সিইসির পদত্যাগ চেয়ে গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, ফলের দাবি

বুধবারের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও সাঘাটা ও ফুলছড়িতে বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা।  

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2022, 11:23 AM
Updated : 13 Oct 2022, 11:23 AM

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবির পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগও চেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ভোট গ্রহণ চলার মাঝখানে উপ-নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার একদিন পর বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকা সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজ।

মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা টায়ার জ্বালিয়ে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে সড়কের দুই পাশের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান, গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান, উদাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম ও শহিদুল ইসলাম।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, “বুধবার সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করার মতো কোনো কারণও নেই। তারপরও কেন নির্বাচন বন্ধ করা হলো তা স্পষ্ট নয়।”

তিনি আরও বলেন, মোট ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টি কেন্দ্রের ভোট দুপুর ১টার দিকে স্থগিত করা হয়। বাকি ৯৪টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, এই কেন্দ্রগুলোর ফলাফল অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১৪৫ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করছিল নির্বাচন কমিশন। সবগুলো কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ঢাকার নির্বাচন ভবনে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল কেন্দ্রের পরিস্থিতি।

গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা সরাসরি দেখার পর বেলা ১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় অর্ধশত কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। অনেক কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

পরে বেলা সোয়া ২টার দিকে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রধান নির্বাচন কশিমনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় আমরা পরিশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি… সমগ্র নির্বাচনী এলাকা, গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনী এলাকার ভোট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে (রিটার্নিং কর্মকর্তাকে)। ওখানে এখন আর ভোট হচ্ছে না।”

এরপরই ‘ভোট বন্ধের যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখতে না পেয়ে’ বিক্ষোভে নামেন নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ হয় ফুলছড়ির পাশাপাশি সাঘাটা উপজেলায়।  

দুপুর ১২টার দিকে বোনারপাড়ার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তব্য দেন, সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামশীল আরেফিন টিটু, সাধারণ সম্পাদক নাছিরুল আলম স্বপন, বোনারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান কবির।

বক্তারা বলেন, এই উপ-নির্বাচনে ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে প্রায় সারাদিন ভোট দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অথচ অজ্ঞাত কারণে কমিশন উপ-নির্বাচন বন্ধ করার ঘোষণা দেয়।

বক্তারা আরও বলেন, এটা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এতে সাধারণ ভোটাররা হতাশ হয়েছেন। তাই ভোট সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রগুলোর ফলাফল অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।

এ আসনের উপ-নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন (নৌকা), জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু (লাঙ্গল), বিকল্পধারা মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম (কুলা), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) এবং সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ট্রাক)।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাঘাটা উপজেলার বগেরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি চার প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

পরে ভোট বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, “এটি একটি প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনের ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানাই ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

“একই সঙ্গে নতুন তফসিল ঘোষণা করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানাই যেন ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।”

যদিও ‘যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই’ নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোট স্থগিত করেছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন।

তিনি আরও বলেন, “কোনো বাস্তবসম্মত যুক্তিগত কারণ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন প্রথমে বেশ কিছু কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। পরে বেলা আড়াইটার দিকে অজ্ঞাত কারণে নির্বাচন কমিশন পুরো আসনের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে।”

“যা সাধারণ ভোটারদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। 

আরও পড়ুন:

গাইবান্ধায় ভোট স্থগিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, অন্যদের স্বস্তি

ভোট স্থগিতের ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণ নেই: নৌকার প্রার্থী

গাইবান্ধায় ভোট কেন স্থগিত হল, বুঝতে পারছেন না হানিফ

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন

ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে: সিইসি

গাইবান্ধায় ৪৪ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত

ভোট চলছে গাইবান্ধায়