বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ‘পাতানো’ অভিহিত করে এবার বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোটের লড়াইয়ে সামিল না হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাসদ নেত্রী মনীষা চক্রবর্তী।
বিগত সিটি নির্বাচনের সময় প্রচার চালিয়ে আলোচনায় আসা বামপন্থি এই প্রার্থী বুধবার নগরীর ফকির বাড়ি রোডে দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
মনীষা বলেন, “দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের অনুগত দলসমূহকে নিয়ে একটি পাতানো নির্বাচনের আয়োজন চলছে। যেখানে জনগণ পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে না সেই ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাসদ ও তাদের রাজনৈতিক জোট।
“নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন নির্দিষ্ট সময় পর পর জনগণের ওপর দুঃশাসন চালাবার আইনি অনুমোদন নেওয়া মাত্র। বিগত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং তার পরবর্তীতে কথিত নির্বাচিত ব্যক্তির ভূমিকা দেখে এটা বিশ্বাস করতে কারও পক্ষেই কষ্টকর হবে না।”
২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন এই চিকিৎসক। সেই নির্বাচনের খরচ জোগাতে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি মাটির ব্যাংক সরবরাহ করে টাকা সংগ্রহ করে তহবিল সৃষ্টি করে সাড়া ফেলেছিলেন।
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ; যিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানত আব্দুল্লাহর ছেলে।
নানা কারণে বিতর্কের মুখে থাকা সাদিক এবার আর দলের মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগ সেখানে নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে বেছে নিয়েছেন তার আপন চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে; যিনি খোকন সেরনিয়াবাত নামেই বেশি পরিচিত।
আগামী ১২ জুনের নির্বাচনকে সামনে রেখে মনীষা চক্রবর্তীর প্রার্থিতা নিয়ে বরিশালের প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহল, সুলীশ সমাজ ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ ছিল।
তার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে ভোট বর্জনের বার্তা দিয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, কোনো প্রতিষ্ঠানই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া পদ্ধতিকেও ধ্বংস করছে।
“নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হয়ে গেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলীয় মাস্তান বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা করে যাচ্ছে।
“এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। সেই দায়বদ্ধতা থেকে একটি লোক দেখানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চাকে কলুষিত করায় শরিক আমরা হতে পারি না।”
বাসদ নেত্রী আরও বলেন, “জনগণ ক্রমাগত নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ের উপ-নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ৩০ শতাংশের কম। এমনকি ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ছিল মাত্র ১০ ও ১৪ ভাগ। এই নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের অনাস্থারই পরিচায়ক।
বিগত নির্বাচনে নিজে, কর্মী ও এজেন্টরা ক্ষমতাসীন দলের হামলার শিকার হয়েছিলেন উল্লেখ করে মনীষা বলেন, “নির্বাচনের সব অনিয়মের চিত্র দেখে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ভোটগ্রহণ বন্ধের সুপারিশ করে ঢাকা চলে যান। সকাল ৯টার মধ্যে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী ভোট বর্জন করে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।
“ভোটের পর আমাকে নানাভাবে হয়রানি, দলের ওপর নানা ধরনের হামলা, পার্টি অফিস নিয়ে হয়রানি করা, মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা, শ্রমিক সংগঠনের ওপর উপর্যুপরি নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জনার্দন দত্ত নান্টু, জেলা কমিটির সদস্য মানিক হাওলাদার, গোলাম রসূল, বিজন সিকদার ও সন্তু মিত্র উপস্থিত ছিলেন।