সূচনা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অনেকের অনেক অভিযোগ, কিন্তু আমি অভিযোগ করার কোনো সময় পাচ্ছি না। কারণ আমি অনেক বেশি জনসম্পৃক্ত, আমি সারাদিন কাজই করে যাচ্ছি।”
Published : 02 Mar 2024, 10:24 PM
নিজের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে এবার ‘শেষবারের মত’ ভোটে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।
শনিবার নির্বাচনি প্রচারে বেরিয়ে দুইবারের সাবেক এই মেয়র বলেন, “এটা আমার শেষ নির্বাচন। আমি হয়ত আর নির্বাচন করব না। তবে আমি রাজনীতির মাঠে থাকব। বিগত সময়ে অনেক কাজ করেছি কুমিল্লার মানুষের জন্য। আমার আরও কিছু কাজ বাকি।
“এবার মেয়র নির্বাচন হলে আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই। এরই মধ্যে চারদিকে আমার গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি বিজয়ী হব, ইনশাআল্লাহ।”
শুক্রবার নিজের উঠান বৈঠকে হামলা ও ভাঙচুরের প্রসঙ্গ টেনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী বলেন, “বাস প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন আমার উঠান বৈঠকে হামলা করছে। আমার গণজোয়ার দেখে তারা দিশেহারা। এজন্য ভয় দেখিয়ে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। কিন্তু কুমিল্লার মানুষ আমার সঙ্গে আছে। তারাই সব ভয়কে উপেক্ষা করে আমাকে বিজয়ী করবেন।”
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে এসে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু শনিবার দিনভর নগরীর রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, নেউরা-রাজাপাড়া, পাথুরিয়া পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।
৯ মার্চের মেয়র পদের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রচার এরই মধ্যে জমে উঠেছে। সকাল থেকে প্রার্থীরা প্রচারে বেরিয়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি চলছে তাদের কথার লড়াইও।
এবারের উপনির্বাচনে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এ উপনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা এবং বিএনপির সাবেক দুইজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী লড়ছেন।
আমি অতিথি পাখি নই: সূচনা
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা দিনভর নগরীর ১২, ১৫ ও ১৮ ওয়ার্ডে ব্যাপক গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। সূচনা কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে।
প্রচারকালে সূচনা বলেন, “তারা দুই প্রার্থী একই দলের (সাক্কু-কায়সার)। তারা নিজেরা নিজেরা কাঁদা-ছোড়াছুড়ি করছেন। আবার সেই কাদা আমার দিকেও ছুড়তে চেষ্টা করছেন। তারা সারাদিন অভিযোগই করতে থাকেন। আমার বিরুদ্ধে অনেকের অনেক অভিযোগ, কিন্তু আমি অভিযোগ করার কোনো সময় পাচ্ছি না। কারণ আমি অনেক বেশি জনসম্পৃক্ত, আমি সারাদিন কাজই করে যাচ্ছি।
“আর আমি অতিথি পাখির মত হঠাৎ করে রাজনীতির মাঠ, ভোটের মাঠে আসিনি। কিন্তু বাকি যারা প্রার্থী আছেন, তাদের অনেকে হঠাৎ করেই প্রার্থী হয়েছেন। এজন্য তাদের হাতে অনেক বেশি সময় থাকায় সারাদিনই অভিযোগ করে যাচ্ছেন।”
কুমিল্লার উন্নয়নে নতুন অধ্যায় সূচনা করতে চান জানিয়ে হাতি প্রতীকের প্রার্থী বলেন, “কুমিল্লার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিগত সময়ে আমার বাবার পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছি। এ ছাড়া সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমেও আমার সারা কুমিল্লায় বিচরণ রয়েছে। বিগত সিটি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি কাজ করেছি। কুমিল্লা মানুষের সমস্যাগুলি আমার জানা আছে। নির্বাচিত হলে একটা পরিকল্পিত সুন্দর নগরী গড়ে তুলব। অবশ্যই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব।”
মানুষ এখন সব বুঝে গো বুঝে: কায়সার
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার দিনভর নগরীর ফৌজদারি রোড এলাকা, কুমিল্লা হাইস্কুল এলাকা, আদালত এলাকা, ডুমুরিয়া এলাকাসহ ২, ৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ, উঠান বৈঠকে অংশ নেন।
এ সময় ঘোড়া প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, “বাস ও ঘড়ি প্রতীকের অভিভাবক একজনই (সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে ইঙ্গিত করে)। আগে মামা-ভাগিনা মিলে নিতেন। এবার নেমেছে ঘরের মানুষ। এবার অভিভাবকের লক্ষ্য ১০০-তে ১০০।
“কুমিল্লার মানুষ এখন সব বুঝে গো বুঝে। তারা আর ভুল করবে না। তাই দলে দলে ঘোড়ার বহরে ভিড়ছেন সাধারণ মানুষ। আমার প্রচারে অনেকে আছেন, যারা গতকাল সকালেও ঘড়ির মিছিলে ছিলেন। কারণ, চারদিকে ঘোড়ার গণজোয়ার।”
কায়সার আরও বলেন, “বিএনপিসহ সাধারণ মানুষ মুখিয়ে আছে ভোট দিতে। নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, শুধু নির্বাচনি কেন্দ্রের এলাকার দায়িত্ব নিলে হবে না। ভোটার যেন ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে পারে সেই বিষয়টিও আপনাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। আমি নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে আস্বস্ত। কিন্তু বিশ্বাস করার সময় আসেনি। নির্বাচন শেষে বলতে পারব।”
‘আওয়ামী লীগের কিছু মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ থেকে বটগাছ হয়েছে’
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম দিনভর নগরীর রাজগঞ্জ বাজার, মুন্সেফ কোয়াটার, বিষ্ণুপুর, ভাটপাড়া, কাপ্তানবাজার, কমলাপুর ধনাইতরী, দয়াপুর, ডুমুরিয়া, লইপুড়া, চৌয়ারা, তারপাইয়াসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ, পথসভা এবং উঠান বৈঠক করেছেন।
এ সময় হাতি প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের কিছু মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে, কলাগাছ ফুলে বটগাছ হয়ে গেছে। এ সমস্ত বটগাছ ডালপালা দিয়েই সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, মতামতকে অবনমিত করতে চায়, দমন করতে চায়।
“আমি আশাবাদী, কুমিল্লার মানুষ ৯ মার্চ তাদের সব অপকর্ম-অপতৎপরতার জবাব দেবে। আমার প্রচার, গণসংযোগে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছেন। আজকে সাধারণ মানুষের মধ্যে উল্লাস, উৎসব- ৯ মার্চের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা প্রত্যেকেই প্রতীক্ষা করছে, তাদের মতামত দিয়ে কুমিল্লায় নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটাবেন বলে। আমি নির্বাচিত হলে কুমিল্লা হবে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগরী।”
আরও পড়ুন: