সিইসি ভোট বন্ধের আগেই চার প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলেন।
Published : 12 Oct 2022, 10:55 PM
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ হলেও অন্য চার প্রার্থী স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায়’ বুধবার দুপুরে ভোট স্থগিত করার পর বিকালে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বিকেল ৪টার দিকে বোনারপাড়ার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চত্বরে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করেন নৌকা সমর্থকরা। পরে এক সঙ্গে হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাঘাটা-বোনারপাড়া সড়কের চৌমাথা মোড়ে অবস্থান নেয় নেতা-কর্মীরা। সেখানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়েও প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা।
এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন সব যাচাই-বাছাই না করে এই ভোট বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে বিকেল ৩টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজের নেতৃত্বে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় বিক্ষুব্ধরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পরিষদের সামনে রাস্তায় এসে অবস্থান নেয়। পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, উদাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম ও শহিদুল ইসলাম, উদাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহদী মাসুদ।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তারপরও নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ভোট বন্ধ করাটাকে মেনে নেওয়া যায় না। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত ছিল।”
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১৪৫ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করছিল নির্বাচন কমিশন। সবগুলো কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ঢাকার নির্বাচন ভবনে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল কেন্দ্রের পরিস্থিতি।
গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা সরাসরি দেখার পর বেলা ১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় অর্ধশত কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। অনেক কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
পরে বেলা সোয়া ২টার দিকে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রধান নির্বাচন কশিমনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় আমরা পরিশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি… সমগ্র নির্বাচনী এলাকা, গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনী এলাকার ভোট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে (রিটার্নিং কর্মকর্তাকে)। ওখানে এখন আর ভোট হচ্ছে না।”
তার আগেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাঘাটা উপজেলার বগেরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি চার প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভোট বর্জন করা প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টি মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নাহিদুজ্জামান নাহিদ ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
পরে ভোট বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, “এটি একটি প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনের ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানাই ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
“একই সঙ্গে নতুন তফসিল ঘোষণা করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানাই যেন ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।”
আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ বলেন, “একটি ভোট কেন্দ্রেও আমার প্রতীকের এজেন্টদেরকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঢুকতে দেয়নি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে আপেল মার্কার ভোটারের আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর তাদের ভোট মারা হয়েছে নৌকা মার্কায়। এসব কারণে আমি ভোট বর্জন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন এই জালিয়াতির ভোট বন্ধ করে একটি বাস্তসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।”
আরও পড়ুন:
ভোট স্থগিতের ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণ নেই: নৌকার প্রার্থী
গাইবান্ধায় ভোট কেন স্থগিত হল, বুঝতে পারছেন না হানিফ
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন
ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে: সিইসি