বৈঠকে চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ আনার বিষয়েও আলোচনা হয়।
Published : 20 Apr 2025, 11:28 PM
চীনের সঙ্গে কৃষি-বাণিজ্যের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য তিনি নিজ হাতে ‘একটি তাজা আমের ঝুড়ি’ পাঠাবেন।
রোববার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের অগ্রগতি ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়।
চীন সফরের সময় যেসব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে এসব পরিকল্পনার অগ্রগতি নিশ্চিত করা। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, মোমেন্টাম যেন হারিয়ে না যায়।”
বৈঠকে উভয়পক্ষ অবকাঠামো, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পে রূপ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হন।
চীনের রাষ্ট্রদূতও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এটি আমাদেরও শীর্ষ অগ্রাধিকার। চীনে যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, তার বাস্তবায়নের জন্য এখন অপেক্ষা নয়, আমরা দ্রুত চুক্তি কার্যকর করতে চাই।”
বৈঠকে মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে অঞ্চল দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এছাড়া চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা হয়। চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ প্রক্রিয়া চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই শেষ হবে।
চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের কথাও বৈঠকে উঠে আসে। তার সঙ্গে প্রায় ১০০ সদস্যের বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি দলও থাকবেন, যারা সম্ভাব্য বিনিয়োগ খাতগুলো ঘুরে দেখবেন।
এ উপলক্ষে চীনা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে একটি খাতভিত্তিক ‘মিনি ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানান বিডা চেয়ারম্যান।
স্বাস্থ্যখাতে চীন ১ হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এছাড়া চট্টগ্রামে একটি বিশেষ বার্ন ইউনিট স্থাপনেও চীনের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, কুনমিং–চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রোগীদের জন্য চিকিৎসা ভিসা দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেন তরুণরা চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে পারে।
তিস্তা নদীসহ সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি ৫০ বছর মেয়াদি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে উভয়পক্ষ সম্মত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা চীনে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং রেল ইঞ্জিন উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে চীনকে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
তিনি চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে লোকোমোটিভ তৈরির কেন্দ্র স্থাপন এবং সেখানকার জনবলের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রস্তাবও দেন।
কৃষিপণ্যের মধ্যে এই মৌসুম থেকেই বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানি শুরু করবে এবং আগামী বছর কাঁঠাল রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য আমি নিজ হাতে একটি তাজা আমের ঝুড়ি পাঠাব।”
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান, বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।