বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা মে দিবস উপলক্ষে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছেন।
সোমবার দুপুরে প্রথমে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারীরা সমাবেশ করেন। পরে বিকালে একই স্থানে আলাদা মঞ্চে সমাবেশ করেন সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা।
এর মধ্য দিয়ে দুই পক্ষের বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে এমন আলোচনা থাকলেও বর্তমান মেয়রের অনুসারীদের দাবি, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বর্তমান মেয়র ও তার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীরা তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। নির্বাচনে তারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
গত সাড়ে চার বছর ধরে বরিশালের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে জিতে গেছেন চাচা খোকন সেরনিয়াবাত। সাদিক, খোকনের বড় ভাই আবুল হাসানত আব্দুল্লাহর বড় ভাইয়ের ছেলে।
হাসানাতের পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই খোকন সেরনিয়াবাতের। যদিও মনোনয়ন পাওয়ার পর খোকন বড় ভাইয়ের ঢাকার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। এ সময় তার সঙ্গে সাদিক আব্দুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন।
সাদিক আব্দুল্লাহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে চাচার পক্ষে ভোট করার কথাও বলেন।
এর মধ্যে রোববার খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যে ১৬ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীদের নাম দেখা যায়নি।
মে দিবসের মধ্য দিয়ে দুই পক্ষের বিভক্তি আরও স্পষ্ট হল বলেই মনে করছেন স্থানীয় ভোটার ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
‘আমি এসেছি বরিশালবাসীর সেবা করার জন্য’
খোকন সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে বেলা ১২টায় নগরীর সদর রোড দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবসের শোভাযাত্রা বের হয়। এর আগে সভা হয়।
জেলা ও মহানগর শ্রমিক লীগের আয়োজনের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, “জননেত্রেী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করেছেন বরিশালবাসীর সেবা দেওয়ার জন্য। মে দিবসে আমার অঙ্গীকারই হবে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করার।
“ব্যবসায়িক কারণে আমি ৪২ বছর শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছি। তাদের সমস্যা আমি জানি। আমি নির্বাচিত হতে পারলে আমার মামা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাবা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মতই তাদের উত্তরসূরী হয়ে শ্রমিকদের জন্য কাজ করে যাব।”
খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, “বরিশাল আমার জন্মভূমি। এখানে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। নির্বাচিত হলে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে একটি উন্নত সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত করাই হবে আমার প্রধান কাজ।”
তাই আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ চেয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাত।
সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান হাওলাদার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন।
উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা কে বি এস আহম্মেদ কবির, আনিছ উদ্দীন আহম্মেদ সহিদ, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন শিকদার, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবির, জিয়াউর রহমান বিপ্লব, তৌহিদুর রহমান বাদশা, আবুল কালাম মোল্লা, এনামুল বাহার ও ফরিদ আহমেদ, সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ, বরিশাল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফরহাদ বিন আলম জাকির, বি এম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য গাজী শুভ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অসীম দেওয়ান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দীন ও বি এম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার।
‘প্রার্থী তো আমাদের ডাকেননি’
বেলা ৩টায় একই স্থানে বরিশাল জেলা ও মহানগর শ্রমিক লীগের ব্যানারে আরেকটি সভা হয়। পরে সেখান থেকে মে দিবসের শোভাযাত্রা বের হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস।
আলাদাভাবে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিমল দাস বলেন, “প্রার্থী তো আমাদের ডাকেননি। এমনকি তাদের কর্মসূচিতে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছবিও নেই। তিনি তো বরিশালে আওয়ামী লীগের সৃষ্টি করেছেন।
সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় অনেক লোক সমাগম হয়েছে জানিয়ে পরিমল বলেন, “এতে প্রমাণ হয় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর জনপ্রিয়তা কতটুকু।
পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে পরিমল দাস বলেন, “যারা ভিন্নভাবে আয়োজন করেছেন তাদের তো বিগত দিনের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তারা অতি উৎসাহী হয়ে করেছেন। তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভুল বুঝিয়ে বিভেদ করার চেষ্টা করছেন।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর চাচা তিনি। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই। আমরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ছিলাম, আছি ও থাকব”, যোগ করেন পরিমল।
মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে একই কমিটির সভাপতি আফতাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে সবকিছু সাদিক আবদুল্লাহ তার নিজের মতো করে পরিচালনা করতেন। শ্রমিক লীগের কর্মসূচি শ্রমিক লীগ করবে, সেখানে সাদিক আব্দুল্লাহ অতিথি হিসেবে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি সব কিছু তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে করায় অনেকে কর্মসূচিতে যায়নি।
“এবার অনুষ্ঠান উন্মুক্ত ছিল। তাই জেলা ও মহানগর নেতা এবং শ্রমিকদের নিয়ে কর্মসূচি করা হয়েছে। এতে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। কিন্তু সাদিক আব্দুল্লাহ নির্দেশ না দিলে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।”
আফতাব আরও বলেন, “আমাদের এটা প্রয়োজন ছিলো। তাই করা হয়েছে। সেখানে শ্রমিক লীগের পরিমল একাই ছিলেন।”
সেখানে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর। উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, সহসভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ গাজী নইমুল হোসেন লিটু, প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম খোকন, জেলা ছাত্রলীগর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
আরও পড়ুন: