বরিশাল সিটিতে ব্যালটে ভোট ও সেনাবাহিনী চান জাপার তাপস

তাপস বলেন, “প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায়।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2023, 12:07 PM
Updated : 29 April 2023, 12:07 PM

বরিশাল সিটি নির্বাচনে ব্যালটে ভোট ও বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। 

শনিবার বেলা ১১টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি তোলেন। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিগত নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়নি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি এবং ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। ফলে বিএনপিসহ অনেক দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আমরা এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কিছু দাবি ও প্রস্তাব পেশ করছি। 

তিনি বলেন, “প্রথমত আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে নয়, ব্যালট পেপারে নির্বাচন চাই। দ্বিতীয়ত, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও যথাযথ ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে এবং ভোট দিতে পারে।” 

এ সময় ইভিএম সম্পর্কে তিনি বলেন, “ইভিএমের অংশ মূলত দুটি; একটি হার্ডওয়্যার। এতে আছে মাদার বোর্ড, মাইক্রো প্রসেসর ও ভোট গ্রহণের জন্য সংযোজিত অন্য যন্ত্রপাতি। 

দ্বিতীয় অংশ সফটওয়্যার। এতে আছে অপারেটিং সিস্টেম, ডিভাইস ড্রাইভার, বিভিন্ন ফাইল ও কমপিউটার এপ্লিকেশন। 

“যেহেতু ইভিএমে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের উপর নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে, তাই এই অংশের নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকবে তার পক্ষে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করা অত্যন্ত সহজ বলে আমি মনে করি।”  

ইভিএমের সঙ্গে সংযোজিত যেকোনো ইনপুট পোর্টের মাধ্যমে যন্ত্রটির ভেতর ম্যালওয়্যার (ম্যালওয়্যার-মলিকুলাস কোড) প্রবেশ করিয়ে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব বলে তার দাবি। 

তাপস আরও বলেন, “জনগণ ইভিএম ব্যবহারে অভ্যস্থ না থাকার কারণে ভোট দেওয়ায় ধীরগতি, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বয়স্কসহ অনেক ভোটারাই ভোট না দিয়ে ফিরে যান। 

“প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। এতে 'ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল' (ভিভিপিএটি) নেই, ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি স্বচ্ছভাবে পুনঃগণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকে না।” 

তিনি বলেন, “প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায়। বায়োমেট্রিক ভিত্তিক ইভিএম অনেক ভোটারকেই শনাক্ত করতে পারে না, ফলে নির্বাচন কমিশন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তাদের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খুলে দেওয়া তথা ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে।” 

যে কোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মতো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায় দাবি করে তিনি বলেন, “এছাড়া নির্বাচনের সময়ে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনী ফলাফল বদলে দিতে পারেন। গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত দুবার ফলাফল প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে, যা কেবল ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।” 

তিনি বলেন, “এ ছাড়া আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, ইভিএম ব্যবহার করার কারণে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ বাস্তব কারণে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে ইভিএম-এ ভোট না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।” 

তাপস বলেন, “নির্বাচন সংক্রান্ত আইনের প্রায়োগিক দিকের প্রধান শর্ত হচ্ছে, পদ্ধতিটি হতে হবে স্বচ্ছ। এ কারণেই ভোটের প্রাক্কালে সব দলের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ব্যালটবাক্স খুলে দেখানো হয়। কিন্তু ইভিএম মেশিন হচ্ছে এমন একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠ যার ভেতরে আসলে কী আছে তা জানা সম্ভব নয়, যদি না এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সবার সামনে উন্মুক্ত না করা হয়।” 

যেহেতু, জনমনে ইভিএম নিয়ে আস্থাহীনতা আছে, আগে সেটি দূর করতে হবে। অনেক দেশ ইভিএম থেকে সরে এসেছে।

বাংলাদেশের মতো দেশে কাগজের ব্যালটে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করাই সর্বোত্তম। তাই আমাদের দাবি, ব্যালট পেপারেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে, যেভাবে ভোটাররা ভোট দিতে অভ্যস্ত।” 

জাতীয় পার্টির এ মেয়র প্রার্থী বলেন, “আমরা দেখে এসেছি, দেশের মানুষের সেনাবাহিনীর প্রতি গভীর আস্থা। তাই ভোটারদের ভীতি দূর করতে, ভোট কেন্দ্র দখল, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সকল প্রকার অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন অত্যন্ত জরুরি এবং সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন করতে হবে। 

“আমরা চাই, এই দাবিগুলো মেনে নিয়ে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে অর্থাৎ নির্বাচন ও ভোট গ্রহণের আগে থেকেই ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।” 

সংবাদ সম্মলে এ সময় জাতীয় পার্টি বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, মহানগরের সহ সভাপতি আক্তার হোসেন সপ্রু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।