তাবলীগ জামাতের দুপক্ষকে একসঙ্গে আনতে ধর্মমন্ত্রীকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
Published : 22 Jan 2024, 11:45 PM
বিশ্ব ইজতেমা শেষে উভয় পক্ষকে ভাঙচুর ছাড়া ‘সম্মানের সঙ্গে’ প্রশাসনের কাছে মাঠ বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের।
সোমবার বিকালে গাজীপুরের টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠে প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
আগামী ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্ব এবং চার দিন বিরতি দিয়ে ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
ইজতেমা আয়োজনে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়ে ইঙ্গিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সারা পৃথিবীতে এ ইজতেমা অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সারা বিশ্ব থেকে এখানে লোক আসত। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। এ নিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। আমরা বহু জায়গায় আপনাদের পাঠিয়েছি। আপনাদের মনোভাবটা পরিবর্তন হয়নি। সেজন্য আমরা কষ্ট পাই।
“আমরা মনে করি আপনারা মিলেমিশে আবার যদি এক প্লেটে (মাওলানা জুবায়ের আহমেদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম) খেতে পারতেন; আর আমরা যদি তা দেখে যেতে পারতাম, তা হলে খুব খুশি হতাম।”
তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষকে একসঙ্গে আনার ক্ষেত্রে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালকে নেতৃত্ব দেওয়ারও অনুরোধ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রথম পর্বের আয়োজকদের উদ্দেশে কামাল বলেন, “আপনাদের (জুবায়ের গ্রুপ) দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথমে সুযোগ করে দেই। সে দাবি রক্ষা করে সম্মানের সঙ্গে মাঠ বুঝিয়ে দেবেন। যাতে কোনো প্রকার ভাঙচুর না হয়, কেউ যাতে কোনো অভিযোগ না করে, এটা আমার অনুরোধ।
“আমরা গতবারও শুনেছি ভাঙচুর হয়েছে, কিছু জিনিস খোয়া গেছে। আমরা চাই সুন্দরভাবে মাঠটা বুঝিয়ে দেবেন। এ ছাড়া গোয়েন্দাবাহিনীর অনুরোধ রয়েছে, দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা না বাড়িয়ে সকাল থেকেই মাঠটি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।”
সবাইকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোববার কিছু ঘটনা ঘটছে; যা দুঃখজনক। সবার কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ রইল এসব ঘটনা আর ঘটাবেন না, সবাই মিলেমিশে থাকবেন।
সভায় ধর্মমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিশ্ব ইজতেমায় কাজ করতে গিয়ে কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে সেগুলোকে লক্ষ্য করে, আগামীতে যাতে সেই ত্রুটি-বিচ্যুতি না ঘটে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
ইজতেমায় দুই পক্ষের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি লজ্জিত বলে মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যা বলেন, সে অনুযায়ী যদি কাজ হয় তাহলে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। আমি মনে করি আপনাদের আচরণে এমন ভুল আর হবে না যাতে অন্যরা কষ্ট পায়।”
আগের বছরের প্রসঙ্গ টেনে পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “শুনেছি একপক্ষ যখন আরেক পক্ষকে মাঠ বুঝিয়ে দেন, তারা মাঠের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেন। আমরা আদব, লেহাজ, তমিজ আপনাদের কাছ থেকে শিখব। তাবলীগে যারা আছেন এটা তাদের কাছ থেকে শিখেছি।
“কিন্তু গত রাতেও এখানে আপনাদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আপনাদের কাছ থেকে কী শিখব? আমরা আপনাদের সহযোগিতায় বিশ্ব ইজতেমায় চমৎকার একটি পরিবেশ দেখতে চাই।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমানের পরিচালনায় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল মন্ত্রণালয়, সরকারি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিরাপত্তায় যা থাকছে
বিদেশিসহ ইজতেমায় আসা সবার নিরাপত্তা বিধানে সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নৌ-টহল, ড্রোন, ওয়াচ টাওয়ার ও বহুতল বিশিষ্ট ছাদ থেকে অত্যাধুনিক ক্যামেরা ছাড়াও, সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো এলাকা নজরদারি করা হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা দিতে স্থানীয় হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোতায়েন থাকবে, স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। রোগী আনা-নেওয়ার জন্য থাকবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ বাস ও ট্রেনও চলাচল করবে।