বৃহস্পতিবার কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উদ্যোগে সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে ওই সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
Published : 29 Feb 2024, 11:43 PM
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উদ্যোগে সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে ওই সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে মেয়র পদপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, নিজাম উদ্দিন কায়সার ও নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তবে অপর প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার কোনো অভিযোগ ছিল না।
প্রার্থীদের কথা শুনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, “সিটির উপনির্বাচন এবারও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হবে। কোনো অপশক্তিকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া হবে না।”
আগামী ৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকেই প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
বৃহস্পতিবারও মেয়র পদের প্রার্থীরা চষে বেড়িয়েছেন ভোটের মাঠ, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সব মিলিয়ে নির্বাচন জমজমাট হয়ে উঠেছে।
এবারের নির্বাচনে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এ উপনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুই নেতা এবং বিএনপির সাবেক দুইজন নেতা অর্থাৎ চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী লড়ছেন।
‘কেন্দ্রে ভোটার আসতে যেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা না হয়’
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার তার বক্তব্যে কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়া এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলেন।
কায়সার বলেন, “প্রতিটি বুথের মধ্যে ভারি কাপড়ের ব্যবহার করতে হবে। যেন ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন। কোনো দলীয় নেতাকর্মীকে যেন মিডিয়া কার্ড দেওয়া না হয়- সেদিকে নির্বাচন কমিশনকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসার পথে প্রতিবন্ধকতা যেন তৈরি করা না হয় এবং আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়- সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন পরিচালনার জন্য একজন নির্বাচন কমিশনারকে আমরা সার্বক্ষণিক কুমিল্লায় চাই। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য (আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার) যদি নির্বাচনি আচরণবিধির আওতায় পড়েন- তাহলে এ বিষয়ে কমিশনকে কঠোর হতে হবে।”
‘বারবার অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছি না’
হাতী প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম তার বক্তব্যে গত নির্বাচনের মত প্রতিটি কেন্দ্র ও বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “অনেক বিষয় নির্বাচন কমিশনের সামনেই ঘটছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মানুষের মধ্যে। আমার পোস্টার ছেঁড়া হচ্ছে প্রকাশ্যে, বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।
“সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান চাইলে এগুলো বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় জরুরি। নির্বাচন কমিশনকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
‘ভোটাররা সাহস হারিয়ে ফেলছে’
টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা সিটির সাবেক দুইবারের মেয়র ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “ভোটাররা সাহস হারিয়েছে ফেলছে। তাই পর্যাপ্ত পুলিশ, বিজিবি, আনসার, র্যাব মোতায়েন করতে হবে সুষ্ঠু ভোটের জন্য।”
ভোটের আগে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে মাইকিং করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতি কেন্দ্রে অতিরিক্ত ইভিএম রাখতে হবে। নারী ভোটারদের জন্য ভবনের নিচতলার কক্ষে বুথ স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। আর পেশিশক্তির প্রয়োগ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।”
‘অভিযোগ সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ করা উচিত’
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, “নির্বাচন সবাই মিলে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই, কারণ এই কুমিল্লা শান্তির শহর।
“তবে কোনো প্রার্থী কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ করা উচিত। তাহলে অযথা কাউকে হয়রানি হতে হয় না। ভুল তথ্য ও মিথ্যা অভিযোগ করে অন্য প্রার্থীকে হয়রানি করা হচ্ছে।”
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন, র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মাহমুদুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, “সবার সহমর্মিতা ও সহনশীলতা বজায় রেখে, একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করুন। সবাই সবার জায়গায় ঠিক থাকবেন। সবাই আচরণবিধি মেনে চলবেন।
“আমরা চাই না কারো বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে। প্রার্থীরা যেন বিবেক প্রয়োগ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের পরিবেশ বজায় রাখতে সহযোগিতা করেন। আমরাও আপনাদের আস্থা ও প্রতিশ্রুতি বজায় রাখব।”
সবার বক্তব্য শুনে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, “ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষ ব্যতীত প্রার্থী ও এজেন্ট সব কেন্দ্রে যেতে পারবেন। গোপন কক্ষে মোটা কাপড় ব্যবহার করা হবে। দক্ষ ইভিএম কারিগর থাকবে, পর্যাপ্ত ইভিএম থাকবে। ভোটারদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। বিরতিহীনভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।”
সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা সিটি ভোটে সিসি ক্যামেরা থাকছে না: ইসি আনিসুর
২০০৮ সালের পর কারা জমি কিনেছেন সেই তালিকা দেখুন: সাক্কুর স্ত্রী