মঙ্গলবার প্রথম দিনে ১৪০ জনের বক্তব্য শুনেছে তদন্ত কমিটি।
Published : 18 Oct 2022, 08:27 PM
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপ-নির্বাচনে অনিয়মের তদন্তে প্রথম দিনে ১৪০ জনের বক্তব্য শুনেছে নির্বাচন কমিশনের তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় গাইবান্ধা সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরুর পর তা শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। তিন দিনে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্তত ৬৮৫ জনের সাক্ষাতকার নিতে চায় কমিটি।
তদন্তের প্রথম দিনে ফুলছড়ি উপজেলায় কর্তব্যরত ১৪০ জনের বক্তব্য গ্রহণ করা হয় বলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান।
তিনি বলেন, “ফুলছড়ি উপজেলার ১১টি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়েছি। ভিডিওচিত্র দেখিয়ে তাদের সঙ্গে রিলেটেড বিষয়গুলো জানতে চেয়েছি।”
১৩ অক্টোবর উপনির্বাচন চলার সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ইসি। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে পুরো উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচনের মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজনই ভোট বর্জন করেন।
এরপর ওইদিন বিকালে ভোট সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার দাবিতে দুই উপজেলা সদরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। তারা মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করেছে।
এদিন ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন, সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল সোবহান, ফুলছড়ি থানার ওসি মো. কাওসার আলী, ১১ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৬৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রার্থীদের ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট এবং ফুলছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বুড়াইল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মো. ওয়াহেদুজ্জামান প্রধান তদন্ত কমিটির কাছে তার বক্তব্য উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তার কেন্দ্রের বিশৃঙ্খলার একটি ভিডিওচিত্র তাকে দেখানো হয়। পরে তদন্ত কমিটি জানতে চায়, এ রকম পরিস্থিতিতে তিনি কী করেছেন? তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
ফুলছড়ি উপজেলার মদনের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা নষ্ট থাকার কারণে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। তদন্ত কমিটি জানতে চায়, কারা এই ক্যামেরা নষ্ট করেছিল। উত্তরে তিনি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, ক্যামেরা কারা নষ্ট করেছে তা জানতে পারেননি।
বিকালে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “বুধবার আমরা সাঘাটা উপজেলায় যাব। সবমিলে আমরা যে নোটিশ করেছি তাতে ৬৮৫ জনের একটা তালিকা আছে। এই তালিকা হয়তো কিছু বেড়ে যেতে পারে। কারণ আমরা কারো বক্তব্য নেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কোনো নাম আসছে বা কোনো বিষয় আসছে কি-না দেখছি। এর চেয়ে বেশি আর কিছু এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।”
সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান অশোক কুমার।
ভোট চলাকালীন যারা বিশৃঙ্খলা করেছে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হল না কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার বলেন, এ বিষয়ে কমিশন বলতে পারবে। কেননা সব কিছু তো কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়। কমিশন সরাসরি দেখছে, কমিশন দেখেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস ও মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
আরও পড়ুন
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: ইসির দিকে তাকিয়ে ভোটাররা
উপ-নির্বাচন নিয়ে গাইবান্ধায় তদন্ত শুরু আগামী সপ্তাহে
নিজের ভোটও দিতে পারিনি: গাইবান্ধার জাপা প্রার্থী
সিইসির নয়, গাইবান্ধার ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইসির: হাবিবুল আউয়াল
গাইবান্ধা প্রমাণ করেছে সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হয় না: ফখরুল
সিইসির পদত্যাগ চেয়ে গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, ফলের দাবি
গাইবান্ধায় ভোট স্থগিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ, অন্যদের স্বস্তি
গাইবান্ধায় ভোট কেন স্থগিত হল, বুঝতে পারছেন না হানিফ
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন
ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে: সিইসি
গাইবান্ধায় ৪৪ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত
গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন: নৌকা ও লাঙ্গলে লড়াইয়ের আভাস