দ্বিতীয় দিনে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি সাক্ষাতকার দিয়েছেন।
Published : 19 Oct 2022, 09:15 PM
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে অনিয়মের তদন্তে এসে দ্বিতীয় দিনে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির বক্তব্য শুনেছে নির্বাচন কমিশনের গঠিত কমিটি।
বুধবার সকাল ৯টায় সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সম্মেলন কক্ষে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তারা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য শুনেন।
এদিন অন্তত ৪০ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নওগাঁ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সাঘাটা থানার ওসির সাক্ষাতকার নেয় কমিটি।
এ ছাড়া সাঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা।
বিকালে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব সাংবাদিকদের বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দিনভর তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকালও এ কাজ চলবে।”
১৩ অক্টোবর উপ-নির্বাচন চলার সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ইসি। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে পুরো উপ-নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচনের মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজনই ভোট বর্জন করেন।
এরপর ওইদিন বিকালে ভোট সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার দাবিতে দুই উপজেলা সদরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। তারা মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিনে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে অন্তত ১৪০ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়।
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের পাঁচ প্রার্থীর বাড়িই সাঘাটা উপজেলায়। তাই বুধবারের তদন্তটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপচেপড়া ভীড় ছিল।
বিকালে সাক্ষাতকার দিয়ে আসা বেশ কয়েকজন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা ভোটের দিনের চিত্র জানতে চেয়েছেন তাদের কাছে।
সন্যাসদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও কামালেরপাড়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. মজিদুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, তদন্ত কমিটি তার কাছে ভোটের দিনে কেন্দ্রের প্রকৃত চিত্র জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, “ওই দিন আমার কেন্দ্রে তেমন কোনো অনিয়ম চোখে পড়ে নাই।”
বাঁশহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও জুমাবাড়ী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ জানান, তার কেন্দ্রের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ তাকে দেখানো হয় এবং এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
ফুয়াদ আরও বলেন, “আমি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছি, কিছু লোক গোপন কক্ষে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আমি ও সহকর্মীরা এসব প্রতিকারে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বেলা ১২টায় ভোট গ্রহণ বন্ধ করেন।”
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “এখনও আমাদের কার্যক্রম শেষ হয়নি। বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আবার বক্তব্য শুনব। সেখানে স্থগিত ঘোষিত কেন্দ্রগুলোর আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের আমরা ডেকেছি। আমরা তাদের সাক্ষাতকার নেব।”
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কী তথ্য পাওয়া গেছে জানতে চাইলে অশোক বলেন, “তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না। আমরা সাত কার্যদিবসের মধ্যেই প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দাখিল করবো।”
তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস ও মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
আরও পড়ুন:
গাইবান্ধা-৫: বিশৃঙ্খলার ভিডিও দেখিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: ইসির দিকে তাকিয়ে ভোটাররা
উপ-নির্বাচন নিয়ে গাইবান্ধায় তদন্ত শুরু আগামী সপ্তাহে
নিজের ভোটও দিতে পারিনি: গাইবান্ধার জাপা প্রার্থী
সিইসির নয়, গাইবান্ধার ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইসির: হাবিবুল আউয়াল
গাইবান্ধা প্রমাণ করেছে সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হয় না: ফখরুল
সিইসির পদত্যাগ চেয়ে গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, ফলের দাবি
গাইবান্ধায় ভোট স্থগিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, অন্যদের স্বস্তি
গাইবান্ধায় ভোট কেন স্থগিত হল, বুঝতে পারছেন না হানিফ
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন
ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে: সিইসি
গাইবান্ধায় ৪৪ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত
গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন: নৌকা ও লাঙ্গলে লড়াইয়ের আভাস