ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচের মতে, আগামী দুই বছরের মধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাবনাটাই পাগলামি।
Published : 18 Apr 2025, 10:54 AM
সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে ফুল ফুটবে, সকল ব্যথা রঙিন হয়ে গোলাপ হয়ে উঠবে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সেই ফুল যেন ফুটল। দুঃস্বপ্নের মৌসুমে, গৌরবময় ইতিহাসে গ্লানি জমা হওয়ার এই সময়েই তারা পেল অবিস্মরনীয় এক জয়ের দেখা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাদুকরি লেখনির মতোই, ব্যথা জুড়ানো গোলাপের সুবাস যেন!
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের কত নজিরই তো আছে ফুটবল ইতিহাসে। অভাবনীয় নাটকীয় ম্যাচও কম হয়নি যুগে যুগে। তবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যা করল, কল্পনার সর্বোচ্চ সীমাকেও যেন ছাড়িয়ে গেল তারা। লিঁওকে যেভাবে হারিয়ে ইউরোপা লিগের সেমি-ফাইনালে পা রাখল হুবেন আমুরির দল, রূপকথাও বুঝি এতটা রূপকথাময় হয় না!
ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে এই দুই দলের প্রথম লেগেও নাটক কম হয়নি। ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পথে থাকা সেই ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে গোল করে এগিয়ে যায় ইউনাইটেড। লিঁও সমতা ফেরায় যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে।
দ্বিতীয় লেগে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বৃহস্পতিবার প্রথমার্ধে ইউনাইটেড এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে ৭১ ও ৭৭তম মিনিটে দুটি গোলই ফিরিয়ে দেয় লিঁও। অতিরিক্ত সময়ে আরও দুটি গোল করে ফ্রান্সের দলটি এগিয়ে যায় ৪-২ ব্যবধানে। ১১৩ মিনিট পর্যন্ত সেটিই ছিল ম্যাচের ফল।
ইউনাইটেডের অকল্পনীয় ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প এরপরই। মিইয়ে পড়া আশা জেগে উঠল ১১৪তম মিনিটে ব্রুর্নো ফের্নান্দেসের পেনাল্টিতে। ১২০তম মিনিটে কবি মেইনু যখন সমতা ফেরালেন, সেটিই ছিল অসাধারণ প্রাপ্তি।
কে জানত, মহাকালের পাতায় জায়গা করে নেওয়ার অধ্যায় রচিত হতে চলেছে!
যোগ করা সময়ে হ্যারি ম্যাগুইয়ারের গোল ইউনাইটেডকে পৌঁছে দিল সেই সপ্তম স্বর্গে। ৫-৪ গোলের জয় আর ৭-৬ গোলের অগ্রগামিতায় ইউরোপার সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের সফলতম ক্লাব।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এবার তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা যত কম বলা যায়, ততই ভালো। রেকর্ড ২০বারের শিরোপাজয়ী দল ৩২ ম্যাচে পয়েন্ট পেয়েছে ৩৮। এই পর্যায়ে এতটা কম পয়েন্ট তারা পায়নি আগে কখনোই। পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান ১৪তম। চোটাঘাত, বাজে পারফরম্যান্স আর নানা সমস্যায় জর্জরিত ক্লাব।
দুঃসময়ের দীর্ঘ খরায় সুখের প্রবল বর্ষণ হয়ে এলো এই জয়। ‘সকল কাঁটা ধন্য করার’ মতোই কোচ আমুরি বললেন, এ জয় কিছু সময়ের জন্য হলেও তাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য ভুবনে।
“শেষ দুটি গোলে (গ্যালারির উল্লাসের) যে আওয়াজ, অসাধারণ অনুভূতি তা। সামনের পথচলায় আমরা লালন করতে পারি সযতনে। এসব কারণেই তো এই খেলাটা আমরা এতটা ভালোবাসি। কোচ হিসেবে এই যে এত হতাশা, মৌসুমজুড়ে এমন বিবর্ণ সময়, বাজে সব মুহূর্ত, সবকিছুই আলিঙ্গন করে নেওয়া যায় এরকম কিছু মুহূর্তের জন্য।”
“এরকম মৌসুমে এই ধরনের জয় অনেক ফুটবলারকেই সহায়তা করতে পারে (উজ্জীবিত করতে)। সমর্থকদের সঙ্গে ফুটবলারদের বন্ধন পোক্ত হতে পারে এবং কিছু সময়ের জন্য হলেও আমরা ভুলে যেতে পারি, মৌসুমটা আমাদের কেমন যাচ্ছে…।”
এমন স্মরণীয় মুহূর্তটি ধরা দিয়েছে আমুরির একটি কৌশলে। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুইয়ারকে শেষ সময়টুকুতে তিনি খেলিয়েছেন একদম সামনে। ফরোয়ার্ড বনে যাওয়া সেই ডিফেন্ডারই শেষের নায়ক। সেই ভাবনার গভীরের ছবিটাও মেলে ধরলেন ইউনাইটেড কোচ।
“সাধারণ কোনো ম্যাচের শুরু থেকে ওকে এভাবে খেলাব? না! তবে এরকম মুহূর্তে, এমন কিছুই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। হ্যারি ম্যাগুইয়ারকে যখন স্ট্রাইকার হিসেবে দেখছি, তখন আমার স্রেফ ভাবনা ছিল, বক্সের ভেতরে সে ভালো নাকি ভালো নয়?” সে যখন প্রতিপক্ষের বক্সে, তখন সে স্ট্রাইকার। সে জানে, কীভাবে জায়গা বের করে কাজে লাগাতে হয়। এটা স্রেফ ভিন্ন সময়ে ভিন্ন চরিত্র তুলে ধরার ব্যাপার।”
দলের মৌসুম ভুলে যাওয়ার মতো হলেও এই মৌসুমেই নিজেকে অনেকটা ফিরে পেয়েছেন ম্যাগুইয়ার। ক্লাবের যে কজন ফুটবলার একটু ধারাবাহিক, তিনি তাদেরই একজন। তবে এমন জয়ের নায়ক হওয়া মানে তো অন্য কিছু! ৩২ বছর বয়সী ফুটবালের উচ্ছ্বাস যেন ছুঁতে চাইছিল আকাশ।
“আমার মনে হয়, চতুর্থ গোলটিই ওদেরকে একদম দুমড়েমুচড়ে দেয়। এরপর আমরা আরও কিছু করার সুযোগ পেয়ে যাই। আমার কাছেই তা আসে এবং সৌভাগ্যক্রমে গোল করতে পেরেছি।”
“অসাধারণ অনুভূতি এটি… অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ। অনেক ঘাম ঝরিয়ে ধরা দিয়েছে এই মুহূর্ত।”