সংঘর্ষের আগে ও পরে শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেল অবরোধে দিনভর ভোগান্তি; পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ।
Published : 17 Jul 2024, 02:02 AM
কোটাবিরোধী আন্দোলন ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে ছড়িয়েছে শহর থেকে শহরে, সড়ক থেকে মহাসড়কে; দিনভর বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ এক পর্যায়ে গড়িয়েছে সংঘাতে, যাতে রক্ত ঝরেছে অনেকের আর প্রাণ গেছে ছয়জনের।
আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা বাড়ে আন্দোলনকারী ও সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। দুই পক্ষের শক্ত অবস্থানে দুপুরের পর থেকে একের পর এক স্থানে বাঁধতে থাকে সংঘর্ষও। সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশও।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘাতের এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, রাজধানীতে দুইজন এবং রংপুরে একজন করে মারা গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে।
সন্ধ্যার পর সংঘর্ষ থেমে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শহর ও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান করা আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ শেষে সড়ক ও রেল অবরোধ তুলে নিয়ে ফিরে যেতে শুরু করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে।
এমন প্রেক্ষাপটে রাতে সরকারের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা আসে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হল ও হোস্টেল ত্যাগে শিক্ষার্থীদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
যেখান থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত্র সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশকে ঘিরে মুখোমুখি অবস্থানের প্রায় পাঁচ ঘণ্টার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির অবসান ঘটে রাত সাড়ে ৯টার দিকে। ওই সময় আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে দিনের কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা আসে। পুলিশের সর্তক অবস্থার মধ্যে তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অবস্থান থেকে ফিরে যেতে শুরু করলে আগের দিনের মত সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা আর ঘটেনি। তবে এর আগেই বিকালের দিকে আন্দোলনকারীদের হাতে পাঁচজন শিক্ষকের হেনস্তা হওয়ার ঘটনা ঘটে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকালে দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আন্দোলনকারীরা। তবে বেলা ১১টা থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর আসতে থাকে।
ঢাকার বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় যান চলাচল বন্ধ ছিল দিনের বড় সময়জুড়ে। তাতে নগরের বড় অংশজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়েন চলতি পথের যাত্রীরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, বরিশাল, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। গাজীপুর, ময়মনসিংহে তারা রেললাইন অবরোধ করে রাখে। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। রাতের ঢাকায় দুটি বাসে আগুন দেওয়ার খবরও আতঙ্ক ছড়ায়।
আগের সপ্তাহজুড়ে ‘বাংলা ব্লকেডের’ অধীনে আন্দোলনকারীরা অবরোধের মত কর্মসূচি পালন করে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য ঘিরে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখালে কোটা বিরোধী সংস্কার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
পরদিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে ছাত্রলীগের। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয় আন্দোলনকারীদের অনেকে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেন প্রায় ৩০০ জন। রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলনকারীদের মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের স্থানে লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেলসহ কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ আর অবরোধে নামে। তাদের সঙ্গে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলসহ সরকারবিরোধী ও বামপন্থি কিছু ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যোগ দেয় বলে অভিযোগ ছাত্রলীগের।
আগে থেকে আন্দোলন প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়া ছাত্রলীগ মাঠে নামলে পরিস্থিতি গড়ায় সংঘাতে। বিভিন্ন জায়গায় লাঠিসোঁটা হাতে পুলিশের সঙ্গী হতে দেখা গেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকার সমর্থক রাজনৈতিক কর্মীদের।
বিভিন্ন স্থানে পুলিশসহ ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘাতে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে রাজধানীতে ঢাকা কলেজ ও সাইসল্যাব এলাকা; রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর ও মুরাদপুর এলাকা। কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাতীয় পার্টির অফিসে ভাঙচুর করা হয়। বগুড়ায় হামলা করা হয় আওয়ামী লীগ অফিসে।
রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নিহত হওয়ার জেরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে। উপাচার্য ভবনের সামনে রাখা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়। পরে র্যাব- ১৩ এর সদস্যরা এসে উপাচার্য ও ছয় শিক্ষককে উদ্ধার করে রংপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছে দেয়।
সংঘাতময় ঢাকা
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে রাজধানীর মিরপুর রোডে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের সামনে দুইজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে পুলিশ।
এদের একজন নিউমার্কেটের হকার শাহজাহান বলে শনাক্ত করেছেন তার স্বজনরা। শাহজাহান কী করে এই সংঘর্ষের মধ্যে এল তা এখনও জানা যায়নি। স্ত্রীকে নিয়ে শাহজাহান থাকতেন কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। বলাকা সিনেমার সামনে পাপোস বিক্রি করতেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের অদূরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এতে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুরের পর থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বিকাল ৪টার দিকে সংঘর্ষ ঢাকা কলেজ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
সে সময় ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় হেলমেট পরা এক ব্যক্তিকে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পাশেই লাঠি হাতে ছিলেন আরেক ব্যক্তি। আহত ওই ব্যক্তিই পরে হাসপাতালে মারা যান।
ঢাকা কলেজের এ ঘটনাস্থলের অদূরে নিহত শাহজাহানও মিরপুর সড়কে সিটি কলেজের সামনের সড়কে পড়ে ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া তার মাথায় গুরুতর জখমের তথ্য দেন।
এছাড়া ঢাকা কলেজ, সায়েন্স ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত ৬০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর বাইরে রাজধানীর চানখারপুর, মহাখালী, নতুনবাজারসহ কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে আন্দোলনকারীরা। যথারীতি পুলিশের সঙ্গে হেলমেট পরা, লোঠি-সোটা হাতে অনেক তরুণকে দেখা গেছে। তারা স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মী বলে জানাচ্ছেন, আন্দোলনকারীরা।
চানখারপুলে গুলিতে চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মহাখালীতে বিক্ষুব্ধরা সড়ক ও রেলপথ দুটোই অবরোধ করে রাখে। বিকালে পুলিশ তাদের হটিয়ে দিতে এলে সংঘাত বেঁধে যায়। আন্দোলনকারীরা মহাখালী পুলিশ বক্স ও সেখানে রাখা পুলিশের তিনটি মোটরাসইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়, স্থাপনা তছনছ করে। প্রায় দুই ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ।
পুলিশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর বিমানবন্দর সড়কের কাকলীতে, মহাখালীর আমতলিতে, নতুনবাজার, চানখারপুল, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, উত্তরাসহ অন্তত ২০টি জায়গায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। যার ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী।
মঙ্গলবারের সড়ক অবরোধ করেন মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে ইউনিফরম পরা স্কুল ছাত্রদেরও দেখা যায়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ইউনিফরম পরা শিক্ষার্থীদের পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা যায়।
সংঘাত ছড়াতে থাকলে পুলিশের সঙ্গে রাস্তায় নামে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও। বিকাল সোয়া ৬টার দিকে বিজিবির ৬টি গাড়ি নীলক্ষেতের দিক থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে যাওয়ার সময় ঢাকা কলেজের গেট পার হওয়ামাত্রই আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পড়ে।
এসময় সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিক থেকে আসা আন্দোলনকারীরা বিজিবির গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিলও ছোড়েন। আল আমীন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আন্দোলনকারীদের বৃষ্টির মতো ঢিলের মুখে বিজিবির গাড়ি পিছু হটে।
দফায় দফায় সংঘর্ষে চট্টগ্রামে প্রাণহানি
চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় সংগঠনের কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে তিনজনের প্রাণ গেছে।
নিহতদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম নামে একজন চট্টগ্রাম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তর সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী।
নিহত বাকি দুজনের মধ্যে ফয়সাল আহমদ শান্ত (২০) ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র। নিহত অপর ব্যক্তি ফারুক (৩২) রড মিস্ত্রি বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে এই তিনজনের মৃতদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল।
“তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বুলেট ইনজুরিতে। আরেকজনের শরীরে ফিজিকাল অ্যাসল্টের চিহ্ন ছিল।”
সংঘর্ষের মধ্যে অন্তত ৪০ জনকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এদিন দুপুরে ষোলশহর রেল স্টেশনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে ছিলেন সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীরা ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে মুরাদপুর মোড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন।
পরে দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সড়কে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়।
সংঘর্ষে রণক্ষেত্র রংপুর
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনায় পুলিশসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
নিহত আবু সাঈদ (২৫) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার বাবুনপুর গ্রামে। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনকারীদের একজন সমন্বয় ছিলেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ইউনুস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল ৪টার কিছু পর গুলিবিদ্ধ ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তার আগেই মৃত্যু হয়েছিল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশের খুব কাঁছে থেকে ছোঁড়া গুলিতে সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। ভিডিওতে সব দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা দুপুর ১টার দিকে রংপুর জেলা স্কুল মোড়ে থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়। লালবাগ খামার মোড়ে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।
ওই মিছিল নিয়ে তারা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে যান। তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। শিক্ষার্থীদের ঢিলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে।
এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে আন্দোলনকারীরাও পাল্টা ধাওয়া দেয়। বিকাল পর্যন্ত সেখানে সংঘর্ষ চলে।
শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর ছড়ানোর পর আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পসের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষে আগুন দেন। তারা উপাচার্যের বাসভবনে কয়েকজন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। উপাচার্য ভবনের সামনে কয়েকটি গাড়িতেও আগুন দেন।
রাবির হলে ছাত্রলীগের কক্ষ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল, মাদার বখস্ হল, জিয়া হল, মতিহার হল ও শাহ মখদুম হলের অন্তত ২০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে কক্ষগুলোতে থাকা জিনিসপত্র বাইরে বের করে এনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, “বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে মাঝে মধ্যে রুমাল কিংবা মাস্ক পড়ে ভাঙচুরসহ, অগ্নিকাণ্ড করতে দেখা যায়।”
এদিকে ক্যাম্পাসের বিশেষ করে ছেলেদের অধিকাংশ আবাসিক হল থেকে অনেক শিক্ষার্থীরাই চলে যাচ্ছেন। ফলে হলগুলোতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
তবে হলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম রেজা রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন শুরু করে তখন ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সমস্যা হয়। সেটা থেকেও ক্ষোভ থাকতে পারে।
আহত ১২ পুলিশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দায়িত্ব পালন করার সময় পুলিশের ১২জন সদস্য আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউজ পোর্টাল ডিএমপি নিউজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের হামলায় যে ১২ সদস্য আহত হয়েছেন তাদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলেন- বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনিসুর রহমান, মহাখালী পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই শাহ মিরাজ উদ্দিন, রূপনগর থানার এসআই আল-মামুন ও সাইফুল ইসলাম, পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্ট-পিওএম দক্ষিণ বিভাগের কনস্টেবল তানভীর, মো. মাহমুদুল ইসলাম, মাহিন ইসলাম নাসিম, পিওএম উত্তর বিভাগের কনস্টেবল মুক্তার ও মুরাদ, মহাখালী পুলিশ বক্সের কনস্টেবল মো. হাসান আলী ও রাশেদ এবং ট্রাফিক গুলশান বিভাগের কনস্টেবল মো. আব্দুল লতিফ।
পুলিশের পাশাপাশি ২৫ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার খবরও জানানো হয় পোর্টালে।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শাহবাগ, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, মহাখালী, মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা ও বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করে।
সরকারি সম্পদ ও নগরবাসীর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষা করতে গিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হামলায় ডিএমপির এই ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে ডিএমপি নিউজে দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন
সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হল ত্যাগের নির্দেশ
কোটা আন্দোলন: বুধবার গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল
রাবির হলে ছাত্রলীগের কক্ষে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর থমথমে ক্যাম্পাস
চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলন: আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রে হতাহত, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
ত্রিমুখী অবস্থানের মধ্যে ঢাবিতে কোটাবিরোধীদের কর্মসূচি স্থগিত
সংঘাত-মৃত্যু: দুর্ভোগের পর উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘরে ফেরা
রেলপথ অবরোধ, দূরযাত্রার ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগ
ঢাকার পথে পথে বিক্ষোভ, যাত্রী না পৌঁছায় ফ্লাইট ছাড়তে দেরি
বেরোবি উপাচার্যর বাসভবনে ভাঙচুর, ছাত্রলীগ সভাপতির গাড়ি-বাইকে আগুন
চট্টগ্রামে আন্দোলনে প্রাণহানি: শান্তর মা হাসপাতালে এলেও বলেননি কথা
কোটা: ‘ও ভাইও হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে’, সাঈদের বোনের আহাজারি
হোটেলে ভাত খেয়ে ফিরছিলেন কাজে, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ গেল ফারুকের
বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
সংঘাত-মৃত্যুর পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
আন্দোলনের মধ্যে নিহত: গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি বিএনপি-সমমনাদের