কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: সূচনার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তানিমের

“তানিমের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তার উচিত তথ্য-প্রমাণসহ নির্বাচন কমিশনকে জানানো; তিনি তা না করে মনগড়া অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন।”

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2024, 07:20 PM
Updated : 22 Feb 2024, 07:20 PM

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম তার এক প্রতিপক্ষ তাহসিন বাহার সূচনার বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। 

তিনি বলেছেন, “তাহসিন বাহার সূচনা তার বাবাকে (সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার) নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছেন। যা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন। 

“এ ছাড়া প্রতীক পাওয়ার আগেই তার সমর্থকরা পোস্টার-লিফলেট দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। আমি নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, কমিশন এসব বিষয়ে কঠোর হবেন।” 

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তানিম।

যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি। 

অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনার পক্ষ থেকে এক নেতা বলেছেন, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’। 

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচন ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন কোনো প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।  

এ উপনির্বাচনে লড়ছেন চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের মধ্যে দুইজন আওয়ামী লীগের নেতা এবং দুইজন বিএনপির সাবেক নেতা।

তারা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা তাহসিন বাহার সূচনা, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, কুমিল্লা সিটির সাবেক দুইবারের মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার।

সাক্কু ও কায়সার গত সিটি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে লড়ে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন।

চারজনকে ‘শক্তিশালী’ প্রার্থী বলে মনে করছেন ভোটাররা। ফলে এই সিটির উপনির্বাচন জমে উঠবে বলেই তাদের ধারণা।

সংবাদ সম্মেলনে নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, “কুমিল্লার মানুষ প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন দেখতে চায়। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন। 

“কুমিল্লার মানুষ আজ জিম্মি। কুমিল্লার সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী এমনকি ধর্মীয় নেতারাও জিম্মি। নগরবাসীর বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে একটি পক্ষ। এসব থেকে উত্তরণের জন্য এই নির্বাচন। কুমিল্লাকে বদলানোর জন্য এই নির্বাচন।” 

তানিম আরো বলেন, “নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নেত্রীর এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। এ কারণেই আমি প্রার্থী হয়েছি। 

“আমি কুমিল্লার মানুষকে বলব, আমাকে একটিবার সুযোগ দিন। আমি স্বপ্নবাজ মানুষ; আপনাদের নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। আমি সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।” 

মেয়র পদপ্রার্থী তানিমের কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান।

তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচনে সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। কোনো দলীয় প্রার্থী নেই। কেউ আমাদের প্রমাণসহ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান।”  

তানিমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেয়র পদপ্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে সংসদ সদস্য বাহার ও তাহসিন বাহার সূচনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়র পদপ্রার্থী তানিমের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তার উচিত তথ্য-প্রমাণসহ নির্বাচন কমিশনকে জানানো। তিনি তা না করে মনগড়া অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন।” 

তানিম ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হাস্যকর’ বক্তব্য দিচ্ছেন উল্লেখ করে আতিকুল্লাহ খোকন বলেন, “সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার ও মেয়র পদপ্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা নির্বাচন কমিশনের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রয়েছেন। তারা কোনো ধরনের নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন করেননি।”      

সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। 

তার মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।  

আরও পড়ুন:

Also Read: কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: ৪ প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বৈধ

Also Read: কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: চার 'শক্তিশালী' প্রার্থীতে ভোট জমার ইঙ্গিত

Also Read: কুমিল্লা উপনির্বাচন: মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন বাহারকন্যা সূচনা

Also Read: কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: সাক্কু-কায়সার ভোটের মাঠে

Also Read: ময়মনসিংহ-কুমিল্লা সিটি ভোট: মনোনয়ন জমা ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

Also Read: ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটিতে ভোট ৯ মার্চ