“আটজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন; তবে চারজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।”
Published : 13 Feb 2024, 07:54 PM
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন এবং ‘বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত’ দুজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ভোটারদের অভিমত, এই চারজন ভোটের মাঠে থাকলে এবং সুষ্ঠু ভোট হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই দেখা যাবে।
মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনের কাছে তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
যেহেতু আওয়ামী লীগ সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছে ফলে নেতাদের ভোটে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়তে হচ্ছে। অপরদিকে ‘বিএনপিপন্থি’ দুই নেতাও যেহেতু দল থেকে বহিষ্কৃত ফলে তারাও স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন। এবারের কুমিল্লা সিটির ভোটে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না।
মনোনয়নপত্র জমা করা চার নেতা হলেন- কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটির সাবেক দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার।
সূচনা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে। অপরদিকে তৃণমূল আওয়ামী লীগের তানিমের শক্ত অবস্থান রয়েছে।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এসে সাক্কু ও কায়সার দুজনই দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন। প্রথমবার নির্বাচনে এসে ২৯ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সেবার চমক দিয়েছিলেন কায়সার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ‘কেন্দ্রে ভোটারদের টানতে এবং দলীয় বিভেদ দূর করতে’ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এই অবস্থায় দ্বিধা-বিভক্ত ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগে মেয়র পদের উপনির্বাচনে কারা কারা প্রার্থী হচ্ছেন এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনা চলছিল।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিএনপি জানিয়েছে, এই সরকারের অধীনে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে না দলটি।
বিকালে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, আটজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে চারজন তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।”
কুমিল্লা সিটির উপ নির্বাচন
মনোনয়নপত্র বাছাই ১৫ ফেব্রুয়ারি
আপিলের সময়সীমা ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি; আপিল নিষ্পত্তি ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ ফেব্রুয়ারি
প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রুয়ারি
৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে হবে ভোটগ্রহণ
২৭টি ওয়ার্ডের মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে।
মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন পুরুষ ভোটার এবং ১ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ জন নারী ভোটার। এ ছাড়া ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
বিগত নির্বাচনে সিটিতে ভোটার ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এবার উপনির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ১২ হাজার ৫৩৮ জন।
২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটির তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়। এ পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সর্বপ্রথম মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে তার আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা। এ সময় তার সঙ্গে মা মেহেরুননেছা বাহার ও দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সবশেষ দুপুর ২টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম।
পরে নির্বাচন প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “নির্বাচনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে আমার। অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, কুমিল্লা নগরবাসী আমাকে আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।”
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তাহসীন বাহার সূচনা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বাবা সারাজীবন কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, কুমিল্লা সিটির মানুষ বাবার মতই আমাকে আপন করে নেবে; আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে।
“তরুণ প্রজন্মের সবাই আমার সঙ্গে আছেন। আমি বিশ্বাস করি, কুমিল্লার মানুষ আমাকে নগরমাতা নয়, নগর-কন্যা হওয়ার সুযোগ দেবেন।”
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, “কুমিল্লার মানুষ দানবীয় শাসনের অবসান চায়, পরিবর্তন চায়। তবে সেই পরিবর্তন কোনো সাবেক দিয়ে কিংবা ক্ষমতাশীন দলের কাউকে দিয়ে সম্ভব নয়। কুমিল্লার মানুষ আমাকে তাদের সেবক হিসেকে দেখতে চায়। গত সিটি নির্বাচনে বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে গেছে।
বর্তমান নির্বাচন কশিমনের প্রতি জনগণ এবং আমাদের আস্থা নেই উল্লেখ করে কায়সার বলেন, “এরপরও কুমিল্লার মানুষের প্রয়োজনে আমি প্রার্থী হয়েছি। কমিশনকে বলব, নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। অযথা কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না। জনগণকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। ইনশা-আল্লাহ জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।”
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, “নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়, এজন্য কুমিল্লার মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে।
কুমিল্লা উপনির্বাচন: মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন বাহারকন্যা সূচনা
কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: সাক্কু-কায়সার ভোটের মাঠে
“আমি ৪০ বছর ধরে কুমিল্লার মানুষের জন্য রাজনীতি করি। রাজনীতি করতে গিয়ে বারবার হামলা-মামলার পাশাপাশি অসংখ্যবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। তবে কুমিল্লার মানুষ সব সময় আমার পাশে ছিল এবং আছে।”
তানিম বলেন, “কুমিল্লা দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে সংকট রয়েছে। আগামীর কুমিল্লাকে সাজাতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। ইনশা-আল্লাহ এবার জনগণের ভোটে আমি বিজয়ী হব।”
২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটির যাত্রার পর ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করেন তিনি।
২০২২ সালের ১৫ জুন তৃতীয় নির্বাচনে আরফানুল হক রিফাত মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।