গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন: নৌকা ও লাঙ্গলে লড়াইয়ের আভাস

সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 02:19 PM
Updated : 7 Oct 2022, 02:19 PM

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে।

আগামী ১২ অক্টোবর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৩ জুলাই সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।

“এব্যারক্যা ভোটোত কারো চা খাবার নই, ট্যাকা দিলেও নিব্যার নই, মিঠা কতাত ভুলব্যার নই। যোগ্য নোকোক ভোট দেমো। যাই সংসোদোত কতা কবার পাবে, হামারঘরে এলাকার কাম করবে, নদি ভাঙা বনদো করবে, তাকে ভোট দেমো।”

শুক্রবার বিকালে এভাবেই নিজের ভাষায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কালিরবাজারে একটি চায়ের দোকানে আড্ডায় কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান মিয়া (৭০)। তিনি ওই উপজেলার বুড়াইল গ্রামের বাসিন্দা।

আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপ-নির্বাচন। এ নির্বাচনী এলাকার হাট-বাজার ও চায়ের দোকানগুলো এখন ভোটের আলোচনায় সরগরম।

চায়ের দোকানে দোকানে আড্ডা ও আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন অনেকে। কেউ চা পান করছিলেন, কেউ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য ছুড়েছিলেন। তেমনি একটি দোকানে চা পানের ফাঁকে কথা বলছিলেন ফুলছড়ি উপজেলার ছালুয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি আবদুল সোবহান (৬০)।

তিনি বলেন, “হামার ঘরে নেতা ফজলে রাব্বী মরি গ্যাচে। তাঈ (তিনি) ডেপটি ইসপিক্যার (ডেপুটি স্পিকার) আচিলো। দ্যাশের সগ মানুস তাকে চিনছিল। এলাক্যার ম্যালা কামও করচে। হামার ঘরে আরেকযোন ফজলে রাব্বী বানান নাগবে। সেইজন্নে ভোটটা চিনতে করি দেওয়ান নাগবে।”

একই উপজেলার কালিরবাজার গ্রামের ব্যবসায়ী জিল্লুর মিয়া (৩৫) বলেন, এক সময় আসনটি জাতীয় পার্টির ছিল। এরপর আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন থেকে ক্ষমতায় আছে। উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে একটা পরিবর্তন হওয়া উচিত। বিষয়টি ভোটারদের ভাবা দরকার।

একই গ্রামের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম (৪০) বলেন, “এখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এ সময় বিরোধী দলে ভোট দিয়ে কী লাভ?”  

ফুলছড়ি উপজেলার পুর্বছালুয়া গ্রামের আবু মিয়া (৪৮) বলেন, “এ উপনির্বাচনে পাঁচ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে তিন জনই অতিথি পাখি। তাদের কেবল ভোটের সময় দেখা যায়। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা আর লাঙ্গলের মধ্যেই হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা দীর্ঘ সময় ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন, তাদেরকেই ভোট দেবো।”

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন জানান, তিনি পাঁচ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এ সুবাদে দুই উপজেলার তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে তার যথেষ্ট প্রভাব আছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছেন।

তিনি বলেন, “নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। এ প্রতীকে ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। আমি নির্বাচিত হলে গাইবান্ধার বালাসি থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত টানেল নির্মাণ ও ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থার উদ্যোগ নেবো।”

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, “লাঙ্গল প্রতীক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের। উপ-নির্বাচনে ভোটাররা এ প্রতীককে বিজয়ী করবেন বলে আমার বিশ্বাস।”

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব বলেন, উপ-নির্বাচনে পাঁচ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন, জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারা মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন। আগামী ১২ অক্টোবর উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে ভোট নেওয়া হবে।

এই আসনে স্বাধীনতার পর থেকে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে পাঁচবার জাতীয় পার্টি, চারবার আওয়ামী লীগ ও দুইবার বিএনপি জয়লাভ করেছে। 

১৯৭৩ সালে প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওয়ালিউর রহমান রেজা, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির রোস্তম আলী মোল্লা, ১৯৯৬ সালের (১৫ ফেব্রুয়ারি) ষষ্ঠ নির্বাচনে বিএনপির মতিউর রহমান এবং ২০০১ সালের অষ্টম নির্বাচনে বেগম রওশন এরশাদ জয়লাভ করেন।

এই আসনে ১১টি নির্বাচনের মধ্যে সাতবারই জয়লাভ করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদে যান। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন।

দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এই দায়িত্ব পালনকালেই বর্ণাঢ্য এই রাজনৈতিক নেতার জীবনাবসান হয়।

আরও পড়ুন:

Also Read: গাইবান্ধা-৫: ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি কে?

Also Read: ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রিপন