“ময়মনসিংহের এক ছেলে ফোন করে বলেছে আকরাম আর নেই। যুদ্ধে প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছে।”
Published : 20 Apr 2025, 10:47 AM
রাশিয়া গিয়ে ‘দালালের খপ্পরে পড়ে’ রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের এক যুবক। সেই যুদ্ধে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে।
শুক্রবার মোহাম্মদ আকরাম হোসেনের মৃত্যুর খবর আসে বলে তার বাবা মোরশেদ মিয়া জানিয়েছেন।
২৫ বছর বয়সী আকরামের বাড়ি আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামে। তার মৃত্যুর সংবাদে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতের স্বজনরা বলেন, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকরাম ছিলেন সবার বড়। সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে এক বছর আগে রাশিয়ায় পাড়ি জমানো আকরাম প্রথমে সেখানে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। বেতন খুব বেশি না পেলেও তার উপার্জনে পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিল।
এরইমধ্যে ‘দালালের প্রলোভনে পড়ে’ আড়াই মাস আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে চুক্তিভিত্তিক রুশ বাহিনীতে যোগ দেন আকরাম। যুদ্ধের পোশাক পরা একটি ছবি নিজের ফেইসবুকে পোস্টও করেছিলেন তিনি।
আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার পর চারমাস ছেলে কাজ করে ভাল বেতন পেয়েছিল। এরপর থেকে তার কাজ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়; খাবারও দেওয়া হত না। এর কিছুদিন পর আকরামসহ সাতজনকে মস্কোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের দুই বিলিয়ন টাকা ও রাশিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়ার ‘প্রলোভন দেখিয়ে’ রুশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করানো হয়।
তিনি বলেন, পরে তারা জানতে পারে, প্রতি জনকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এর ১৫ দিন পর ট্রেনিং দিয়ে তাদের ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। এরপর আকরামের মৃত্যু সংবাদ আসে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকরামের মা মবিনা বেগম বলেন, “গত ১৩ এপ্রিল ছেলে আমাকে ‘ভয়ের কথা’ বলেছিল। বলেছিল, ঘুম থেকে উঠে সময় করে আবার ফোন দেবে। কিন্তু আর ফোন আর দেয়নি। শুক্রবার ময়মনসিংহের এক ছেলে ফোন করে বলেছে আকরাম আর নেই। যুদ্ধে প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, “আকরামের পরিবারের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। আমি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরটা শুনেছি।”
আকরামের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।