এ উপনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা এবং বিএনপির সাবেক দুইজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
Published : 23 Feb 2024, 10:19 PM
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের উপনির্বাচনে চার প্রার্থী প্রতীক পেয়ে ভোটারদের দুয়ারে-দুয়ারে গিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। তারা আগামী দিনের কুমিল্লা নগরীকে গড়তে ভোটারদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন।
দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে তার পছন্দের ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীক বরাদ্দ নেন অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফা। নিজাম উদ্দিন কায়সার নিজেই তার ‘ঘোড়া’ প্রতীক গ্রহণ করেন।
তাহসিন বাহার সূচনার পক্ষে ‘বাস’ প্রতীক গ্রহণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত
সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন। নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম নিজেই তার ‘হাতি’ প্রতীক গ্রহণ করেন।
৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে এ সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এ উপনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা এবং বিএনপির সাবেক দুইজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
জুমার নামাজ আদায়, বাবা-মায়ের কবর ও দারোগাবাড়ি মাজার, কালিয়াজুরি মাজার জিয়ারত করে মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রচার শুরু করেন। তিনি টমছম ব্রিজ এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালান।
এ সময় মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “আমি টানা দুই মেয়াদে কুমিল্লা সিটির মেয়র ছিলাম। কিন্তু সে সময় বৃহৎ বরাদ্দ পাইনি। যখনই আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লা নগরীকে সাজাতে বৃহৎ বরাদ্দ এসেছে, তখনই ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
“আমি আমার অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করার জন্য আরেকবার মানুষের কাছে ভোট চাই। এই নগরীর প্রতিটি মানুষ আমার আপনজন। নগরীর প্রতিটি অলিগলি আমার চেনাজানা। নগরবাসী আমাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবে, ইনশা-আল্লাহ।”
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা বাস প্রতীক পেয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর পুলিশ লাইনস এলাকা থেকে প্রচার শুরু করেন। এরপর নগরীর পুলিশ লাইনস-কান্দিরপাড় সড়কের ঝাউতলা, বাদুরতলা এলাকা এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার চালান।
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা সূচনা বলেন, “আমি কুমিল্লার মেয়ে, কুমিল্লার উন্নয়নে নতুন অধ্যায় সূচনা করতে চাচ্ছি। কুমিল্লার উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় সব সময় কাজ করে গেছি আমার বাবার পাশে থেকে। এ ছাড়া সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমেও আমার সারা কুমিল্লায় বিচরণ রয়েছে।
“কুমিল্লাকে এগিয়ে নিতে আসন্ন নির্বাচনে নগরবাসী উন্নয়নের প্রতীক বাসকে বেছে নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি নির্বাচিত হলে একটা পরিকল্পিত সুন্দর নগরী গড়ে তুলব। অবশ্যই সততার সঙ্গে কাজ করব।”
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় প্রচার শুরু করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় এলাকায় প্রচার চালিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আসেন।
পরে তিনি নুরপুর চৌমুহনী জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। বেলা ৩টার দিকে নগরীর জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফের গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, “কিছুদিন আগে সারাদেশে একটা ডামি নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যায়নি। কুমিল্লার মানুষ এখন জিম্মিদশায় আছে। কুমিল্লার নাগরিকরা জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে চায়; তারা দানবীয় শাসনের অবসান চায়। কুমিল্লার মানুষ যে পরিবর্তন চায়- সেটা কোনো সাবেক বা আওয়ামী লীগের কাউকে দিয়ে সম্ভব নয়।
“কুমিল্লার মানুষের মুক্তির একটিই উপায় আছে- সেটি হল ভোট দিয়ে পরিবর্তন করা। আমি বিশ্বাস করি, কুমিল্লা নগরীর মানুষ জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে আমাকে ভোট দিতে আসবেন। প্রচার শুরুর প্রথম দিনেই চারদিকে ঘোড়ার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় সময়ের ব্যাপার, ইনশা-আল্লাহ।”
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম হাতি প্রতীক নিয়ে নগরীর ফৌজদারি মোড় থেকে প্রচার শুরু করেন। এ ছাড়া দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন তিনি।
নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, “সবাই জানেন গত নির্বাচনের কথা। আমরা চাই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। নির্বাচন কমিশন সব সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখবে বলে বিশ্বাস করি। একটা মানুষ তখনই অনিয়ম করে যখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
“আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। না হলে নির্বাচন কমিশন তার আস্থা হারাবে। কুমিল্লার মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আমি সেই পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা করতেই প্রার্থী হয়েছি। হাতি প্রতীক এখন কুমিল্লার মানুষের মুক্তির প্রতীক।”
সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: ৪ প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বৈধ
কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: চার 'শক্তিশালী' প্রার্থীতে ভোট জমার ইঙ্গিত
কুমিল্লা উপনির্বাচন: মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন বাহারকন্যা সূচনা
কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: সাক্কু-কায়সার ভোটের মাঠে
ময়মনসিংহ-কুমিল্লা সিটি ভোট: মনোনয়ন জমা ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত