছিল কারো সাথে। উইচ্যাট লিস্টে শুধু নাম আছে। স্মরণ করে হংবাও পাঠিয়ে দিয়েছে। আমিও চীনা, বাংলাদেশি, অন্যদেশি যাদেরকে সম্ভব, পাঠিয়ে দিয়েছি। পরিমাণ বড় কথা নয়। স্মরণ আর শুভেচ্ছা উপহার- এর মূল্য অনেক।
আরেক সহকর্মীর ছেলের উৎসব। বিশাল আয়োজন করেছে। আমরাও আমন্ত্রিত। সে এবং তার স্ত্রী পিঠে ইয়া বড় ঢাউস ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে আর অতিথিদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে। আমার পাশে বসা আমাদের পোস্টডকের অতি বুদ্ধি। সে বলল, নিশ্চয়ই হংবাও নেওয়ার জন্য এত বড় বড় ব্যাগ নিয়ে এসেছে। কথা অসত্য নয়। দুই-তিনশ অতিথিদের দেওয়া হংবাও বহন করতে ঢাউস আকারের ব্যাগ লাগে বৈকি!
যাই হোক, হংবাও চীনা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এখন। সবাই এটা পছন্দ করে। বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে সবার চোখ লাল রঙের এক খামের আশায় চকচক করে। তা সে চকচকে নোটসহ বাস্তবিক খাম হোক কিংবা উইচ্যাটের ‘ভার্চুয়াল’ খামই হোক। সবটাতেই ঠিক আছে।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল: asadkhanbmj@yahoo.com
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |