নিজের ভোটও দিতে পারিনি: গাইবান্ধার জাপা প্রার্থী

কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন লাঙ্গলের এজেন্টরাও।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2022, 03:58 PM
Updated : 13 Oct 2022, 03:58 PM

ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও ইভিএম মেশিন অকেজো হয়ে যাওয়ায় নিজে ভোটাধিকার প্রয়োগ না করেই ফিরে এসেছেন বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু।

‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায়’ উপ-নির্বাচন বন্ধের একদিন বাদে বিরোধী দলের এই প্রার্থী বলেন,“আমি আমার ভোট দেওয়ার জন্য সকালে কাজী আজাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমার বুথে প্রচুর লোকজন। কে ভোটার, কে এজেন্ট, কে নির্বাচন কর্মকর্তা তা বোঝার কোনো উপায় নেই। বুথে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সেখানে ভোট দেওয়ার মতো কোনো পরিবেশও ছিল না।”

“তার ওপর দেখি ইভিএম মেশিন অচল হয়ে আছে। এসব দেখে আমি ভোট দিতে না পেরে বের হয়ে চলে আসি।”

বাইরে এসে সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বিষয়টি জানান বলে উল্লেখ করেন লাঙ্গল প্রতীকের এই প্রার্থী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা আদালত ভবনে বসে এসব অভিযোগ করেন পেশায় আইনজীবী গোলাম শহীদ রঞ্জু।

তিনি এদিন সকালে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের জামিন শুনানিতে অংশ নেন। পরে নিজের চেম্বারে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সেখানে উপ-নির্বাচনের বেশকিছু পোলিং এজেন্টও উপস্থিত ছিলেন।  

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১৪৫ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করছিল নির্বাচন কমিশন।

গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা দেখার পর বেলা ১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় অর্ধশত কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এরপর ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায়’ দুপুর আড়াইটার দিকে পুরো ভোটই স্থগিত করে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এর আগেই অবশ্য আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি চার প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরে নির্বাচন বন্ধের খবরে স্বস্তিও প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং তার দলের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবিও করা হয়েছে।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন। তিনি ভোট নেওয়া কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবিও করেন।

ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাপা প্রার্থী বলেন, “১৪৫টি কেন্দ্র থেকে আমার শতাধিক এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়। সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকরা নৌকা প্রতীক সম্বলিত টি-শার্ট গায়ে দিয়ে এসব ঘটনা ঘটান। এদের বেশিরভাগই বহিরাগত।”

“ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার পর নৌকার বহিরাগত কর্মীরা ওই ভোটারের সঙ্গে গোপন কক্ষে ঢুকে ভোটারকে নৌকা প্রতীকে মারতে বাধ্য করেন।”

কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ এজেন্টদের

সাঘাটা উপজেলার বেড়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে লাঙ্গলের এজেন্ট ছিলেন মিজানুর রহমান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভোট গ্রহণের শুরুতে তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় নৌকার কর্মীরা। পরে কেন্দ্রে কোনো ভোটার এলে তার আঙুলের ছাপ নিয়ে তাদের মনমতো মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করেন তারা।

তিনি আরও বলেন, তবে ওইসব কর্মীদের তিনি চিনেন না। তারা বহিরাগত। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

একই কেন্দ্রের অন্য একটি বুথের জাপার পোলিং এজেন্ট শাহজাহান মিয়া বলেন, এ কেন্দ্রে লাঙ্গলের চারজন এজেন্ট দেওয়া হয়। সবাইকে নৌকার বহিরাগত কর্মীরা কেন্দ্রের কক্ষ থেকে বের করে দেন।

ওই কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

একই উপজেলার গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের লাঙ্গলের এজেন্ট জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, তিনিসহ আটজন এ কেন্দ্রে লাঙ্গলের এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু ভোট শুরুর আধা ঘণ্টা পর নৌকার কর্মীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। বিষয়টি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশকে জানিয়ে কোনো কাজ হয়নি।

এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন বলেন, তাকে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি জাপার এজেন্টদের কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ কক্ষে ফিরিয়ে আনেন।

স্থগিত হওয়া কেন্দ্র সাঘাটার ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন বলেন, তার কেন্দ্রে নৌকার একজন এজেন্ট দুটি বুথে প্রভাব খাটিয়ে ভোট নিচ্ছিলেন। এমন দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ স্থগিতের নির্দেশ দেন। তবে ওই এজেন্টের নাম-পরিচয় তিনি বলতে পারেননি। পরে তিনি ভোট গ্রহণ কক্ষে গিয়ে দেখেন ওই এজেন্ট নেই।

ফুলছড়ি উপজেলার রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শাহান বলেন, “বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কে বা কারা কেন্দ্র থেকে লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্টদেরকে বের করে দেয়। এই বিষয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় সিইসি দেখতে পান। এ কারণে নির্বাচন কমিশন ঢাকা থেকে নির্দেশ দেন ভোট গ্রহণ স্থগিত করতে।”

প্রশাসনকে জানাননি কেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, তিনি তখন নিচতলায় অবস্থান করছিলেন। উপরতলায় উঠে খোঁজ নিতে যাওয়ার সময় ভোট গ্রহণ বন্ধের নির্দেশ আসে। পরে তিনি পোলিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পান। তবে তাদেরকে তিনি চিনেন না।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, তার কোনো কর্মী বা সমর্থক জাপা ও অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়নি এবং বাধাও দেয়নি। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

নৌকার প্রার্থী আরও বলেন, “এই উপ-নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তারা কারও কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। অথচ বাস্তবসম্মত যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন উপ-নির্বাচন বন্ধ করে। যা সাধারণ ভোটারদের হতবাক করেছে।”

তিনি স্থগিত করা কেন্দ্র বাদে বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান।

উপ-নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ তিনি অসংখ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। যেসব কেন্দ্র দেখেছেন, সেসব কেন্দ্রের ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ছিল। কোনো ধরনের সমস্যা দেখেননি। এ সময় অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, তখন কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখেছেন। কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা কিংবা প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তাদের কাছে কেউ করেননি।  

আরও পড়ুন:

গাইবান্ধা প্রমাণ করেছে সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হয় না: ফখরুল

সিইসির পদত্যাগ চেয়ে গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, ফলের দাবি

গাইবান্ধায় ভোট স্থগিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, অন্যদের স্বস্তি

ভোট স্থগিতের ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণ নেই: নৌকার প্রার্থী

গাইবান্ধায় ভোট কেন স্থগিত হল, বুঝতে পারছেন না হানিফ

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন

ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে: সিইসি

গাইবান্ধায় ৪৪ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত

ভোট চলছে গাইবান্ধায়

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন: নৌকা ও লাঙ্গলে লড়াইয়ের আভাস

গাইবান্ধা-৫: ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি কে?

ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রিপন