Published : 01 Feb 2024, 07:29 PM
গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় শীতের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন ময়দানে আগতরা। শামিয়ানা চুঁইয়ে পানি পড়ে অনেকের বিছানাপত্র ভিজে গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে মূল মঞ্চে মুরব্বিদের বয়না বন্ধ হয়ে যায়। সবাইকে ধৈর্য ধরে খিত্তায় অবস্থান করার কথা জানান আয়োজকরা।
ইজতেমায় আসা মানুষজন জানান, শুক্রবার ভোর থেকে ইজতেমার মূল বয়ান শুরু হবে। তার আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। পরে একটু ভারিও হয়। প্রায় ২৫ মিনিট ধরে এই বৃষ্টি চলে।
বৃষ্টিতেও ধৈর্য ধরে মাগরিবের নামাজের পর শুরু হওয়া মুরুব্বিদের বয়ান শুনছিলেন মানুষজন। শামিয়ানা চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে অনেকের বিছানাপত্র ভিজে যায়। ময়দানের কিছু জায়গায় বিশেষ করে যেখানে গর্ত রয়েছে এবং একটু নিচু জায়গায় পানি জমতেও দেখা গেছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যারা মূল ময়দানের শামিয়ানায় জায়গা পাননি তারা। অস্থায়ী তাঁবুতে প্রতিরোধের বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকের কাপড়-চোপড়ও ভিজে গেছেন। তখন অনেককে পলিথিন মুড়ে নিজেদের রক্ষা করতে দেখা যায়।
বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে যারা নিজদের রাতের খাবার রান্না করছিলেন তারা পড়েন ভোগান্তির মধ্যে। তারা দ্রুত চুলা নিভিয়ে রান্না করার মাছ, মাংস, তরকারি ও হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে ছুটেন ময়দানের প্যান্ডেলের দিকে।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি। চার দিন বিরতির পর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি।
ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের বৃষ্টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “প্রতিকূল পরিবেশে ধৈর্য ধারণ করাও ইমানের একটা অংশ।”
ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুর নূর বলেন, “হঠাৎ বৃষ্টির জন্য বাদ মাগরিবের পর শুরু হওয়া বয়ান নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করা হয়েছে।”
ইজতেমা ময়দানে আকরাম হোসেন বলেন, “আমরা বিকাল থেকে রান্নার আয়োজন করছিলাম। মাগরিবের নামাজের পর রান্না চুলায় বসানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে বাধা পড়ে গেল।”
একই কথা বলছিলেন ময়দানের ৭ নম্বর গেইটের পাশের রাস্তায় অবস্থান নেওয়া আবুল কালাম। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কয়েক দফায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যায় তার মাত্রা বেড়ে গেছে। দিনের বৃষ্টিতে ভোগান্তি না হলেও সন্ধ্যার বৃষ্টিতে ভোগান্তি বাড়বে।”
টঙ্গীর দত্তপাড়া থেকে আসা মো. ইসমাইল হোসেন (৫৫) বলেন, “সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাসার দিকে চলে যাচ্ছি। ময়দান থেকে বাসা কাছে হওয়ায় মালামাল রেখে চলে যাচ্ছি। বৃষ্টি কমলে আবার চলে আসব।”
কুমিল্লা সদর উপজেলার বাসিন্দা মো. রমিজ উদ্দিন বলেন, “আমাদের এলাকা থেকে মোট ১৬০ সাথী একসঙ্গে ইজতেমা ময়দানে আসছি। সব সফরসঙ্গীর মাল-সামানা নিয়ে দুদিন ধরেই ৩৮ নম্বর খিত্তায় আছি।
“বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বয়ান শুনছি। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু সবাই একসঙ্গে রয়েছি। বৃষ্টি এলেও বয়ান শুনা বন্ধ করিনি। বৃষ্টিও আল্লাহর রহমত।”
টাঙ্গাইল থেকে ইজতেমায় আসা জয়নাল আবেদীন বলেন, “সবই আল্লাহর ইচ্ছা। এটাও আমাদের পরীক্ষা। বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও কেউ কষ্টবোধ করেন না। বৃষ্টি যেন রহমত হিসেবে বর্ষিত হয়েছে।”
আরও পড়ুন:
ইজতেমা ময়দানে ঠাঁই নেই, সড়কেই পড়ছে তাঁবু
ইজতেমায় পলিথিন শিট আর প্লাস্টিকের বস্তার কদর, দামও বেশি
ইজতেমা: তুরাগ তীরের ঢল ময়দান ছাপিয়ে ভবনের ছাদে
দাঙ্গা-হাঙ্গামাকারীরা তাবলিগ জামাতের অনুসারী হতে পারে না: ধর্মমন্ত্রী
বিশ্ব ইজতেমা: শুরুর আগেই পূর্ণ ময়দান, মানুষ বসছে সড়কের পাশে
টঙ্গীতে ইজতেমায় আসা দুইজনের মৃত্যু
ইজতেমার প্রথম পর্ব: জোবায়ের পক্ষের অনুসারীরা আসছেন
ইজতেমা ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা নেই: র্যাব ডিজি
ইজতেমা ঘিরে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
ইজতেমা: গাড়ি পার্কিং ও চলাচলে পুলিশের নির্দেশনা
ইজতেমায় কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই: র্যাব
বিশ্ব ইজতেমা: পুলিশের একগুচ্ছ নির্দেশনা
ইজতেমা: শামিয়ানা অসম্পূর্ণ, আগতদের চট নিয়ে আসার পরামর্শ
এবার ইজতেমায় হকার বসতে পারবে না: পুলিশ
টঙ্গীতে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি, প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ
ইজতেমায় চলবে ১১ জোড়া বিশেষ ট্রেন