“আমার গাড়ির সামনে বড় দুইটা গাছ এসে পড়ে।অল্পের জন্য অটোরিকশার ড্রাইভারসহ যাত্রীরা রক্ষা পেয়েছে।”
Published : 28 Apr 2024, 10:46 PM
মৌলভীবাজারে ঝড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে রেললাইনের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে সারা দেশের সঙ্গে তিন ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
এছাড়া উদ্যানের ভেতরে মহাসড়কের ওপর একাধিক গাছ ভেঙে পড়ে প্রায় দুই ঘণ্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল।বিভিন্ন গ্রামে শত শত ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন বহু মানুষ।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “রোববার বিকাল ৫টার দিকে প্রচণ্ড বেগে ঝড় হয়।এতে লাউয়াছড়া বনে রেল লাইনের ওপর একাধিক স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
“প্রায় তিন ঘণ্টা কাজ করে রাত ৮টার দিকে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। এতে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে জয়ন্তিকা ও পারাবত এক্সপ্রেস ভানুগাছ স্টেশনে আটকা পড়ে।”
ঝড়ে লাউয়াছড়া বনের বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ শিকড়সহ উপড়ে সড়কের ওপর পড়ে। এতে রাস্তার দুই পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়; ঝড়ের মধ্যেই আটকা পড়ে শতাধিক যানবাহন।এ সময় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।ঝড় থামার প্রায় দুই ঘণ্টা পর বন বিভাগ ও স্থানীয়রা মিলে রাস্তা থেকে গাছ কেটে সরালে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, বিকাল ৫টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে যখন ঝড়-বাতাস শুরু হয়, তখন তিনি সেখানে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমার গাড়ির সামনে বড় দুইটা গাছ এসে পড়ে।অল্পের জন্য অটোরিকশার ড্রাইভারসহ যাত্রীরা রক্ষা পেয়েছে।”
শ্রীমঙ্গল বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুলইসলাম বলেন, বড় গাছ কাটা ও সরানোর জন্য উন্নত সরঞ্জাম দরকার হয়।তাদের কাছে সে ধরনের সরঞ্জাম না থাকায় কাছ কাটেতে দেরি হয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের লালবাগ এলাকার মিয়াধন মিয়া বলছিলেন, বিকাল ৫টার দিকে প্রথমে বৃষ্টি ও হালকা বাতাস শুরু হয়ে দশ মিনিট পর থেমে যায়। এরপর আবার ৫ মিনিট পর ৫টা ১৫ মিনেটে প্রচণ্ড গতিতে ঝড় আসে। তখন পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তিনি ঘরের ভেতরে ছিলেন।
ঘর নড়ছে দেখে তারা একটি টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন। এ সময় তাদের পুরো ঘর ও ঘরের অনেক জিনিষপত্রসহ উড়িয়ে নিয়ে যায় পাশের ক্ষেতে।অলৌকিকভাবে তারা বেঁচেছেন।
মিয়াধন বলেন, “আমি একজন দরিদ্র কৃষক। প্রতিদিন চাল কিনে আমাদের খেতে হয়। এই ঘর আবার তৈরির সামর্থ্য আমার নেই।”
লালবাগ ছাড়াও সবুজবাগ, সুন্দরপুর, বালুচরসহ অনেক গ্রামে শত শত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ঝড়ে। এ সময় অন্তত শতাধিক স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ।
ঝড়ের সঙ্গে শিলা বৃষ্টি হয়ে বোরো ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে লালবাগ এলাকার সুহেল আহমদ জানান।
শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দুদু মিয়া বলন, ঝড়ে তার ইউনিয়নের ৫/৬টি গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি ক্ষতির পরিমাণ ও পরিবার গুলো চিহ্নিত করেছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. আবু তালেব বলেন, “রোববার বিকালে শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে প্রবল শক্তিশালী এক ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়।বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ আসছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।”
মৌলভীবাজার পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, এই ঝড়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে মৌলভীবাজার পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির। কত জায়গায় বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙে পড়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।
এসব জায়গায় কাজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।