গাইবান্ধা-৫: চার প্রার্থী ও প্রশাসন তদন্ত কমিটিকে দিল বিপরীত ভাষ্য

তিন দিনে মোট ৬২২ জনের সাক্ষাতকার নিয়েছে তদন্ত কমিটি।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2022, 01:42 PM
Updated : 20 Oct 2022, 01:42 PM

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপ-নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে আসা নির্বাচন কমিশনের কমিটিকে চার প্রার্থী বলেছেন, ভোটের পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখেছেন। 

গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে তৃতীয় ও শেষ দিন বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির কাছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবারও স্থগিত ৫১ কেন্দ্রের বাইরের কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর আড়ইটা পর্যন্ত তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, সদস্য সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। কমিটি শুনানির জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্তত ৬৮৫ জনকে নোটিশ করেছিল।

তদন্ত কাজ শেষে কমিটির আহ্বায়ক অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তিন দিনব্যাপী তদন্ত কাজ আজ শেষ করলাম। এ কার্যক্রমে ৬৮৫ জনের সাক্ষাতকার নেওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছিল। তার মধ্যে কয়েকজন পোলিং এজেন্ট না আসায় ৬২২ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়।“

“এই পর্যবেক্ষণ-প্রতিবেদন আমরা নির্বাচন কমিশনে জমা দেব। কমিশন সেটা প্রকাশ করবেন; কি করবেন না, সেটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা কিছু বলবো না।”

১৩ অক্টোবর উপ-নির্বাচন চলার সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ইসি। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে পুরো উপ-নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচনের মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজনই ভোট বর্জন করেন।

এরপর ওইদিন বিকালে ভোট সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার দাবিতে দুই উপজেলা সদরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন।

তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাতকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের  তদন্ত কাজ শুরু করেছিল। সেদিন তারা মোট ১৪৬ জনের সাক্ষাৎ নেন। দ্বিতীয় দিন সাক্ষাতকার গ্রহণ করে সাঘাটা উপজেলা কমপ্লেক্সে; সেখানে মোট ৪৩০ জনের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। শেষ দিন ৪৬ জনের সাক্ষাতকার গ্রহণ করে এই কমিটি।

তৃতীয় দিন পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং ভোটের দিন কর্তব্যরত ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‌্যাবের কমান্ডিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের সাক্ষাতকার গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা ১৯ পুলিশ কর্মকর্তারও বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।

সাক্ষাতকার প্রদানের পর বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, “ভোটের পরিবেশ প্রার্থীদের অনুকূলে ছিল না। যার জন্য আমরা চারজন প্রার্থী একত্রিত হয়ে ভোট বর্জন করেছি। আমরা এসব কথাই তদন্ত কমিটিকে বলেছি।“

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন বন্ধ ও তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিবেন এমনটা আশা করি।”

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই উপ-নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন যদি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে হয়তো সব দলের অংশগ্রহণের একটা সম্ভাবনা দেখা দেবে। আমরা এসব কথাই তদন্ত কমিটিকে বলেছি।”

অপর দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ এবং সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের কাছে যা জানতে চেয়েছে তারা তাই জানিয়েছেন।

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, “এ আসনে মোট ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি যে কেন্দ্রগুলো রয়েছে, সেই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার জন্য আমি দাবি জানিয়েছি।“

তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাতকার দিয়ে এসে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ভোটগ্রহণের দিন কেন্দ্রগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিল তদন্ত কমিটি। আমরা সেদিন অনেকগুলো কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি, অনেকের সঙ্গে কথাও বলেছি। সেদিন কেউ কোনো অভিযোগ আমাদেরকে দেয়নি। আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ দেখেছি।”

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, “আমরা ফিজিক্যালি যে জায়গাগুলো দেখেছি সে জায়গাগুলোতে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চলছিল। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”

“নির্বাচনে আমাদের দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং কেউ যদি অভিযোগ দেয়, সেই ব্যাপারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু আমাদের কাছে সেদিন এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। সেই বিষয়গুলো আমরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছি।“

আরও পড়ুন:

গাইবান্ধা-৫: বিশৃঙ্খলার ভিডিও দেখিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: ইসির দিকে তাকিয়ে ভোটাররা

উপ-নির্বাচন নিয়ে গাইবান্ধায় তদন্ত শুরু আগামী সপ্তাহে

নিজের ভোটও দিতে পারিনি: গাইবান্ধার জাপা প্রার্থী

সিইসির নয়, গাইবান্ধার ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইসির: হাবিবুল আউয়াল

গাইবান্ধা প্রমাণ করেছে সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হয় না: ফখরুল

সিইসির পদত্যাগ চেয়ে গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, ফলের দাবি

গাইবান্ধায় ভোট স্থগিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, অন্যদের স্বস্তি

গাইবান্ধায় ভোট কেন স্থগিত হল, বুঝতে পারছেন না হানিফ

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন

ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে: সিইসি

গাইবান্ধায় ৪৪ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত

ভোট চলছে গাইবান্ধায়

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন: নৌকা ও লাঙ্গলে লড়াইয়ের আভাস

গাইবান্ধা-৫: ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি কে?

ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রিপন

Also Read: গাইবান্ধা-৫: বিশৃঙ্খলার ভিডিও দেখিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা

Also Read: গাইবান্ধা-৫: ভোটের দিনের কেন্দ্র পরিস্থিতি জানল তদন্ত কমিটি