“সেতু নির্মাণের পর এক দিনের জন্যও যানবাহন এ পথে চলতে পারেনি। ”
Published : 30 Apr 2024, 09:35 AM
দুই পাশের কৃষিজমির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু; হঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন কৃষিজমি থেকে বেরিয়েছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতার মধ্যে ৩৪ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা সেতুটির নেই কোনো সংযোগ সড়ক; ফলে সেটি স্থানীয়দের কোনো কাজেই আসছে না।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনযায়ী, ২০১৮ সালের দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর কালীগঙ্গা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স এবং মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ।
দরপত্র অনুযায়ী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও, ওই সময়ের মধ্যেও শেষ হয়নি। ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কেটি ৬০ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “দুই বছর আগেই সেতু নির্মাণ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ঠিকাদার দুই পাশের সংযোগ সড়ক করতে পারছে না। “
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পাড়ে ৬৩০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ শতভাগ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ আটকে গেছে।
জমি ও স্থাপনার মালিকরা বলছেন, প্রায় দুই বছর ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। যদিও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ও প্রশাসন বলছে, দ্রুতই জমি অধিগ্রহণের জটিলতা শেষ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
সংযোগ সড়কের অভাবে আগের মতোই খেয়া নৌকা দিয়ে পার হচ্ছেন দুই পাড়ের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ। সেতুর দুই পাশে কোনো রাস্তা করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। দ্রুত জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ করে সেতুটি সচল করার দাবি তাদের।
বালিয়াবাধা গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, “সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা এবং অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ভূমি অধিগ্রহণ আর স্থাপনার ক্ষতিপূরণের টাকা দুই বছরেও বুঝে পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে না পাওয়ায় জমি ছাড়ছেন না তারা। প্রায় দুই বছর ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ”
আক্ষেপের সুরে হাবিবুর রহমান বলছিলেন, “সেতু নির্মাণের পর এক দিনের জন্যও যানবাহন এ পথে চলতে পারেনি। জনগণের আশা পূরণে সেতু নির্মাণ করলেও দুপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় সেতু ব্যবহারে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
সংযোগ সড়ক না হওয়ার কারণে জরুরি প্রয়োজনে জেলা শহরে যেতে হলে ১৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। সেতু নির্মাণের আগে ভূমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু করলে এমন বিড়ম্বনা হত না। সেতুটি চালু হলে ঘিওর উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। জমির মালিকদের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানাই। ”
বৈকুন্ঠপুর এলাকার মামুন হোসেন বলেন, “কালিগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক হলে আমাদের ইউনিয়নসহ ৪০-৫০ গ্রামের লোকজন যাতায়াতে সুবিধা পাবে। কৃষিপণ্য বিক্রিতেও তারা সুবিধা পাবে।
ঘিওরের সিংজুরী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মহিদুর রহমান বলেন, “সংযোগ সড়ক নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় দুই পারেরসহ লাখো মানুষ সেতুটি দিয়ে যাতায়াত সুবিধা পাচ্ছে না। ”
সেতু নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. মাসুদ মিয়া বলছেন, “কাজ শুরু করতে গেলে ভূমির মালিকরা বারবার আমাদের বাধা দিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এলজিইডি বিভাগ আমাদের জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেলে কাজ শেষ করতে আমাদের চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে। ”
অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়ার ভাষ্য। তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের মাঝে চেক বিতরণ সম্পন্ন হলেই ঠিকাদার দ্রুত কাজ শুরু করে দেবেন। ”
ভূমি অধিগ্রহণে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) এল এ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ বলেন, “জেলা প্রশাসক খুব দ্রুতই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ করবেন। ”