Published : 24 Feb 2024, 09:55 PM
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র পদের চার শক্তিশালী প্রার্থীর প্রচার এখন তুঙ্গে। প্রতীক পেয়েই মেয়র পদের পদপ্রার্থীরা দিনরাত এক করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে এবং দিচ্ছেন নানান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।
তবে এর মধ্যেও প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িও করছেন।
ভোটের প্রচারের দ্বিতীয় দিনে শনিবার সকাল থেকে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রচার চালান।
৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এ উপনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা এবং বিএনপির সাবেক দুইজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম হাতি প্রতীকে ভোট চেয়ে দিনভর প্রচার চালিয়েছেন। তিনি এদিন নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার চালান। এ ছাড়া উঠান বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
প্রচারকালে নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, “কুমিল্লায় দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। আগামীর কুমিল্লাকে সাজাতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। কুমিল্লার মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আমি সেই পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা করতেই প্রার্থী হয়েছি।
“হাতি প্রতীক এখন কুমিল্লার মানুষের মুক্তির প্রতীক। আমি ভোটারদের বলব, আমাকে একটিবার সুযোগ দিন। আমি স্বপ্নবাজ মানুষ; আপনাদের নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। আমি সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। ইনশা-আল্লাহ এবার জনগণের ভোটে আমি বিজয়ী হব।”
বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়েই চমক লাগিয়েছিলেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। সেবার তিনি ২৯ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কৃত হন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এ সভাপতি।
নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে শনিবার দিনভর প্রচার চালিয়েছেন। তার গণসংযোগে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
সকাল ১০টায় নগরীর বাদুরতলা এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। এরপর নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ ও চকবাজার এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া নগরীর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এবং শপিংমলেও গণসংযোগ করেছেন কায়সার।
প্রচারকালে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, “কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের স্লোগান আমিই তুলেছি। পরিবর্তনের জন্য আজ হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। চারদিকে এখন ঘোড়া মার্কার গণজোয়ার।
“কুমিল্লার মানুষ জানে, তারা যে পরিবর্তন চায় সেটা কোনো সাবেক বা আওয়ামী লীগের কাউকে দিয়ে সম্ভব না। এরা সবাই অতীতে লুটপাট করে কুমিল্লাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ঘোড়া মার্কার বিজয় সময়ের ব্যাপার, ইনশা-আল্লাহ।”
এ সময় কায়সার তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করে বলেন, “আমার নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব করে লাভ হবে না। কারণ চারদিকে এখন পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে।”
‘অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির কারণে নগরী পিছিয়ে গেছে’
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা এদিন সকালে নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের মগবাড়ি চৌমুহনী, মুন্সেফ কোয়ার্টার, মৌলভীপাড়া, বাটাপাড়া এলকায় গণসংযোগ করেছেন।
পরে তিনি নগরীর শাসনগাছা, বাটার পুকুরপাড়, বাদশা মিয়ার বাজার ও রেসকোর্স এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ ছাড়া বিকালে ও সন্ধ্যায় কয়েকটি উঠান বৈঠক করেছেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা।
প্রচারকালে তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, “বাস হল কুমিল্লার উন্নয়নের প্রতীক। কুমিল্লাকে এগিয়ে নিতে নগরবাসী উন্নয়নের বাসকে বেছে নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি নির্বাচিত হলে একটা পরিকল্পিত সুন্দর নগরী গড়ে তুলব। অবশ্যই সততার সঙ্গে কাজ করব।
“আমি নির্বাচিত হয়ে ‘স্মার্ট কুমিল্লা’ গড়ার স্বপ্ন দেখি। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে কুমিল্লা শহর অনেক পিছিয়ে গেছে। আমি নির্বাচিত হলে প্রধান কাজ হবে সৎ, ন্যায় এবং সততার সঙ্গে কাজ করে কুমিল্লাকে এগিয়ে নেওয়া।”
‘শুনছি আমাকে হারানোর চক্রান্ত চলছে’
কুমিল্লা সিটির দুইবারের মেয়র ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট চেয়ে এদিন দিনভর প্রচার চালিয়েছেন। নগরীর রাজগঞ্জ ও চকবাজারে প্রচার চালান তিনি।
প্রচারকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “দুইবারের মেয়র ছিলাম। কুমিল্লার জন্য কাজ করেছি। আমার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই। সুন্দর কুমিল্লা উপহার দেব। আশা করি, জনগণ এবারও আমাকে ভোট দেবেন। প্রচারে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেখানে বের হচ্ছি সেখানে পরিচিত মুখ পাচ্ছি। নির্বাচিত হলে একটা পরিকল্পিত সুন্দর নগরী গড়ে তুলব।
“গত নির্বাচনেও পরিকল্পিতভাবে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে। এবারও শুনছি, আমাকে হারিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।”
সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন: